ঢাকা: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ভুয়া ছাড়পত্র দিয়ে নগরীতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। রাজউক অনুমোদিত নকশা অনুসরণ না করে এরই মধ্যে অনেক ভবন নির্মিত হয়েছে।
ডেসকোর উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) পদমর্যাদার কয়েকজন কর্মকর্তা এই ভুয়া ছাড়পত্র তৈরি ও সংযোগ দেওয়া সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সিন্ডিকেট রাজউকের নিষেধাজ্ঞা থাকা ভবন মালিকদের সঙ্গে গোপন রফা করেন। পরে তারা নিজেরাই ভুয়া ছাড়পত্র তৈরি করে সংযোগ দিয়ে আসছেন। এই সিন্ডিকেটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডেসকোর উপমহাব্যবস্থাপক একেএম মহিউদ্দীন।
সম্প্রতি জাহিদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর। তারপরও এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, রাজউকের নকশা বহিভূর্ত হওয়ায় যে সব ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, সেগুলোর ভুয়া অনাপত্তিপত্র তৈরি করে সংযোগ দিচ্ছে ডেসকো। ডেসকোর ওই সিন্ডিকেট নিজেরাই রাজউকের ভুয়া ছাড়পত্র তৈরি করে সংযোগ দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। এ জন্য তারা প্রতিটি সংযোগে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিচ্ছেন।
উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ( রোড# ১৪ বাড়ি # ৬৭) মকবুল হোসেন, ৯ নম্বর সেক্টরের ( রোড #৬ বাড়ি ২৬) হাবিবুর রহমানসহ অনেককে ভুয়া ছাড়পত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অথচ মকবুল হোসেন ও হাবিবুর রহমানের ওই ভবন রাজউকের নকশা বর্হিভূত হওয়ায় ভবন দু’টিতে সব ধরনের সেবা প্রদানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল রাজউক। একই আদেশে রাজউক ভবন দুটির বর্ধিত অংশ ভেঙে ফেলারও নির্দেশ দেয়।
রাজউক হাবিবুর রহমানকে ২০১০ সালের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় নোটিশ পাঠায় (স্মারক রাজউক/নঅঅ/ এসি-৩০৪৩/০৬/২৪০)। নোটিশে বলা হয়, নকশা বর্হিভূত অংশ কেন ভেঙে ফেলা হবে না এর জন্য কারণ দর্শাইতে বলা হয়েছিল।
নোটিশ জারির সাত দিনের মধ্যে অনুমোদিত নকশা বহির্ভূত অংশ ভেঙে ফেলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। ব্যত্যয় হলে রাজউক নিজেই ভেঙে ফেলবে।
একইভাবে মকবুল হোসেনকেও তার নকশা বহির্ভূত অংশ ভেঙে ফেলার জন্য নির্দেশ দেয় রাজউক।
নোটিশে ভবন দুটিতে সব ধরনের সেবা ( পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ) বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়। নোটিশের অনুলিপিও দেওয়া হয় ডেসকোকে। কিন্তু তাদের ভবনের বর্ধিত অংশ ভেঙে ফেলার আগেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় ডেসকো।
এ জন্য রাজউকের দু’টি পৃথক ভুয়া অনাপত্তিপত্র তৈরি করা হয়। এতে মহাখালী নকশা অনুমোদন শাখার অথরাইজড অফিসার-২-কে প্রেরক দেখানো হয় (স্মারক এ-৩সি-৩৪৩/০৬/২৪০)।
এদিকে রাজউক সূত্রও জানায়, ২০১০ সালে বর্ণিত নামে এই ধরনের কোনো অনাপত্তিপত্র ইস্যু করা হয়নি।
অভিযোগকারীর দাবি, এ ধরনের শতশত অভিযোগ রয়েছে, যা সঠিক তদন্ত হলেই বেরিয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে রাজউকের মহাখালী নকশা অনুমোদন শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাবিবুর রহমানের নামে ইস্যু করা অনাপত্তিপত্রটির স্মারক নম্বরের সিরিয়াল দেখানো হয়েছে ২৪০। অথচ ২০১০ সালে মহাখালী থেকে এতসংখ্যক অনাপত্তিপত্রই দেওয়া হয়নি। সর্বশেষ ২২ ডিসেম্বর অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয়েছে, যার নম্বর হচ্ছে ১১৭।
মহাখালী নকশা অনুমোদন শাখায় গেলে অথোরাইজড অফিসার পারভেজ কাদেরকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে লাইন কেটে দেন।
এই শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ডেসকোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তোলা হয়েছে, সবই সঠিক। ” তারাও এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে শুনেছেন বলে জানান।
ওই কর্মকর্তা জানান, রাজউকের লোকবল। এছাড়া রাজনৈতিক চাপের কারণেও অভিযান ব্যাহত হয়।
এ প্রসঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ডেসকোর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরজাদ হোসেন প্রথমে বলা শুরু করেন। এক পর্যায়ে অনিয়ম ও লিখিত অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বৈঠকে আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
অভিযুক্ত উপমহাব্যবস্থাপক একেএম মহিউদ্দিন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১২
ইএস/সম্পাদনা: আহমেদ রাজু, চিফ অব করেসপন্ডেন্টস/রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর