ঢাকা: ২টি লাইট, ২টি ফ্যান ও একটি ফ্রিজের জন্য বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়েছে ১৮০০ টাকা। প্রতিবাদ করতে গেলে বাসার মালিক বলেছেন, না পোষালে বাসা ছেড়ে দিতে পারেন।
দক্ষিণ বাড্ডা এলাকার (বাসা নম্বর প#১৬/৪) বাসিন্দা বশির হোসেন তার বাসার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল প্রসঙ্গে এভাবেই বললেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে আরও বলেন, বাসা মালিকরা বিদ্যুৎ বিলকে নির্যাতনের নতুন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন।
তিনি জানান, তার কাছ থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য আদায় করা হচ্ছে সাড়ে আট টাকা। কয়েক মাস ধরে এই নির্যাতন চলছে। জুন মাসে তার কাছ থেকে বিল আদায় করা হয়েছে ১৫৭০ টাকা, মে মাসে ১৩০০ টাকা।
প্রতিবাদ করলে বাসা মালিক শফিক মিয়া বলেছেন, আমার বাসায় থাকতে হলে এভাবেই বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে। না হলে বাসা ছেড়ে দেন।
এমনিতেই বাসাভাড়া বেশি, তার ওপর বিদ্যুৎ বিলের কারণে নাভিশ্বাস উঠছে। সরকার ১ টাকা বাড়ালে বাসার মালিকরা বাড়ায় ১০০ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ ইউনিটের ওই বাসা চলছে অবৈধ সংযোগ দিয়ে। আবার এখান থেকে একটি দোকান ও একটি মাদ্রাসায় সাইড সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বাসার মালিক শফিক মিয়াকে ফোন করলে তিনি বলেন, “আমাকে আগে জানাতে হবে কে এই অভিযোগ করেছে। ”
পরে ক্ষেপে গিয়ে বলেন, “আমি প্রতি ইউনিটের দাম নিই ৮ টাকা। যারা আপনাকে সাড়ে আট টাকার কথা বলেছে, তারা মিথ্যা বলেছে। ”
তিনি তার ভাইয়ের মিটার থেকে সংযোগ নিয়েছেন স্বীকার করে বলেন, “আমার বাসা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে তার ফল ভালো হবে না। ফোনে কথা না বলে সামনে আসেন দেখি আপনার কতো সাহস। ”
এ বিষয়ে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) বারিধারা অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করলে মোসলেম উদ্দিন নামের এক কর্মচারী ফোন রিভিস করেন। তিনি বাংলানিউজকে জানান, এ ধরণের সাইড কানেকশন অনেক রয়েছে। রোববারে যোগাযোগ করেন দেখি কিছু করা যায় কিনা।
বিদ্যুতের বিলে স্লাবের (ইউনিট ভেদে বিলের পার্থক্য) কারণে ভাড়াটিয়াদের গলা কাটা যাচ্ছে। প্রচলিত স্লাবে শূন্য থেকে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত প্রতি ইউনিটের দাম ৩.০৫ টাকা ১০০ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ইউনিট প্রতি ৪.২৯ টাকা এবং এর উর্ধ্বে প্রতি ইউনিটের জন্য ৭.৮৯ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে।
৪০০ ইউনিটের উর্ধ্বে ব্যবহারকারীদের দাম নেওয়া হচ্ছে প্রায় দ্বিগুন। এতে করে নিজের অজান্তেই ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা।
ডেসকোর সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, এই কৌশল করা হয়েছে ডেসকো ও ডিপিডিসিকে মুনাফায় নেওয়ার জন্য।
তিনি জানান, নগরীর বেশিরভাগ বাসায় পৃথক কোনো মিটার নেই। চলছে এক মিটার দিয়ে। যে কারণে বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ দামে। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজধানীর কল্যাণপুরের (রোড # ৬ বাসা # ৭) ভাড়াটিয় মাসুদ রানা বাংলানিউজকে জানান, তিনি যে বিল্ডিংয়ে থাকেন, তাতে ১২টি ইউনিট রয়েছে। এ জন্য রয়েছে মাত্র ১টি মিটার। গতমাসে তাকে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়েছে ১৬০০ টাকা।
তার ব্যবহার অনুযায়ী কোনোভাবেই ৩০০ টাকার বেশি বিল হওয়ার কথা নয় বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, সরকারই যদি জনগণের পকেট কাটে, তাহলে তারা যাবেন কোথায়।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক বলেছেন, “স্লাবের কারণে জনগণ হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়ে আমিও শুনেছি। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছেন। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১২
ইএস/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর