ঢাকা: জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসযজ্ঞের পর বুধবার শিবগঞ্জের ২ নম্বর ফিডারটি চালু করা হয়েছে। এতে ৮ হাজার গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছুবে বলে জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
এর আগে ২৬ এপ্রিল প্রথম ৬ নম্বর ফিডারে ও ২৯ এপ্রিল ৩ নম্বর ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এতে প্রায় ১৮ হাজার গ্রাহক পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় চলে আসে। ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের রায়ের পর শিবগঞ্জে অবস্থিত চাপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এতে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক।
চাপাইনবাবগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাসান শাহ নাওয়াজ বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিলনা। লাইনের কোথায় গাছ পড়ে আছে, কোথায় ছিড়ে গেছে না দেখে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই প্রত্যেকটি ফিডার পরিদর্শন করা হচ্ছে। এতে সময় লাগছে ২ দিন।
ওই সমিতিতে মোট ৬টি ফিডার রয়েছে। এরমধ্যে ৩টি ফিডার চালু করা হয়ছে। আগামী ২সপ্তাহের মধ্যেই অপর ৩টি ফিডার চালু করা সম্ভব হবে বলেও আশা করছেন হাসান শাহ নাওয়াজ।
মাইকিং কেন করা হচ্ছে প্রশ্নের জবাবে নাওয়াজ বলেন, “দীর্ঘদিন পর লাইনটি চালু করা হচ্ছে, যাতে কোনো রকম দুর্ঘটনা না ঘটে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে এধরনের নাশকতা ঠেকাতে জনগণকে প্রতিরোধে উদ্বুদ্ধ করার জন্য মাইকিং। ”
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের(আরইবি) সদস্য প্রকৌশলী শেখ নুরুল আবসার বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যুৎ সেক্টরে এ ধরণের ঘটনা নজীরবিহীন। তবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এত কম সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি জানান, কিছুই ছিলনা। পুড়ে দেওয়ার পর প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিল কিনে মাঠে বসে অফিস করেছেন কর্মকর্তারা। বিভিন্ন সমিতির সদর দপ্তরে থাকা রিজার্ভ ও চলমান প্রকল্পের মালামাল ধার করে এনে সচল করা হচ্ছে।
নুরুল আবসার জানান, “প্রথমে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নের মূল্যায়ন কাজ চলছে। ভবনগুলো মেরামত করতে হবে, নাকি পুরো ভেঙে ফেলে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে তা রিপোর্টের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ”
আরইবি’র চেয়ারম্যান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মঈন আহমদ বাংলানিউজকে জানান, আমরা দ্রুততার সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সব উদ্যোগ নিয়েছি। এ ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আনার জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
প্রসঙ্গত, শিবগঞ্জে অবস্থিত চাপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদরদপ্তরে ২৮ ফেব্রুয়ারি ধ্বংসযজ্ঞ চালায় জামায়াত-শিবির। এ সময় তারা আগুন দিয়ে সবকিছু জ্বালিয়ে দেয়। এতে প্রায় ২শ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসলীলা থেকে রেহাই পায়নি ট্রান্সফরমার রিপেয়ারিং ওয়ার্কসপ ও আবাসিক ভবনগুলোও। সেখানেও তারা লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতে এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ একেবারেই নজিরবিহীন।
এ ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে আরইবি গঠন করেছে ২টি ও মন্ত্রণালয় ১টি। মামলা দায়ের হয়েছে ৩টি। এতে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বদলি করা হয়েছে আরইবি মহাব্যবস্থাপক। ওসি ও ইউএনওকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৩
ইএস/সম্পাদনা: জনি সাহা, নিউজরুম এডিটর/জেডএম