সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার কলারোয়ার চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আওয়ামী নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা বিএম নজরুল ইসলাম।  শুক্রবার (৮ এপ্রিল) জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বিএম নজরুল ইসলাম। নজরুল সাহেব নামেই যিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। রাজনীতির গণ্ডি পেরিয়ে তিনি ছিলেন দলমত নির্বিশেষে সর্বজনবিদিত ব্যক্তিত্ব। ছিলেন এ অঞ্চলের স্বচ্ছ ও সুস্থ ধারার রাজনীতির পুরোধা। আপমর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার এই সজ্জন মানুষটি বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা বিএম নজরুল ইসলাম ছিলেন সাতক্ষীরার কলারোয়ায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, তৎকালীন গোপীনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান সহসভাপতি এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। একইসঙ্গে বহু সামাজিক, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিল তার হাতের ছোঁয়া ও সম্পৃক্ততা।

শুক্রবার কলারোয়া পাইলট হাইস্কুল ফুটবল মাঠে জাতীয় পতাকায় মুড়িয়ে দেওয়া হয় বিএম নজরুল ইসলামের কফিন। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

সেখানে জানাজা পূর্ব আলোচনায় বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক এমপি একেএম ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, কলারোয়া থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ এমএ ফারুক, কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন, কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, কলারোয়া পৌর মেয়র প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান বুলবুল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তাফা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন মৃধা, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ও তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলিমুর রহমান ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল আলম মল্লিক, প্রয়াতের একমাত্র ছেলে বিএম রবিউল ইসলাম রিপন ও শ্যালক আব্দুর রহিম।

স্মরণকালের বৃহৎ এ জানাজায় নানান বয়সী ও পেশার অসংখ্য মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।

জানাজা নামাজে ইমামতি করেন কলারোয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল বারী। এর আগে প্রয়াতের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক নেতারা। পরে কলারোয়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে প্রয়াতের বাড়ির সামনে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এদিন জুমা নামাজের পর বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদে মরহুমের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। সদ্য প্রয়াত বিএম নজরুল ইসলাম ছিলেন ওই মসজিদের সভাপতি।

এদিকে বিএম নজরুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা, সামাজিক, ধর্মীয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্যরা।  

তারা বিএম নজরুল ইসলামের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের মৃত্যুতে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নয়, কলারোয়াবাসী একজন অভিভাবক হারালো। যেটি সব স্তরের জনগণের জন্য বেদনাদায়ক। মহান আল্লাহ্ পাক তাকে বেহেশত দান করুন।

বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) পবিত্র মাহে রমজানের ৫ম দিন দুপুর ১২টার দিকে রাজধানী ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিএম নজরুল ইসলাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, চার কন্যা ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২২
আরএ