ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্লান্টের বর্জ্যের কারণে মৎস্যসম্পদ হুমকির মুখে পড়েছে। হালদা নদীর পাশে স্থাপিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নদীতে বর্জ্য ফেলছে বলে অভিযোগ উঠেছে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে।
এই পাওয়ার প্লান্টকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত বলেও মনে করে কমিটি। মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও সুপারিশ করেছে কমিটি।
মঙ্গলবার সংসদ ভবনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩০তম বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
কমিটির সভাপতি এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কমিটির সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, মো. মোসলেম উদ্দিন, মো. জিল্লুল হাকিম, মীর শওকত আলী বাদশা, মো. মকবুল হোসেন, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ ও নুর আফরোজ আলী বৈঠকে অংশ নেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উজ্জ্বল বিকাশ দত্তসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
কমিটির সভাপতি এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হালদা নদীতে প্রতিনিয়ত বর্জ্য ফেলছে। এর ফলে মা মাছসহ অন্যান্য মাছের বসবাস উপযোগী পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ’
নিজান বলেন, ‘নদীতে বর্জ্য ফেলে মাছের বসবাসের পরিবেশ নষ্ট করবে এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এ কাজ যে বা যারা করছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। ’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী কমিটির সঙ্গে একমত বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ ১০০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন এ প্লান্টটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি অর্থায়নে চীনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গুয়াং ডং কোম্পানি ৯০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টটি তৈরি করে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, গত ৬ মার্চ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে হালদা নদীর বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনার জন্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয় সংসদীয় কমিটি। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সময় মৎস্যও ও প্রাণিসম্পদ সচিব এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্যরে কথা তুলে ধরেন।
হালদা নদী মৎস্য প্রজননক্ষেত্র পুনরুদ্ধার প্রকল্পের পরিচালক প্রভাতী দেবী চট্টগ্রাম থেকে টেলিফোনে বাংলানিউজকে বলেন, ‘ফার্নেস অয়েল দিয়ে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিচালনা করা হচ্ছে। এর বর্জ্য নদীতে পড়ে রেনু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ’
বৈঠকে মাছ চাষে সরকারের অনুমোদনহীন সকল প্রকার ড্রাগস এবং কেমিক্যালস ব্যবহার বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
এদিকে বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং ভবিষ্যতে করণীয় শীর্ষক গণশুনানির ওপর আলোচনা হয়।
চলতি মাসের ৯ তারিখ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকার মৎস্যজীবী, জেলে ও পশু পালনের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে গণশুনানির আয়োজন করে সংসদীয় কমিটি।
কক্সবাজারের খুরুশকুল ইউনিয়ন, কুতুবদিয়া ও টেকনাফের শাহপরী দ্বীপে কমিটি তিনটি গনশুনানির আয়োজন করে।
বৈঠকের পরে সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এ গণশুনানির বিষটি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন কমিটির সভাপতি। মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে গণশুনানির উল্লেখযোগ্য অংশ সাংবাদিকদের দেখানো হয়।
কমিটির সভাপতি এ বিষয়ে বলেন, ‘এবারই প্রথম কোনো সংসদীয় কমিটি প্রথমবারের মতো গণশুনানির আয়োজন করলো। ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ায় এ ধরনের আয়োজন করা হলেও বাংলাদেশে এবারই প্রথম। ’
তিনি জানান, প্রায় ৬শ’ মানুষের উপস্থিতিতে সংসদীয় কমিটি ৫০ জন জেলে, মৎস্যজীবী ও পশুপালনের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটির আগামী বৈঠকে সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, কমিটির এ গণশুনানি আয়োজনে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দিয়েছে সেস্ট ইউনির্ভাসিটি অব নিউইয়র্ক ও এশিয়া ফাউন্ডেশন।
গণশুনানিতে প্রান্তিক পর্যায়ের জেলেরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাদের ওপর প্রভাব ফেলছে এমন বিষয়গুলো কমিটির সামনে তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ সময় : ১৭২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১২
এসএইচ/সম্পাদনা: আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর; আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর