ঢাকা: গ্যাস সংকটের কারণে আবাসিকসহ শিল্পাঞ্চলে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে প্রায় তিন বছর। ভবন নির্মাণ হলেও গ্যাসের অভাবে ফ্ল্যাট হস্তান্তর বন্ধ রয়েছে।
সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঘুষের বিনিময়েতিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সংযোগ দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। সর্বশেষ ঢাকার হাজারিবাগের আরএস সিএনজি স্টেশনে বেআইনিভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়েছে তিতাস।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ব্যবসায়ী সাত্তার ভূঁইয়া ‘আলিফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনে’র নামে ব্যবসা শুরু করেন। জমির মালিক রফিকুল ইসলাম রতনের সঙ্গে বিরোধের কারণে সাত্তার ভূঁইয়া তার ফিলিং স্টেশনের অবকাঠামো ফেলে চলে যান। এরপর রফিকুল ইসলাম রতন আরএস সিএনজি স্টেশন নামে কাজ শুরু করেন।
জানা যায়, গাজিপুরে কুনিপাড়ায় আরএস সিএনজি স্টেশনটি তিতাসের কাছ থেকে বরাদ্দ পেয়েছিল। নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় রফিকুল ইসলাম রতন আরএসের লাইসেন্সটি কিনে নেন। আলিফ সিএনজি স্টেশনের রেখে যাওয়া অবকাঠামোর ওপর নির্মাণ শুরু করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, সিএনজি স্টেশন স্থানান্তরের একটি নিয়ম রয়েছে যাকে বলা হয় ‘জোনিং প্রিন্সিপাল’। এ নিয়ম অনুযায়ী, বেশ কিছু বাধ্যবাধকতা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, কেবল আইনের এসব ধারা মানলেই কোনো সিএনজি স্টেশন স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়া হয়।
অভিযোগ উঠেছে, আরএস সিএনজি স্টেশনের ক্ষেত্রে আইনের চরম ব্যত্যয় ঘটেছে। মানা হয়নি জোনিং প্রিন্সিপালের বেশ কয়েকটি ধারা।
জোনিং প্রিন্সিপালের বিধানমতে, শহরের বাইরে ও ভেতরে যথাক্রমে একটি সিএনজি স্টেশন থেকে অন্য সিএনজি স্টেশনের দূরত্ব হতে হবে ন্যূনতম ছয় কিলোমিটার ও তিন কিলোমিটার। আর যদি স্টেশনটি রাস্তার বিপরীতে পাশে হয় তাহলে এ দূরত্ব হবে যথাক্রমে চার ও দুই কিলোমিটার।
ওই আইনে আরও উল্লেখ আছে যে, প্রস্তাবিত সিএনজি স্টেশনটির সামনে ও পেছনে দুইটি স্টেশনের কম্প্রেসারের গ্যাসের অনুমোদিত লোডের তুলনায় সিএনজি বিক্রয়ের পরিমাণ ৫০ শতাংশ কম হলে প্রস্তাবিত স্টেশনটি অনুমোদন দেওয়া যাবে না।
এদিকে, সদ্য অনুমোদন পাওয়া আরএস সিএনজি স্টেশনের পাশের দুটি সিএনজি স্টেশনের লোড ৪০ শতাংশের বেশি না থাকার পরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর দুই কিলোমিটারের মধ্যেও রয়েছে একাধিক সিএনজি স্টেশন।
নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনো সিএনজি স্টেশন স্থানান্তর করতে হয়, তাহলে যে স্থানে স্টেশনটি বসানো হবে সেখানে ও তার আশেপাশে গ্যাসের চাপ এবং আশেপাশের স্টেশনগুলোর গ্যাসপ্রাপ্তিসহ অনেক বিষয় নজরে রাখতে হবে।
আরএস সিএনজি স্টেশনের মাত্র ২০০ মিটার দূরত্বে রয়েছে সিটি ওভারসিস সিএনজি স্টেশন। জানা যায়, সিটি ওভারসিস সিএনজি স্টেশন গত মাসে নির্ধারিত লোডের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ গ্যাস বিক্রি হয়েছে। এটা আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
সিটি ওভারসিস সিএনজি স্টেশনের ম্যানেজার বাতেন প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাত্র ১০০ গজ দূরত্বে কীভাবে নতুন স্টেশনের অনুমোদন দেওয়া হলো আমরা বুঝতে পারি না। ’
আরএস সিএনজি স্টেশনের হিসাব রক্ষক বিপ্লব সাহা বাংলানিউজকে জানান, সব নিয়ম মেনেই এখানে সিএনজি স্টেশন বসানো হয়েছে। কোনো রকম আইন অমান্য করা হয়নি।
আরেকটি স্টেশনের এতো কাছে কীভাবে অনুমোদন পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ``এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ``
আরএস সিএনজি স্টেশনটি গাজীপুরে যে স্থানে ছিল সেখানে এর অনুমোদিত গ্যাসের চাপ (লোড) ৪৪০ কিউবিক মিটার। স্থানান্তরের পর স্টেশনটিতে যে যন্ত্র বসানো হচ্ছে তার চাপ ১২৯০ কিউবিক মিটার।
অনুমোদন না নিয়ে অধিক লোডের যন্ত্রপাতি প্রসঙ্গে আরএস সিএনজি স্টেশনের মালিক রফিকুল ইসলাম রতন বাংলানিউজকে বলেন, ``আমি দুইটি লাইসেন্স কিনেছি। একটির লোড ৪৬০, আরেকটির ৪৫১। ``
উল্লেখ্য, সরকারি নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই তিতাস ৬৯১টি প্রতিষ্ঠানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়েছে। নতুন সংযোগ পাওয়া ৬৯১টি প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত করে পেট্রোবাংলা এই অনিয়ম আবিষ্কার করে।
এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র ৩৯টি শিল্পকারখানা, ১৩৪টি ক্যাপটিভ পাওয়ার, ৫২টি সিএনজি স্টেশন ও ৩৬৫টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব সূত্রে জানা যায়, অন্তত ২০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। গ্যাস সংযোগ না থাকায় সেগুলো হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। ফলে এ শিল্পে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আজিজ খান বলেন, ``আরএস সিএনজি স্টেশন আগে গাজীপুরে ছিল। আরএস সিএনজি স্টেশনটি হাজারিবাগে স্থানান্তর করা হলে, সেখানে লাইন দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। নতুন কোনো সংযোগ দেওয়া হয়নি। `` তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিপরীতে, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে বলেন, ``সংযোগ বন্ধ থাকার পরও গোপনে সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ কিছুটা সত্য। `` তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ঢাকায় এখনও লক্ষাধিক অবৈধ সংযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১২
ইএস/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর jewel_mazhar@yahoo.com