ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকার মিথ্যাচার করছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
‘মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকার মিথ্যাচার করছে’ ফাইল ছবি

ঢাকা: বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকার মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ করেছেন নতুন রাজনৈতিক জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চের’ নেতারা। সারা দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ-বিক্ষোভের ওপর দমন-পীড়ন, হামলা-মামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানা তারা।

রোববার (১৪ আগস্ট) গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ে দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে গণতন্ত্র মঞ্চের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রী একদিকে মুখে বলছেন, বিরোধী দলের প্রতিবাদ বিক্ষোভে কোনো হামলা কিংবা গ্রেফতার করা হবে না অথচ বাস্তবে জনগণের করের পয়সায় পরিচালিত রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে গুলি করে হত্যা, সরকারি ছাত্র সংগঠনের নামধারী গুন্ডা বাহিনীর কুপিয়ে হত্যা, হামলা, হুমকি বেপরোয়াভাবে চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভোলায় পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের ২ জন নেতাকে গুলি করে হত্যা, নাটোরে যুব অধিকার পরিষদের একজন নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, চট্রগ্রামে ও ঢাকায় গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মীদের হুমকি, ঢাকার শাহবাগে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহের মিছিলে পুলিশি হামলা এবং ছাত্রদের বিরুদ্ধেই উল্টো মামলা, লক্ষীপুরে গণ অধিকার পরিষদের সমাবেশে হামলা দেশে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অধিকারের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার তার জবাবদিহিতাহীন ও কর্তৃত্ববাদী শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য বিরোধী মত প্রকাশের পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে শুধু ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো গণবিরোধী আইন প্রণয়নই করেনি, প্রতিদিন নানা অজুহাতে এই আইনকে হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সবচেয়ে নারকীয় দিক হলো, সমাজে ভয় এবং স্থায়ী আতঙ্ক তৈরি করতে সরকার দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ভিন্ন মতের মানুষদের তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করছে, ক্রসফায়ারের নামে খুন করছে এবং নানান গল্প তৈরি করে অস্বীকার করছে। জুলুমের চূড়ান্ত হিসাবে গুম-খুন হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের অসহায় সদস্যদের মুখ খুলতে পর্যন্ত বাধা দিচ্ছে নানা হুমকির মাধ্যমে, লোক দেখানো তদন্তকারীদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিতে চাপ দিচ্ছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, বাংলাদেশ একদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সদস্য পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী এবং গুম বিরোধী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী অথচ ক্রমাগতভাবে মানবাধিকার পরিপন্থী নানা অপতৎপরতার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে চলেছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তদন্ত রিপোর্ট এবং নিজেদের সংগৃহীত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইন-শৃক্সক্ষলা বাহিনী র‌্যাব ও পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে সরকার কিছুটা নিয়ন্ত্রিত আচরণ করতে বাধ্য হয়, কিন্তু এখন পর্যন্ত এইসব ঘটনার স্বাধীন ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত কোনো তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কোনো জবাবদিহিতার আওতায়ও আনেনি।

অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি এবং সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে দেশে শাসনব্যবস্থা বদলানোর সংগ্রাম গড়ে তুলতে নেতৃবৃন্দ জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

সভায় বক্তব্য রাখেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নূরুল হক নূর, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. জাহেদুর রহমান।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, জেএসডির কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদউদ্দীন মাহমুদ স্বপন, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক রাশেদ খান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা হাসিবুদ্দিন হোসেন, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সদস্য সাকিব আনোয়ার।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
পিআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।