ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

ভারত থেকে পাইপলাইনে তেল আসছে শনিবার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৩
ভারত থেকে পাইপলাইনে তেল আসছে শনিবার

নীলফামারী: বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন প্রকল্পের অধীনে ডিজেলের স্টোরেজ ট্যাঙ্ক নির্মাণকাজ শেষ না হলেও আগামীকাল শনিবার (১৮ মার্চ) দিনাজপুরের পার্বতীপুরে স্থাপিত পাইপলাইনের রিসিভ টার্মিনালের জ্বালানি তেলে আসা শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যৌথভাবে ভার্চ্যুয়ালি এ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

এই পাইপলাইন প্রকল্পের  পরিচালক (পিডি) টিপু সুলতান বলেন, শনিবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে রিসিভ পাইপলাইন টার্মিনালের প্যান্ডেলে স্থাপিত টিভি পর্দায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিপিসির দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি, পার্বতীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক, পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন, পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ ইসমাঈল, পার্বতীপুর রেলহেড অয়েল ডিপো ইনচার্জ এমরানুল হাসান ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার কাজী মো. রবিউল আলম উপস্থিত থাকবেন।

এর আগে বিকেল ৪টায় পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়নে এ তেল আসার উদ্বোধন উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ভারতের আসাম রাজ্যের নুমালিগড় রিফাইনারির শিলিগুড়ি মাকেটিং টার্মিনাল থেকে সীমান্তের বর্ডার অতিক্রম করে বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ঢুকে পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুর হয়ে পার্বতীপুর ডিপোতে সংযুক্ত হয়েছে পাইপলাইনটি। এর আগে ১০ মার্চ প্রকল্প উদ্বোধনের রিসিভ টার্মিনাল পরিদর্শন করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. খায়ইরুজ্জামান মজুমদার, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জরেন্দ্র নাথ ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি)চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ।

শিলিগুড়ির নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানির জন্য বিপিসির পার্বতীপুরের রিসিভ টার্মিনালটি এখন প্রস্তুত।

প্রধানমন্ত্রী  নিজ দপ্তর থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন এ পাইপলাইন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) টিপু সুলতান ও পার্বতীপুরের ইউএনও মুহাম্মদ ঈসমাইল। পাইপলাইনের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অংশে ১২৬ কিলোমিটার দূরত্বে প্রতি ৩০ কিলোমিটারে ৫টি এসভি স্টেশন (সেকশনালইজিং ভালভ) স্থাপন করা হয়েছে।

উত্তরের ১৬ জেলায় নিরবিচ্ছন্নভাবে সারা বছর ডিজেল সরবরাহ রাখতে এই ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন ভূমিকা রাখবে। আগে খুলনা ও চট্টগ্রাম থেকে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলে তেল আসতে সময় আগতো ৬-৭দিন। সাশ্রয়ী উপায়ে দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি সরবরাহে এটি একটি মাইল ফলক হবে বলে মন্তব্য এলাকার লোকজনের। পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা ডিজেল সংরক্ষণের জন্য পার্বতীপুর রিসিভ টার্মিনাল সাইডে ২৯ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার একটি বাফার ডিপো নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১০ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি মজুদের সক্ষমতা রয়েছে।

বিপিসির সূত্র জনায়, চুক্তি অনুযায়ী ভারত ১৫ বছর ডিজেল সরবরাহ করবে। প্রথম ৩ বছর ২ লাখ মে. টন, পরবর্তী ৩ বছর ৩ লাখ মেট্রিক টন ও এরপর ৪ বছর ৫ লাখ মেট্রিক টন, অবশিষ্ট ৫ বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন তেল সরবরাহ করবে। এরপর চুক্তি নবায়ন নবায়ন করা হবে। না হলে পাইপলাইনের মালিকানা বাংলাদেশের কাছে থাকবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তেল আনতে প্রতি ব্যারেলের প্রিমিয়াম প্রাইস পড়ে ১১ ডলার। এ পাইপলাইনের মাধ্যমে খরচ পড়বে ৫ দশমিক ৫০ ডলার। অর্থাৎ প্রায় ৬ ডলারের মতো প্রিমিয়াম সাশ্রয় হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে বড়বড় জাহাজে তেল চট্টগ্রাম বহিনোঙরে আসে। সেখান থেকে ছোট ছোট জাহাজে খুলনার দৌলতপুরে আসে। তারপর ব্রডগেজ রেলওয়াগনে আনা হয় পার্বতীপুর ডিপোতে। এখন সরাসরি আন্তঃসীমান্ত পাইপলাইন দিয়ে এসব ঝামেলা ছাড়াই তেল আসবে।

বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ জানান, ভারত সরকার এই পাইপলাইনের অবকাঠামো নির্মাণ করে দিয়েছে। আমরা পাইপলাইনের জন্য ভূমি বরাদ্দ ও রিসিভ ট্যাংক নির্মাণ করেছি। পার্বতীপুর শহরের অদূরে রেল হেড ডিপোর পাশে ৬ দশমিক ৮০ একর জমিতে রিসিভ টার্মিনালটি (আরটি) নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ কাজ করেছে মেসার্স দীপন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এবং ওয়েল ডিপোর কাজ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স পাইপ লাইনার্স লিমিটেড। ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন সংস্থা নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে কাজটি বাস্তবায়ন করেছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ প্রায় ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময়কাল ছিল ২০২০ থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।