ঢাকা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নড়াইলে হামলার ঘটনার জন্য সরকারই দায়ী। আমাদের তদন্ত প্রতিবেদনে তা পরিষ্কার করে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই যারা সংখ্যায় কম সেই সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন-হামলা-লুটপাট-ভাঙচুরের ঘটনাগুলো বেড়েছে এবং তাদের সম্পত্তির বেশির ভাগ মালিক কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।
নড়াইলের ঘটনা সরেজমিন পরিদর্শন করে আসা দলীয় তদন্ত টিমের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা মনে করি যে, পরিকল্পিতভাবে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে গৃহ থেকে, জমি থেকে উচ্ছেদ করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সম্পদ দখল করা তাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে আছে।
নড়াইলের ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুঃখজনক হচ্ছে যে, আজ পর্যন্ত এই ঘটনাগুলোর সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমরা দেখতে পাইনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মহানবীকে কটূক্তি করে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই সকালে নড়াইলের দিঘলিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর-মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করে বিএনপি। ২৩ জুলাই তদন্ত টিম নড়াইলের দিঘলিয়ার সাহাপাড়া গ্রামে গিয়ে সরজমিন তদন্ত করে।
তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ১৫ তারিখে হঠাৎ মাগরিবের নামাজের পরে প্রায় দুই-তিনশ উচ্ছৃঙ্খল লোকজন সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়ে সাহাপাড়াতে প্রবেশ করে। সেখানে ১০/১২টি বাড়িঘর ভেঙে তছনছ করে, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা হয়, আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। মন্দিরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, মন্দিরের প্রতিমা ভাঙে। তার অদূরেই পুলিশ দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। পুলিশের নাকের ঠগার ওপরে এই ঘটনাটা ঘটলো। ওই গ্রামের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান। এই ঘটনায় বাড়িঘর ভাঙচুর হচ্ছে, দরজা ভেঙে ফেলছে, বাড়িতে আগুন দিয়েছে অথচ এরা (আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান) নির্বিকার। কারণ যে চেয়ারম্যান হয়েছে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। আর পাশের গ্রামের আওয়ামী লীগের যে প্রার্থী তিনি পরাজিত হন বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে। এখন দ্বন্দ্বটা শুরু হয় বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী পাস করলো কীভাবে? দিঘলিয়া গ্রামের ৭০% ভোট হিন্দু ভোট। হিন্দুরা ভোট দিয়েছে সেই প্রার্থীকে। কেনো দিলো ভোট? এখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত।
বর্তমানে নড়াইলের দিঘলিয়া গ্রামে আতঙ্ক বিরাজ করছে উল্লেখ করে নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, এখানে ’৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে এই অঞ্চলটাই ছিল যশোর-নড়াইল-বগুড়া মুক্তাঞ্চল। ওই সময়েও এখানে এরকম ঘটনা ঘটেনি। সেই গ্রামের ওপরে এরকম নির্মমতা সেখানকার লোকজন মর্মবেদনায় ভুগছেন। আমরা পার্টির তরফ থেকে সেখানে কিছু সাহায্য দেওয়ার প্রস্তাব করলে তারা (ক্ষতিগ্রস্তরা) বলেন, আমরা কোনো সাহায্য চাই না। আমাদের অনেকে সাহায্য দিতে এসেছে, আমরা সেই টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণটা হচ্ছে যে, সাহায্য দিয়ে হয়তো আমাদের ঘরটা মেরামত হতে পারে কিন্তু হৃদয়ে, মনে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, সেই ক্ষত মুছে যাবে কীভাবে? সেখানে এখন ভয়াবহ আতঙ্ক, শশ্মানের আতঙ্ক বিরাজ করছে। মানে একাত্তর সালে যুদ্ধের সময়ে যেরকম আতঙ্ক বিরাজ করেছে এখন সেরকম আতঙ্ক বিরাজ করছে। তদন্ত প্রতিবেদনে ২২ জন ক্ষতিগ্রস্তের বাড়ি-ঘর, দোকান-পাটের তালিকা দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে দিঘলিয়া রাধা মন্দির, আভরাবাগড়ি সর্বজনীন দুর্গা মন্দির, একাবাড়ি কালি মন্দির, দিঘলিয়া পালপাড়া দুর্গা মন্দির, পালপাড়া গোবিন্দ মন্দির, স্বপন সাহার বাড়ির শিব মন্দির, শশ্মান কালী মন্দির, ঋষিপাড়া চান্দি মন্দির, আখড়া বাড়ি নন্দ মাস্টারবাড়ি দুর্গা মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নড়াইলের ঘটনার তদন্ত টিমের সদস্য অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, অমলেন্দু দাস অপু ও অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২২
এমএইচ/এমজেএফ