ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি'

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২২
‘শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি' কথা বলছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: ২০১৮ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সঙ্গে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষা করেননি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে ওভারসিজ করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ওকাব) ‘মিট দ্য ওকাব’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এ কথা জানান।

আপনাদের দাবি পূরণ না হলে কী নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৮ সালে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরে নির্বাচনে গিয়েছিলাম। সেই আলোচনায় উনি (প্রধানমন্ত্রী) প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন যে, আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে আপনাদের কথা দিচ্ছি নির্বাচনটি সুষ্ঠু হবে। সেই দিন থেকে কেউ অ্যারেস্ট হবে না ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কোনোভাবে বাধা দেওয়া হবে না। আমরা গণতন্ত্রের স্বার্থেই সব দল একমত হয়ে সেই নির্বাচনে গিয়েছিলাম।

কিন্তু শেখ হাসিনা তার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। তিনি কয়েকদিন পর থেকেই ধড়পাকড় শুরু করেছিলেন এবং যতরকমের নির্যাতন-নিপীড়ন করা দরকার বিরোধীদলের ওপর তিনি তাই করেছিলেন। আমাদের ১৯ প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কোর্টের রায় পর্যন্ত প্রভাবিত করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করা হয়েছিল। আমরা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে বলি এখানে জহিরউদ্দিন স্বপন ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি আছেন, তিনি ঘর থেকে বেরুতে পারেননি ক্যাম্পেইন করার জন্য। আমার বাসার সামনে ঠাকুরগাঁওয়ে দুই পাশে দুইটা মাইক্রোবাস নিয়ে ডিবি-নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন অপেক্ষা করেছে। যেই বাসায় ঢুকেছেন তাকে তুলে নিয়েছেন। আর যে বাসা থেকে বেরুচ্ছিলেন তাকেও তুলছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, র‌্যাব, সেনাবাহিনী সমবেত প্রচেষ্টায় তারা বিরোধীদলকে সেদিন নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়নি। এর ফলে সেই নির্বাচনে কোনো ফলাফল হয়নি।

আন্দোলনে জামায়াত ইসলামীর অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলছি। একটা জাতীয় ঐক্য তৈরি করার জন্য। সেখানে এখন পর্যন্ত যতগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছি একটা বিষয় আমরা সবাই একমত হয়েছি যে, আমরা যুগপৎ আন্দোলনে যাবো। সুতরাং এখানে এ বিষয়ে কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই।

সরকারের পরিবর্তে বিএনপি বিকল্প কিনা প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, অবশ্যই। বিএনপি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল এবং বিএনপি তিনবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার পরিচালনা করেছে। তারও আগে বিএনপি দুইবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। বিএনপি হচ্ছে একমাত্র বিকল্প যা এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।

আগামী নির্বাচনে বিএনপি গেলে তার নেতা কে হবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই দলের নেতৃত্ব তো নির্ধারিত হয়ে আছে। দেশনেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া-তিনি আমাদের নেত্রী, তার অবর্তমানে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের নেতা। সুতরাং এখানে কোনো অস্পষ্টতা নেই।

যুগপৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে- ১৯৯০ সালেও যে আন্দোলন হয়েছিল ৫ দল, ৭ দল ও ৮ দল। সেখানে কিন্তু যুগপৎ আন্দোলন হয়েছিল। সেই মডেলে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন শুরু করবে। আন্দোলনের ধারাই ঠিক হবে আন্দোলন কোন দিকে ‍যাবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সবটাই সম্ভব যদি সরকার চায়। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি যে, আমরা নির্বাচনে তখনই যাবো যদি একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন নেই। সংবিধান বহুবার পরিবর্তন হয়েছে নির্বাচনের জন্য। ১৯৯০ সালে হয়েছে, পরবর্তিকালে আওয়ামী লীগ তো সংবিধানের বহু অংশ পরিবর্তন করে দিয়েছে। সুতরাং চাইলে অবশ্যই হবে। ডকট্রাইন অব নেসেসিটি বলে একটা কথা আছে। সেই প্রয়োজনে জনগণের স্বার্থে..। এখন এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যে জনগণের স্বার্থে প্রয়োজন হলে সংবিধান পরিবর্তন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্দলীয় সরকারের রূপরেখার প্রশ্ন তখনই আসবে যখন সরকার আমাদের সঙ্গে নিরপেক্ষ সরকার গঠনের বিষয়ে একমত হবেন, তখনই আসবে। তার আগে না। সরকার যদি বলে যে, নির্বাচনকালীন সরকার, নিরপেক্ষ সরকার, সহায়ক সরকার গঠন করা হবে-আমরা একমত তখন কিভাবে হবে সেটা নিয়ে আমরা চিন্তা করে দেখবো।

তাহলে কী আলোচনা সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আলোচনার পথ কোথায়? সরকার যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কথা বলতে চায় তখন আমরা সেটা দেখবো। তার আগে তো না। আগে তাদের (সরকর) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে একমত হতে হবে। তার আগে তো নয়, অন্য বিষয়ে তো নয়।

ফখরুল বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের জেলখাটার সংখ্যা কোনো মতেই প্রায় ৩০ লাখের কম নয়। যখনই মামলা হয়েছে সবাইকে জেলে যেতে হয়, জেলে গিয়ে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসতে হয়। গত পরশু আমার বিরুদ্ধে আরেকটা মামলা হয়েছে। অর্থাৎ আমার ৮৬টা মামলার সঙ্গে আরেকটা যুক্ত হয়েছে। এই হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা। দয়া করে একটু আমাদের অফিসে যাবেন দেখবেন বস্তায় বস্তায় এফআইআরের কপি আছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সব গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে একটাই প্রত্যাশা করি যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য সবাই যার যার জায়গা থেকে তাদের ভূমিকা রাখবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা স্টেটমেন্ট দিয়েছি। আমরা মনে করি যে, সব দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার অধিকার আছে। ইউক্রেন একটা স্বাধীন দেশ। সেখানে কোনো ফরেন ইনভেশন আমরা কখনোই সমর্থন করিনি, আমরা করবো না। আমরা প্রত্যেকটি দেশ ‍যাতে স্বাধীনভাবে থাকতে পারে সেটাতে বিশ্বাস করি। আমরা রাশিয়ার ইনভেশনকে অবশ্যই নিন্দা জানিয়েছি।

রাশিয়া-ইউক্রেনে খাদ্যপণ্য বর্হিবিশ্বে পাঠানোর ‍সমঝোতার উদ্যোগকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমরা মনে করি যে, উভয় দেশেরই তাদের যে দায়িত্ববোধ আছে বিশ্বমানবতার প্রতি-এটা তারই পরিচয় বহন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কয়েকটি বিষয় মিল দেখতে পারছি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যেটা হচ্ছে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে। যার প্রভাব ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পড়েছে। গ্যাসের দাম বেড়েছে। আমরা পুরোপুরি আমদানি নির্ভর। এই সরকার ১৫ বছর ক্ষমতায় আছে তারা নিজস্ব গ্যাস উত্তোলনের পদক্ষেপ নেয়নি। আমদানি করা গ্যাসের দাম বেড়ে যাচ্ছে, ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে এখন একটা বড় রকমের ক্রাইসিস শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। সার কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, পোশাক কারাখানাগুলো অনেকে বিপদে পড়েছে গ্যাস না পাওয়ার কারণে। ফলে প্রতিযোগিতার মধ্যে বেকায়দার মধ্যে পড়েছে। অন্যান্য শিল্পকারখানাগুলো জ্বালানি সংকটে পড়েছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বৈদেশিক মুজদের পরিমাণ নিচের দিকে যাচ্ছে, রেমিট্যান্সে কমে যাচ্ছে। শ্রীলংকার মূল ক্রাইসিস ছিলে রিজার্ভ শূন্য কোঠায় গেছে। আজকে এই সরকার এমনভাবে প্রতারণা করে যে, রিজার্ভ ৪২ বিলিয়নের কথা বলে। এর মধ্যে সাড়ে ৭ বিলিয়ন এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের নামে তারা এদেশের যারা রপ্তানি করে তাদেরকে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দিয়েছে। এই টাকা ফেরত আসার সম্ভাবনা নেই। রপ্তানি কমে আসছে, উৎপাদনের ব্যয় বাড়ছে। ফলে ওই ক্রাইসিসগুলো এখনে গভীর হচ্ছে। সেজন্য আমরা আশঙ্কা করছি যে এখানে শ্রীলংকার মতো একটা অবস্থা তৈরি হতে পারে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে।

তিনি বলেন, আমাদের সাজেশন একটাই- রিজাইন অ্যান্ড গিভ ইলেকশন। নির্বাচন দাও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সেই নির্বাচিত সরকারই সমস্যার সমাধান করতে পারে। এই সরকার যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তারা দুর্নীতির কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তারা কোনোদিনই এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।

মিট দ্য প্রেসের অনুষ্ঠানে ওকাবের আহ্বায়ক বিবিসির সংবাদদাতা কাদির কল্লোল ও সদস্য সচিব জার্মান নিউজ এজেন্সি-ডিপিএর সংবাদদাতা নজরুল ইসলাম মিঠুর সঞ্চালনায় এতে ওকাবের জ্যেষ্ঠ সদস্য ফরিদ আহমেদ মূল মঞ্চে ছিলেন।

মিট দ্য ওকাব অনুষ্ঠানে বিএনপির মিডিয়া সেলের জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকায় বিদেশ সংবাদদাতাদের সংগঠন ওকাবের অনুষ্ঠানে বিদেশি সংস্থা ও পত্রিকার সংবাদদাতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিএনপি মহাসচিব। এর আগে, মহাসচিব দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের অপশাসন, নির্বাচনের বিষয়ে দলের অবস্থানসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন।

আরও পড়ুন>>রাজপথের আন্দোলনেই সরকার পরিবর্তন হবে: ফখরুল

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২২
এমএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।