ঢাকা: তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা ছিলো।
প্রথামকিভাবে নির্বাচিত চার কোম্পানি দরপত্রের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে বলে দাবি করেছে পেট্রোবাংলা সূত্র।
দেশের গ্যাস সংকটের কারণে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিদিন ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল সরকার। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়।
দরপত্র আহবান করেও কোনো প্রতিষ্ঠানকে পাওয়া যায়নি যারা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে রাজি আছে। ফলে চলতি সরকারের আমলে এলএনজি আমদানি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত কোনো ভালো খবর নেই। উপযুক্ত ঠিকাদার পাওয়া যাচ্ছে না। চেষ্টা চলছে দেখি কি হয়। ’’ আবার দরপত্র আহ্বান করা হবে বলেও জানান তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, ১৮ মাস সময় লাগবে। সে কারণে এ সরকারের সময়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়া কঠিন।
জানা গেছে, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে প্রাথমিকভাবে চার কোম্পানি মনোনীত হয়। কোম্পানিগুলো হচ্ছে, ভারতের হিরানান্দিয়ানি, যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস অ্যাস্ট্রা ওয়েল অ্যান্ড এক্সিলারেট এনার্জি, দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংয়ের সিএন্ডটি কর্পোরেশন ও দ্বীপ রাষ্ট্র বারমুদার গোলার এলএনজি এনার্জি।
চার কোম্পানির মধ্যে মাত্র একটি যথাসময়ে দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছিল। এ কারণে দরপত্রে অংশগ্রহণের সময় গত ৩১ জানুয়ারি থেকে বাড়িয়ে ১৫ এপ্রিল করা হয়, তবে সে দফায়ও কোনো কোম্পানিই চূড়ান্ত দরপত্র জমা দেয়নি।
একটি কোম্পানির আবেদনের প্রেক্ষিতে দরপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা দ্বিতীয়বারের মতো ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
স্যামসাংয়ের সিএন্ডটি কর্পোরেশন আনুষ্ঠানিকভাবে পেট্রোবাংলাকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা কাজটি করছে না।
কোম্পানিটি তাদের লেখা চিঠিতে বলেছে, পেট্রোবাংলা চুক্তি স্বাক্ষরের ১৮ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে চায়। কিন্তু তাদের টার্মিনাল নির্মাণের জন্য দুই বছর সময় প্রয়োজন। এছাড়া দরপত্র জমা দেয়ার জন্য যে সময় দেওয়া হয়েছে তাও যথেষ্ট মনে হয়নি কোম্পানিটির। সঙ্গত কারণে কোম্পানিটি সরে দাঁড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে বাঁচানোর জন্য এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে সংকট নিরসনের জন্য সারাদেশে এলএনজি ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত মহেশখালী দ্বীপের কাছে ভাসমান এ টার্মিনাল নির্মিত হবে। এ টার্মিনালে বছরে ৫ লাখ টন এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করা যাবে। পরে পাইপলাইনের মাধ্যমে এ গ্যাস চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত আনা হবে।
এতে জ্বালানি তেল কম আমদানি করতে হবে। জাপান-ভারতসহ জ্বালানি সংকটে ভূগছে এমন অনেক দেশই এলএনজি আমদানি করছে। পাকিস্তানও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১২
ইএস/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর