রাজশাহী: গত দুই রাত ধরে রাজশাহীতে স্বস্তিতে ঘুমোতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। ঘড়িতে রাত ১১টা বাজতেই ঘরের বৈদ্যুতিক পাখা প্রাণহীন।
সারাদিনের খরতাপ আর তীব্র গরমে ওষ্ঠাগত নগরজীবন রাতে আরও অসহনীয় হয়ে উঠছে। প্রচণ্ড গরমে ঘুমাতে না পেরে মানুষ বাড়ির ছাদ, রাস্তা ও খোলা মাঠে বসে রাত কাটাচ্ছেন। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভও বিরাজ করছে।
গত এক সপ্তাহে রাজশাহীতে বিদ্যুতের এ সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নগরজুড়ে বিদ্যুতের লুকোচুরিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। সারারাত বিদ্যুৎহীন। আবার দিনেও চলছে টানা লোডশেডিং।
ফলে দিনের বেশিরভাগ সময় নগরবাসীকে কাটাতে হচ্ছে লোডশেডিংয়ে। পিক আওয়ারে নগরীর প্রায় এলাকাতেই একটানা দু থেকে তিন ঘণ্টার লোডশেডিং হচ্ছে। সন্ধ্যা নামার পর অধিকাংশ এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে।
দিনরাত সমানতালে বিদ্যুতের এ আসা-যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে নগরবাসী। চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে নগরীর প্রত্যাহিক জীবন।
রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চারটি সাব-স্টেশনের মাধ্যমে নগরজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এর মধ্যে তালাইমারী সাব-স্টেশন থেকে জাতীয় গ্রিডে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
এ কারণে ওই সাব-স্টেশনের অন্তর্গত এলাকায় একবার লোডশেডিং হলে তা ফিরে আসতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তাই ওইসব এলাকার গ্রাহকেরা প্রতিনিয়ত হয়রানি পোহাচ্ছেন।
নগরীর আসাম কলোনী, শালবাগান, কোর্ট, লক্ষ্মীপুর, মিয়াপাড়া, সাগরপাড়া, শিরোইল, টিকাপাড়া, দোসর মণ্ডলের মোড়, বালিয়াপুকুর, ধরমপুর, রুয়েট ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিদ্যুতের সঙ্কট চরমে উঠেছে। এ ছাড়া পিডিবির সাব-স্টেশনগুলোরও একই অবস্থা।
রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুর রউফ বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি উপকেন্দ্র এবং এলাকায় স্থাপিত ট্রান্সফর্মারগুলো প্রটেকশন বা নিরাপদে রাখার জন্য উন্নত প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
এগুলো এত বেশি স্পর্শকাতর যে কোনো দুর্যোগ, অতিরিক্ত লোড, ভোল্টেজের ওঠানামা এবং অল্প ঝড়ো হাওয়ার ছোঁয়াতেই নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রিপ করে। অর্থাৎ মেইন সুইচ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণেও লোডশেডিং হচ্ছে।
রাজশাহী উত্তরাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এ এম মাসুদ আল ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুৎ ঘাটতির এ সমস্য জাতীয়ভাবেই। এখানে তাদের করার কিছু নেই।
জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় নগরীতে লোডশেডিং হচ্ছে। এ মুহূর্তে নগরীতে বিদ্যুতের চাহিদা ৬৪ মেগাওয়াট। সেখানে কোনো কোনো দিন সরবরাহ ৪৮/৪৫ বা এর নিচে থাকছে।
তার ওপর প্রতিরাতে নগরীতে প্রায় সাত হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জ করা হচ্ছে। এতে মাত্রারিক্ত চাপ পড়ছে বিদ্যুতের চাহিদায়। এ কারণে রাতে অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও বিদ্যুতের লোডশেডিং কমছে না। বরং উল্টো বাড়ছে। তবে সরবরাহ বাড়লে সমস্যা কমবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময় ১৭১৯ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৩
এসএস/সম্পাদনা: হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর/ সাব্বিন হাসান