ঢাকা: জামায়াত-শিবির আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ২ মাসের মাথায় ২৪ এপ্রিল বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে চাপাইনবাবঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিতে। তবে এদিন সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে না।
৬টি ফিডারের মধ্যে মাত্র একটি ফিডার (৬ নম্বর) চালু করা হবে বলেও জানিয়েছেন চাপাইনবাবঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাসান শাহ নাওয়াজ।
এই ফিডারের আওতায় রয়েছে রানীনগর, শাহপাড়া, আটরশিয়া, বনকুল ও জগন্নাথসহ বেশ কিছু গ্রাম। এর পর পর্যায়ক্রমে অন্য ৫টি ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
হাসান শাহ নাওয়াজ বাংলানিউজকে জানান, পুড়িয়ে দেওয়া সাব স্টেশনটি মেরামতের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ৬টি ট্রান্সফরমারের মধ্যে ২টি এখনও নষ্ট রয়েছে। সেগুলো মেরামতের কাজ চলছে। ১টি এয়ার সার্কিট ব্রেকারের তেল পরিবর্তন করতে হবে। ৩৩ কেভি ফিডার টেস্টিং শেষ হয়েছে। সাব-স্টেশনটির টেস্টিং চলতি সপ্তাহেই শেষ হবে।
তিনি জানান, রোববার থেকে ১১ কেভি ৬ নম্বর ফিডারটি (লাইন) পরিদর্শন শুরু করবেন। লাইনে কোথাও কোনো গাছ পড়ে আছে কিনা খতিয়ে দেখা ও সাপ্লাই ট্রান্সফরমারগুলোর পরীক্ষা করা হবে। ফিডারটি পরিদর্শন করতে ২ দিন সময় লেগে যাবে। তৃতীয় দিন লাইনে মাইকিং করা হবে। আর চতুর্থদিন ২৪ মার্চ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এই ফিডারটিতে সবচেয়ে বেশি সেচ গ্রাহক রয়েছে, সে কারণে প্রথমে এই ফিডারটি চালু করা হবে।
এর পর একইভাবে অন্যান্য ফিডারগুলি একেকটি ২ দিন করে পরিদর্শন করা হবে। তৃতীয় দিনে মাইকিং করে চতুর্থদিনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
মাইকিং কেন করা হবে এ প্রশ্নের জবাবে জেনারেল ম্যানেজার হাসান শাহ নাওয়াজ বলেন, “দীর্ঘদিন পর লাইনটি চালু করা হচ্ছে, যাতে কোনো রকম দুর্ঘটনা না ঘটে। এ ছাড়া এধরনের নাশকতা ঠেকাতে জনগণকে প্রতিরোধ গড়তে উদ্বুদ্ধ করা হবে। ”
এদিকে, আরইবির সূত্র জানায়, হাসান শাহ নাওয়াজ যখন বলেছেন, ২৪ এপ্রিল বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে, তখন তার আর কোনো নড়চড় হবে না। আরইবির জিএমদের মধ্যে তাকে ‘লৌহমানব’ বলা হয়। তিনি কখনও নীতির প্রশ্নে আপস করেন না।
রুগ্ন প্রতিষ্ঠানকে সচল করতে তাকে পাঠানো হয়। সর্বশেষ তাকে পাঠানো হয়েছিল মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে। সেখানে তিনি সফল হয়েছেন। চাপাইনবাবগঞ্জকে সচল করতে মেহেরপুর থেকে বদলি করে আনা হয়েছে তাকে।
আরইবির সদস্য প্রকৌশলী শেখ নুরুল আবসার বাংলানিউজকে জানান, জরুরিভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সমিতির সদর দপ্তরে থাকা রিজার্ভ ও চলমান প্রকল্পের মালামাল ধার করে সচল করার কাজ শুরু করা হচ্ছে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “প্রাথমিক অবস্থায় আমরা যা ধারণা করেছিলাম, ধ্বংসযজ্ঞ তার চেয়ে অনেক ভয়াবহ। এখানে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। অত্যাধিক তাপমাত্রার কারণে অনেক ভবনের গ্রেটবিমগুলো বেঁকে গেছে। ”
প্রথম দিকে যে টিম যায় তারা ক্ষতির পরিমাণ ১০৮ কোটি টাকা ধারণা করেছিল। এখন যা রিপোর্ট আসছে তাতে এই পরিমাণ ২শ’ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
নুরুল আবসার জানান, প্রথমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নের মূল্যায়ন কাজ চলছে। ভবনগুলো মেরামত করতে হবে, নাকি পুরো ভেঙে ফেলে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, শিবগঞ্জ উপজেলা সদরে পিডিবি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এর বাইরে আরইবির গ্রাহক রয়েছে ৩৫ হাজার। যারা পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছেন। এর মধ্যে বোরো ক্ষেত রয়েয়ে ১ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে। ৪শ’ হেক্টর জমিতে বিকল্প উপায়ে সেচ দেওয়া হচ্ছে। পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে ৮শ হেক্টর জমির সেচ।
এ বিষয়ে আরইবির চেয়ারম্যান মঈন আহমদ বাংলানউজকে জানান, আমরা দ্রুততার সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সব উদ্যোগ নিয়েছি। এ ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আনার জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
প্রসঙ্গত, শিবগঞ্জে অবস্থিত চাপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদরদপ্তরে ২৮ ফেব্রুয়ারি ধ্বংসযজ্ঞ চালায় জামায়াত-শিবির।
এ সময় তারা আগুন দিয়ে সবকিছু জ্বালিয়ে দেয়। এতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, ধ্বংসলীলা থেকে রেহাই পায়নি ট্রান্সফরমার রিপেয়ারিং ওয়ার্কসপ ও আবাসিক ভবনগুলোও। সেখানেও তারা লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতে এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ একেবারেই নজিরবিহীন।
এ ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে আরইবি গঠন করেছে ২টি ও মন্ত্রণালয়ের ১টি। মামলা দায়ের হয়েছে ৩টি। এতে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বদলি করা হয়েছে আরইবি মহাব্যবস্থাপকে। ওসি ও ইউএনওকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৩
ইএস/সম্পাদনা: এম জে ফেরদৌস, নিউজরুম এডিটর, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর