ঢাকা: ফাঁকা কক্ষের মধ্যে চলছে এসি, সমানতালে চলছে ফ্যান। বাইরের যথেষ্ট আলো থাকলেও জ্বালানো হয়েছে ৮টি টিউব লাইট।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ১৮ লাখ গ্রাহক-প্রকল্পের পরিচালক নুরুল ইসলাম ভুঁইয়ার কক্ষের এই চিত্র দেখা গেছে বুধবার বেলা ১২টায়।
দ্বিতীয় দফায় বেলা দেড়টায় নুরুল ইসলামের কক্ষে গিয়ে দেখা যায় তখনো তিনি নেই। দুই জন লোক সামনের চেয়ারে বসে আছেন। নুরুল ইসলামের অবস্থান জানতে চাইলে বলেন, ``আশপাশে কোথাও আছেন। একটু পরে আসেন। ``
১ ঘণ্টা পর আড়াইটায় আবার গিয়ে দেখা যায়, আগের দুইজন বসে পারিবারিক আলোচনায় ব্যস্ত। একটু পরে পর্যায়ক্রমে তারা চলে গেলে নুরুল ইসলাম আসেন।
কক্ষে এলে বাইরের এতো আলো থাকার পরও ৮টি টিউব লাইট জ্বালানোর যুক্তি এবং সাশ্রয়ী ব্যবহার নিয়ে প্রচার সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নুরুল ইসলাম বলেন, ``আমার কোনো মন্তব্য নেই। ``
এ সময় তিনি বলেন, ``আসলে লাইট না জ্বালালেও চলে। কেন যে ওরা লাইট জ্বালিয়ে রেখেছে। কলিংবেল চেপে পিয়নকে ধমক দিয়ে বলেন, এখনই লাইট বন্ধ কর। ``
এরপর এসি চালু থাকার পরও ফুল পাওয়ারে ফ্যান চালানো প্রসঙ্গে বলেন, ``কক্ষটা আমার না। আমার আপাতত কোনো কক্ষ নেই। এ জন্য এখানে বসছি। আমার কক্ষ রেডি হলে চলে যাব। `` এরপর প্রসঙ্গ বদলাতে চেষ্টা করেন।
আবার একই প্রশ্ন করা হলে নুরুল ইসলাম বলেন, ``গরমের কারণে ফ্যান চালানো হচ্ছে। আপনাকে এতো কৈফিয়ত দিতে পারব না। ``
কক্ষটিতে এসি থাকলেও প্রতিটি ফাইলের ওপরে বড় বড় পেপার ওয়েট দেওয়া রয়েছে। এক অফিস স্টাফ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ``ওই কক্ষটির জানালা খুলে দিলে যে বাতাস আসে, তাতে বড় ফাইল পর্যন্ত টেবিলের ওপর থেকে পড়ে যায়। বিদ্যুৎ না থাকলে জানালা খুলে দেওয়া হয়। ``
``এ কারণেই এত পেপার ওয়েট রাখা হয়েছে`` বলে তিনি দাবি করেন।
ওই অফিস স্টাফ আরোও বলেন, ``কেন এসি ও ফ্যান এক সঙ্গে চালায় বুঝি না। তার কক্ষে বাইরের বাতাস এবং আলো যথেষ্ট আছে। ``
ওই অফিস স্টাফ আরো জানান, ``এখন সাংবাদিক দেখে তিনি ওই পিয়নকে ধমকাচ্ছেন। সবক`টি লাইট না জ্বালালে অফিসে এসেই রাগারাগি করেন তিনি। ``
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ওই ভবনটির কাঠামোতে প্রায় সব কক্ষেই দিনের আলো প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে। কর্মকর্তারা ইচ্ছা করলেই লাইট না জ্বালিয়ে দিনের আলোয় কাজ করতে পারেন। কিন্তু প্রায় সব কক্ষেই জানালায় পর্দা টানিয়ে লাইট জ্বালিয়ে রাখতে দেখা গেছে।
বিদ্যুতের অপচয় রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। ঠিক সেই সময়ে খোদ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে চলছে বিদ্যুতের শ্রাদ্ধ। এ দৃশ্য মনে করিয়ে দেয় বহুল প্রচলিত সেই উক্তি “আমার নছিয়ত ধরেন কিন্তু খাসিয়ত ধরবেন না। ” অর্থাৎ ``আমি কি বলি তা পালন করবেন কিন্তু আমি যা করি তা করবেন না। ``
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ``গ্রাহকরা যদি সাশ্রয়ী হয়, তাহলে আরো ৫ ভাগ লোককে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব। `` গ্রাহকদের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য তিনি সাংবাদিকদের সহায়তাও কামনা করেন।
সাংবাদিকরা না হয় গ্রাহকদের সচেতন করবেন। আরইবির কর্মকর্তার দায়িত্ব কে নেবেন এই প্রশ্নটার উত্তর কে দেবে?
বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১২
ইএস/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর;