ঢাকা: বিদ্যুৎ খাতে সরকার যে অনিয়ম করেছে তার ফল জাতিকে বহু দিন বহন করতে হবে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
তিনি বলেন, অলরেডি বিদ্যুতের দাম ২ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১৪ টাকা হয়ে গেছে।
সোমবার (১৮ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ইকবাল হাসান বলেন, আমার কথা হলো যেটা করার দরকার সেটা সরকার করেনি। বিদ্যুতের উৎপাদনটা সরকারের হাতে রাখা প্রয়োজন ছিল। বিদ্যুৎ যদি সরকার উৎপাদন করতো তাহলে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হতো না। আমার পাওয়ার স্টেশন আমি বন্ধ রাখছি আমাকে আর পেমেন্ট করতে হবে না। সেখানে আপনি এদের (বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র) সঙ্গে চুক্তি করেছেন, আপনি বিদ্যুৎ নিতে পারছেন না কিন্তু আপনি তাদের টাকা দিচ্ছেন। টাকাটা কার, টাকাটা আমার-আপনার পকেট থেকে যাচ্ছে। তাহলে কি দাঁড়ালো। অন্ধকারে থাকলাম আবার আমারা টাকাও পেমেন্ট করলাম। যেটা অতীতে দিতে হয়নি।
তিনি বলেন, সরকার দুর্নীতিপুষ্ট যে প্রকল্পগুলো করেছে সেটা করে আনন্দ ফুর্তি করে জনগণকে দেখানোর চেষ্টা করেছে। সরকারের আসলে প্রচারই প্রসার। সরকার প্রচার করেছে বেশি। ফলে আমরা এই দুর্ভোগে পড়েছি। সরকারি কোষাগার থেকে টাকা যাবে, তারা পাওয়ার স্টেশন না চালিয়ে টাকা নিয়ে চলে যাবে তাদের পাওয়ার স্টেশনের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ না চললে তো ক্ষতি হয় না। শতভাগ লাভ তাদের। আর জনগণের শতভাগ ক্ষতি।
ইকবাল হাসান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠিত পাওয়ার সিস্টেম প্ল্যান যেটা ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন সরকারের হাতে থাকবে ৬৪ শতাংশ। আর ৩৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে বেসরকারি খাতে। এই সরকার তরিঘড়ি করে সব প্ল্যান্টগুলো প্রাইভেটে দিয়ে দিলো। রেন্টাল পাওয়ার নিয়ে এসে এটাকে শর্টটাম না করে এটাকেও বেস প্ল্যান্ট বানিয়ে ফেললো। আমি মনে করি যে এটা একটা খারাপ পরিকল্পনা ছিল। দুরভিসন্ধিমূলক এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল। এর ফলে তারা এই বিদ্যুতের যে আইন পাবলিক প্রক্রিউরমেন্টের যে আইন সেগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়ে পার্লামেন্টে আইন পাস করে যাকে ইচ্ছা তাকে পাওয়ার প্ল্যাট দিয়ে দিলো। কিছু কিছু পাওয়ার স্টেশনে স্টেট গ্যারান্টি দিলো। তারপরে আমরা দেখেছি পদ্মা সেতুর যেমন নাচ-গান হলো ফুর্তি হলো তেমনি শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি বলে, হাতিরঝিলে আলো দেখেছি, নাচতে দেখেছি। আজকে এসে তারা বলছে যে বিদ্যুৎ দিতে পারছি না। ইউক্রেন হয়ে গেছে তাদের কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা।
তিনি বলেন, আমি বারে বারে একটা কথা বলেছি যে বিদ্যুৎ এমন একটা খাত বিদ্যুৎকে গোডাউনে রাখা যায় না। উৎপাদন হবে খরচ হয়ে যাবে। আবার জনগণকে দিতে হবে। এটাতো সেবামূলক খাত। কিন্তু আমার কমার্শিয়ালি চালাতে হবে। না চালালে খরচ উঠবে না। সেজন্য সরকারের হাতে রাখতে হয়। সরকার অনেক জিনিসের দাম কমায়ে রাখতে পারে। কিন্তু এখানে প্রাইভেট সেক্টরে দিয়ে দিয়েছে, টোটালি কমার্শিয়ালি চলে গেছে। এর ফলে সরকার যে বিদ্যুৎ কম দামে দিতে পারতো সেটা পারেনি। সরকারের উচিত ছিল ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন প্রাইভেটকে দিয়ে দেওয়া। এগুলো না করে উল্টোটা করেছে। যার ফল আমরা ভোগ করছি। পুরো বিষয়টিই অস্বচ্ছভাবে করা হয়েছে। জনগণ জানে না কাকে কত টাকা দিচ্ছে। কিন্তু জনগণকে পেমেন্ট করতে হচ্ছে।
রিজার্ভ নিয়ে সরকার এতো ঢোল পেটালো এখন রিজার্ভ কোথায় গেলো প্রশ্ন করে ইকবাল হাসান বলেন, ৪৩ বিলিয়ন থেকে ৩৮ বিলিয়নে কেন নামলো। এটাতো সরকারের হিসাব। আসল হিসাব যদি করি ৩৮ আছে কিনা তাও সন্দেহ। তার মানে ৫ শতাংশ আমদানি খরচও নেই। আজকে সত্যিকারেই দেশ একটা ইকোনোমিক ক্রাইসিসের মধ্যে পড়ে গেছে। এটার জন্য আমি পুরোপুরি সরকারকে দায়ী করবো।
মসজিদের এসি বন্ধ রাখার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে টুকু বলেন, মসজিদের এসি শুক্রবার আর তারাবী নামাজের সময় চলে। সেটা বন্ধ রাখলে আর কতটা সাশ্রয় হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন ও শায়রুল কবির খান।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
এমএইচ/আরআইএস