ঢাকা: গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপপ্রচার ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীরা বৈধ হতে ভয় পাচ্ছেন।
এ কারণে পেট্রোবাংলা বৈধ হওয়ার সময়সীমা বেধে দিলেও তাতে খুব একটা সাড়া মিলছে না।
প্রথম দফায় পেট্রোবাংলার বেধে দেওয়া ৩০ মে পর্যন্ত সময়সীমা শেষ হলেও বৈধ হওয়ার আবেদন পড়েছে (তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্টিবিউশন) মাত্র সাড়ে নয় হাজার। হতাশ হয়ে পেট্রোবাংলা আবার তিন সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে ২০ জুন করেছে।
অন্যান্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর অবস্থাও একই রকম। ফলে আগামী ২০ জুনের মধ্যে বাকি এক লাখ ৪০ হাজার অবৈধ গ্রাহকের আবেদন পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
প্রায় তিন বছর গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকার পর গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী আবার নতুন করে আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগের অনুমোদন দেন। তবে ২০১০ সালে সংযোগ বন্ধ হওয়ার পর এ তিন বছরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে প্রায় দেড়লাখ গ্রাহক
বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সহযোগিতায় অবৈধ সংযোগ নেন।
এদের মধ্যে ৫৭ হাজার ৪১৪ জন গ্রাহক গত অর্থবছরে তিতাসের একাউন্টে প্রায় ১১৭ কোটি টাকা বিলও জমা দেন। তবে সংযোগ অবৈধ হওয়ায় এ টাকা তিতাসের হিসাবে অসমন্বিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তবে তারা অবৈধ গ্রাহক হওয়ায় তাদের আবার এক
বছরের বিল পাঁচ হাজার ৪০০ টাকা (দুই চুলা) এবং তিন মাসের বিলের সমপরিমাণ অর্থ এক হাজার ৩৫০ টাকা জরিমানা দিয়ে স্ব স্ব জোনাল অফিস থেকে ফরম পূরণ করে স্বেচ্ছায় ঘোষণা দিতে হবে। এ ঘোষণা রেজিস্ট্রেশন হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
এর বাইরে বাকি যে অবৈধ গ্রাহকরা রয়েছেন তাদেরও সম পরিমাণ বিল ও জরিমানা দিয়ে ঘোষণা দিতে হবে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, যে ৫৭ হাজার গ্রাহক এতোদিন গ্যাস বিল দিয়ে এসেছেন তাদের ঠিকানা পেট্রোবাংলার কাছে আছে।
তিতাসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, অনেক গ্রাহকের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদকাল প্রায় শেষের পথে। এ অবস্থায় ঘোষণা দিলে পরবর্তীকালে হয়রানিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
তিতাসের অফিসে প্রতিনিয়ত অনেকেই জানতে আসছেন বৈধ হওয়ার আবেদন করা ঠিক হবে কি না। কেউ কেউ আশস্ত হলেও অনেকেই তাদের কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না।
তারা মনে করছেন, সরকার পরিবর্তন হলে নানা আইনি মারপ্যাঁচে পড়তে পারেন।
তার ওপর কিছু কর্মচারী এ নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছেন। যাতে তারা বৈধ না হন।
সব মিলিয়ে একটি খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তিতাসের কর্মচারীদের নেতিবাচক প্রচারণার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, যতো অবৈধ গ্যাস সংযোগ থাকবে তাতে অসাধু কর্মচারীদের লাভ বেশি হবে। তাই তারা চান না তাদের অবৈধ আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘এছাড়াও বিভিন্ন সুযোগ সন্ধানী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহারকারীদের নানা রকম ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। নানা রকম মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন। এসব মিলে অবৈধ সংযোগ বৈধ করতে ভয় পাচ্ছেন গ্রাহকরা।
রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকার অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারী রাসেল বাংলানিউজকে জানান, কিছুদিন হলো তিতাসের এক কর্মচারী তার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। একই সঙ্গে সংযোগ বৈধ না করার জন্য বলেন। ফলে তিনি এ নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। তাকে বলা হয়েছে, এবার টাকা দিলে বিপদে পড়তে পারেন। প্রসেস করতে করতে সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। যদি বিএনপি সরকার আসে তাহলে আম-ছালা দু’টোই যাবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুরের কানেও এমন অভিযোগ এসেছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছেও এমন তথ্য ও প্রমাণ রয়েছে যে কয়েকজন কর্মকর্তা গ্রাহকদের এমন কথাও বলেছেন আগামী দুই মাসের মধ্যে গ্যাস সংযোগ
আবার বন্ধ করে দেওয়া হবে। কেউ কেউ আবার সংযোগের জন্য ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত চেয়েছেন। অনেকে আবার রাজনৈতিক কারণেও নানা মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন’’।
তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে তিতাসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার সহযোগিতায় কিছু অবৈধ সংযোগ দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখন তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি জানান, প্রায় এক হাজার ৮৬১টি আবাসিক ও ১২০ শিল্পে নিষেধাজ্ঞার সময় সংযোগ প্রদানের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া কিছু জায়গায় পুরোনো বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার সংযোগ অন্য স্থানে স্থানান্তর করারও অভিযোগ রয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জোর দিয়ে বলেন, যারা বৈধ হওয়ার আবেদন করবে, তাদের কোনো হয়রানি করা হবে না।
আর যারা আবেদন করবে না। সময় শেষ হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানে নামবে পেট্রোবাংলা। যতো বড় শক্তিশালীই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি নেতিবাচক প্রচারণা বন্ধে মিডিয়ার সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৬ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৩
ইএস/সম্পাদনা: শিমুল সুলতানা, অ্যাক্টিং কান্ট্রি এডিটর eic@banglanews24.com