ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুতে এবার থেকে প্রি পেইড মিটার

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১২
বিদ্যুতে এবার থেকে প্রি পেইড মিটার

ঢাকা : বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রচলিত পোস্ট পেইড মিটার পদ্ধতি তুলে দেওয়া হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে সারাদেশ থেকে পুরাতন মিটার ‍তুলে নিয়ে প্রি পেইড মিটার বসাতে চায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।



গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করা, সিস্টেম লস, চুরি, বিল বকেয়া ও ওভার লোড ঠেকাতেই এই পদ্ধতি বলে জানিয়েছে পিডিবি সূত্র।

এরইমধ্যে পাইলট প্রকল্পের আওতায় আওতায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ৪৬ হাজার ও ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) প্রায় সাড়ে ১১হাজার প্রি পেইড মিটার স্থাপন করেছে।

পিডিবি সিলেট, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া এলাকায় এবং ডেসকো রাজধানীতে এসব মিটার স্থাপন করেছে।

এছাড়া পিডিবির অর্থায়নে ইউনিফাইড প্রি পেইড মিটারিং প্রকল্প নামে একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

পিডিবি’র ইউনিফাইড প্রি পেইড মিটারিং স্কিমের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বেলায়েত হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পাইলট প্রকল্পের আওতায় আগামী জুনের মধ্যে পাঁচ বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থার ৩৫ হাজার গ্রাহককের মিটার পরিবর্তন করে প্রি পেইড মিটার স্থাপন করা হবে।

এরমধ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ১০হাজার, ডেসকো ১০ হাজার মিটার  ছাড়াও পিডিবি, আরইবি (পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড), নওজোপাডিকোর(নর্থ-ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবউশন কোম্পানি)৫ হাজার গ্রাহককে প্রি পেইড মিটার দেবে। প্রতি মিটারের দাম পড়ছে ৪ হাজার টাকা।

এছাড়া সব বিতরণ সংস্থায় পূর্ণ পাওয়ারের সফটওয়ার বসানো হবে। যে সফটওয়ারের আওতায় পর‌্যায়ক্রমে সব গ্রাহকে প্রি পেইড মিটারের আওয়তায় আনা যাবে। সফটওয়ার হস্তান্তরের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

ইউনিফাইড প্রি পেইড মিটারিংয়ের এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪৯ কোটি টাকা। এ কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে কনসোটিয়াম অব আইডিয়েল এন্টারপ্রাইজকে। কোম্পানিটি চীনা প্রতিষ্ঠান হেকজিন ইলেকট্রিক্যালের সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

পিডিবি প্রাথমিকভাবে অর্থ পরিশোধ করবে। পরবর্তীতে কোম্পানিগুলো পিডিবিকে সেই পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করবে বলে জানান ইউনিফাইড প্রি পেইড মিটারিং স্কিমের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বেলায়েত হোসেন।

বেলায়েত হোসেন জানান প্রি পেইড মিটারে যেতে পারলে অনেক ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এতে গ্রাহকদেরও দুর্ভোগ কমে যাবে।

তিনি বলেন এখন দেখা যাচ্ছে- অনেকে শুধুমাত্র বাতি ও ফ্যানের লোড নিয়েছে। কিন্তু এর পরে বাসায় ফ্রিজ ও এসি লাগিয়েছে। এতে করে ওই এলাকার সঞ্চালনে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময়ে বেশি লোডের কারণে ট্রান্সমিটার বিকল হয়ে যাচ্ছে।

প্রি পেইড মিটারে যেতে পারলে অনুমোদিত লোডের বেশি কোন গ্রাহক লোড দিতে পারবেনা। কোন গ্রাহক যদি ৫ কিলোওয়াট পিকের লোড অনুমোদন নিয়ে ৬ কিলোওয়াট লোড দিলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাইন অফ হয়ে যাবে।
 
প্রচলিত পদ্ধতিতে একজন গ্রাহক মাস শেষে ব্যবহৃত পরিমাণ বিদ্যুতের বিপরীতে বিল পরিশোধ করে থাকেন। প্রি পেইড মিটারিং পদ্ধতিতে গ্রাহককে আগেই টাকা জমা দিয়ে  বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে।

তবে সরকারি ছুটির দিনে ব্যালান্স শেষ হয়ে গেলে মিটারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পোস্ট পেইড পদ্ধতিতে চলে যাবে। পরবর্তী কর্মদিবসে টাকা জমা না দিলে আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্ধ হয়ে যাবে সংযোগ। ব্যালান্স শেষ হওয়ার আগেই অ্যালার্ম দেবে মিটার।

গ্রাহকরাও বেশির ভাগেই এর সুবিধার কথাই জানিয়েছেন। রাজধানীর উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা স.ম আজিজুর রহমান বাংলানউজকে জানান প্রি পেইড মিটারিং পদ্ধতি আমার কাছে ভালই মনে হয়।

তার মতে ব্যালান্স আগে থেকেই বুঝতে পারা যায়। সে কারণে ব্যবহার সীমিত রাখা সুবিধা হয়। তবে তিনি বলেন মিটারগুলো সহজে দৃষ্টি গোচর হয় এমনস্থানে স্থাপন করা গেলে সুবিধা হত। তাতে আগে ভাগেই জেনে যেত গ্রাহকরা। সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা কমে যেত।

উত্তরা এলাকায় আব্দুল মমিন নামের এক গ্রাহক বাংলানিউজকে জানান, একবার তিনি গ্রামের বাড়ি গেলে তার সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ৩ দিন পরে এসে দেখেন ফ্রিজের সব খাবার নষ্ট হয়ে গেছে। তবে নতুন নতুন এমন হলেও পরবর্তীতে এ ধরণের সমস্যা না হওয়ারেই কথা বলে তিনি মনে করেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে জানান, রোববার মন্ত্রণালয়ে ইউনিফাইড প্রি পেইড মিটারিং স্কিমের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। আশা করছি আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

প্রি পেইড মিটারিং পদ্ধতিতে যাওয়া গেলে গ্রাহক সেবা বৃদ্ধি পাবে। ৫ বছরের মধ্যে প্রি পেইড মিটারে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত সারাদেশে বর্তমানে(অক্টোবর ‘১২) ১ কোটি ৩৫ লাখ ৪৩ হাজার বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সঞ্চালণ লাইন ৮ হাজার ৯৪৯ কিলোমিটার ও বিরতণ লাইন রয়েছে ২ কোটি ৮১ লাখ ১২৩ কিলোমিটার।

বাংলাদেশ সময় : ১০৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১২
ইএস/এআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।