ঢাকা: সরকার পরির্তন না হলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে কোনো সংলাপ নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
বুধবার (২০ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিএনপির আজকে সংলাপ ছিলো। আমরা সংলাপে যাই নাই। কারণ আমরা নির্বাচন কমিশন বুঝি না, আমরা নির্বাচন কমিশন চিনি না্, আমরা নির্বাচন কমিশন মানি না। আমরা চাই, এই সরকার থাকবে না, এই সংসদ থাকবে না। এই সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন এক সরকারের অধিনে নির্বাচন কমিশন হবে, সেই নির্বাচনে আমরা যাবো। সেই কমিশনের সংলাপে আমরা যাবো।
বিএনপিকে বার বার ডাকবো প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের এরকম মন্তব্যের জবাবে মির্জা আব্বাস বলেন, আপনাকে (সিইসি) সাধুবাদ জানাই। বিএনপিকে বার বার ডাকবেন এই কারণে যে, বিএনপিকে ছাড়া আপনি নির্বাচন করতে পারবেন না।
আপনি সিইসি তো দূরের কথা, বাংলাদেশের কারো সাধ্য নাই বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করার। যারা নির্বাচনে যাওয়ার চেষ্টা করবে ভেতরে কিংবা বাইরে, দেশে কিংবা বিদেশে তাদের কোথাও ছাড় দেওয়া হবে না। এই ব্যর্থ, ঠগ, দুবৃর্ত্ত সরকারকে আমরা কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেবো না।
সরকারের প্রতি আহ্বান রেখে তিনি বলেন, যথেষ্ট হয়েছে। এখন বাংলাদেশের মানুষকে আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ কইরা দেন। আপনারা ক্ষমতায় ছাড়েন, নিরপেক্ষ সরকার দেন। তারপরে যদি ক্ষমতায় আসেন, আপনাদেরকে মাথায় তুলে নাচব কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু বিনা নির্বাচনে ক্ষমতায় থাকবেন- এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনোই মানবে না।
বিএনপি ছাড়া নির্বাচন অংশগ্রহনমূলক হবে না- প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্যের জবাবও দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য। তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে না আসলে কিছু আসে যায় না। সিইসি বলেছেন, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন গ্রহনযোগ্যতা পাবে না…। উনি একেবারে সঠিক কথা বলেছেন। আমি উনাকে (সিইসি) অনুরোধ জানাবো আমাদের এই মিটিংয়ে এসে এই কথা বলেন। বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন হবে- দেশের মানুষ বুঝে, আওয়ামী লীগ বুঝে, সিএইসি বুঝে। কিন্তু এই সরকার বুঝে না। কারণ তারা জানে নির্বাচনের কোনো প্রয়োজন নাই, নির্বাচন ছাড়াই তারা আবারো ক্ষমতায় আসবে। এই সরকারকে আর এই দেশের মানুষ চায় না।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের এক নেতার কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এতে দক্ষিণের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রাখা আওয়ামী লীগের খাইছলত। এর আগে কি একজন ছিলো টাকলা মুরাদ (সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান) বলেছিলো। তারপর ওদের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন ভাবে আমার নেত্রী, আমার নেতার সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ কথা বলছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে কুরুচিপূর্ণ কথা বলেছে যদি ক্ষমা না চায় দেশের মানুষ যেখানে পাবে আপনাকে শায়েস্তা করে দেবে।
‘আওয়ামী লীগের এটা স্বভাবজাত কৌশল অর্থাত যখন বাংলাদেশের মানুষ বিদ্যুত পাচ্ছে না, পানি পাচ্ছে না, দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি, বন্যায় দেশ ডুবে যাচ্ছে ওই সময়ে জনগনের দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরানো জন্য এসব কুরুচিপূর্ণ কথা বলছে। ‘ যোগ করেন মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে হত্যা ষড়যন্ত্র অনেক দিন যাবত চলছে। এটা আজকে প্রমাণ হয়ে গেছে। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পদ্মা সেতু থেকে দেশনেত্রীকে টুস করে ফেলে দেবেন। এটা কি মিন করে?
বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে প্রসঙ্গ টেনে মির্জা আব্বাস বলেন, আপনারা বলেছিলেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুত চলে গেছে এবং বিদ্যুতের কোনো অভাব নাই। এই বিদ্যুতের জন্যে কুইক রেন্টাল, রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট করেছেন। এখন বিদ্যুত বন্ধ থাকবে, লোডশেডিং হবে কিন্তু বিল ওই প্ল্যান্টের মালিকরা ঠিকই পাবে।
মসজিদ ও উপাসনালয়ে এসি বন্ধ থাকার নির্দেশনার উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, বড় বড় সরকারি অফিসে এসি বন্ধ থাকবে না। ওইখানে এসি কেনো চলবে? এভাবে আজ শুধু লোডশেডিং নয়। তারা পানির মূল্য বৃদ্ধি করেছে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে, করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই যে পদ্মা সেতু হলো ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ৩৩ হাজার কোটি টাকায় শেষ করেছে। এখন মেট্রোরেল করছে, উন্নয়নের ট্যাবলেট এই মেট্রোরেল। ২১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ৩৩ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে পৌঁছেছে। আমি প্রশ্ন করতে চাই, পদ্মায় না হয় বুঝলাম খরস্রোতা নদীতে পিলারের নিচে মাটি সরে গিয়েছিলো। ঢাকা শহরে কি মাটি সরে যাচ্ছে নাকি? আবার মেট্রোরেলের খরচা বেড়ে গেলো?
মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, মহানগর দক্ষিণের ইশরাক হোসেন, ইউনুস মৃধা, মোশাররফ হোসেন খোকন, লিটন মাহমুদ, যুবদলের আবদুল মোনায়েম মুন্না প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২২
এমএইচ/এসএ