ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

২০০ কোটি টাকা জরিমানায় দেউলিয়ার পথে অটবি!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২২ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১২
২০০ কোটি টাকা জরিমানায় দেউলিয়ার পথে অটবি!

ঢাকা: অটবির মালিকানাধীন কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম’র (কিউপিএস) ভেড়ামারা ও নোয়াপাড়া রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের ২০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সময়মতো উৎপাদনে না আসায় এ জরিমানার মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এরই মধ্যে ৬৩ কোটি টাকা জরিমানা গুনেছে অটবি। আরও ১৩৭ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানটিকে পরিশোধ করতেই হবে বলে জানিয়েছে পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) কর্তৃপক্ষ।

অভিজ্ঞতা না থাকলেও রাতারাতি টাকা বানাতে গিয়ে অটবি দেউলিয়া হতে বসেছে বলে দাবি করেছেন পিডিবির এক কর্মকর্তা।

পিডিবির পরিচালক (ডিরেক্টরেট অব ফিন্যান্স) কাজী আহসান উল্লাহ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন অটবির মালিকানাধীন কোয়ান্টাম পাওয়ারের ভেড়ামারা ১১০ মেগাওয়াটের বিপরীতে ৫৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ও নোয়াপাড়া ১০৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে ৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে  সরকার।

বাকি ১৩৭ কোটি টাকার বিশাল অংকের জরিমানা থেকে রক্ষা পেতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেছে অটবি। তবে তাতে শেষ রক্ষা হবে না বলে দাবি করেছে পিডিবি সুত্র।

পিডিবি দাবি করেছে চুক্তিতে স্পষ্ট করে বলা আছে যথাসময়ে আসতে না  পারলে জরিমানা গুণতে হবে। সাময়িকভাবে আদালত স্থগিতাদেশ দিলেও শেষ পর্যন্ত পিডিবিই জয়ী হবে। আর তখন সুদে আসলে আদায় করা হবে পাওনা।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবসায় নামে আসবাব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অটবি। নতুন কোম্পানি গঠন করে কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম (কিউপিএস)। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ১০৫ মেগাওয়াট ও যশোরের নওয়াপাড়ায় ১০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়।

অনভিজ্ঞতার কারণে যথা সময়ে উৎপাদনে আসতে ব্যর্থ হয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র দু’টি। নিয়মানুযায়ী শুরু হয় জরিমানার অংক কষার পালা।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় তিন বছর মেয়াদি ১১০ মেগাওয়াটের ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্র নির্মাণে অটবি চুক্তি করে ২০১০ এর ৪ ফেব্রুয়ারি । এই কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসে নির্ধারিত সময়ের ২১৮ দিন পর।

যশোরের নোয়াপাড়ায় পাঁচ বছর মেয়াদি ১০৫ মেগাওয়াটের ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য চুক্তি হয় ২০১০ সালের ৪ জুন। এটি উৎপাদনে আসে নির্ধারিত সময়ের ৩১৬ দিন পর ২৬ আগস্ট ২০১১ তারিখে।

যথাসময়ে উৎপাদনে আসতে না পারায় চুক্তিনুযায়ী ভেড়ামারা কেন্দ্রে জরিমানা হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার ডলার ও নোয়াপাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মোট জরিমানা হয়েছে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২০০ কোটি টাকার বেশি।

ভেড়ামারা থেকে প্রতি ইউনিট ১২ টাকা ৫৮ পয়সা এবং নোয়াপাড়া থেকে প্রতি ইউনিট ৭ টাকা ২৯ পয়সা দরে বিদ্যুৎ কিনতে চুক্তিবদ্ধ হয় সরকার।

পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, কোয়ান্টাম অনভিজ্ঞতার পাশপাশি অতিমুনাফালোভি মানসিকতার কারণে বিপদে পড়েছে। এখনেই শেষ নয়।

তাদের আরো ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলেও দাবি করে পিডিবির কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা মুনাফা বেশি করার জন্য পুরাতন মেশিন এনেছে। সে কারণে ফুয়েল বেশি খরচ হচ্ছে কিন্তু সে অনুযায়ি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। এ কারণে তাদের ধারাবাহিকভাবে লস গুনতে হবে।

পিডিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি কোনো দিনই পুরোপুরি ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি।

কোয়ান্টাম পাওয়ারের বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটিতে পুরাতন যন্ত্রপাতি হওয়ায় প্রতিনিয়ত দেখা দিচ্ছে নানা রকম যান্ত্রিক ত্রুটি। নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও কম মজুরি দেয়ার কারণে জাপানি প্রকৌশলী এবং নির্মাণ শ্রমিকরা প্রায় ২ মাস কাজ বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করেছিলো।

অটবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করার পর বড় ধরণের সঙ্কটের পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যাংক ঋনের সুদ ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না।

ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন ঠিক রাখতে না পারায় নতুন করে আর কোন ব্যাংক ঋণ দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। যে কারণে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেও ধ্স ঠেকাতে পারছেনা।

ওই কর্মকর্তা জানান এই মুহুর্তে বিদেশি অনেক অর্ডার থাকলেও টাকার অভাবে আসবাব তৈরি করতে পারছে না অটবি। এরই মধ্যে অনেক অর্ডার বাতিল করেছে বিদেশি বায়াররা।

নানা রকম অফার দিয়ে বাজার থেকে টাকা তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু এতেও ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে সামার ক্লিয়ারেন্সের নামে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে আসবাবে। যদিও তাদের এই ছাড়ের বিষয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। একে অনেকে চাতুরতা বলেও উল্লেখ করেছেন।

আর্থিক সঙ্কট ও দেউলিয়াত্ব ঠেকাতে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তোলার পরিকল্পনা করছে অটবি। ইতোমধ্যে অটবি লিমিটেডকে তালিকাভূক্ত করতে আইপিও ছাড়ার অনুমোদন চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লিফটিং বিভাগের অ্যাসিসট্যান্স জেনারেল ম্যানেজার নিজাম উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে অটবির তালিকাভুক্তির আবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান অটবির আবেদন সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

অটবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিমেষ কুণ্ডুর সঙ্গে কথা বলার জন্য তার গুলশানস্থ অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায় নি। অফিস সুত্র দাবি করেছে তিনি অসুস্থ্যতার কারণে অফিসে আসেননি।

অটবির জনসংযোগ কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন এমডি ছাড়া আর কেউ কোয়ান্টাম বিষয়ে বলতে পারবে না। তিনি দুই সপ্তাহ ধরে অসুস্থ্য। সেল ফোনেও কথা বলা সম্ভব নয় বলে জানান।

পরে একাধিকবার অটবির এমডি অনিমেষ কুণ্ডুর সেল ফোনে কল কারা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

সোমবার বিকেলে ৩টায় পিডিবির চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবীরের সঙ্গে দেখা করে মন্তব্য চাওয়া হয়। এ সময় চেয়ারম্যান বোর্ড মিটিং নিয়ে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে বলেন, এখন মন্তব্য করা সম্ভব নয়। ভালো করে বুঝে তিনি মন্তব্য করতে চান বলেও জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১২
ইএস/এমএমকে- menon@banglanews24.com 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।