ঢাকা: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেছেন,শহরের একজন পাইপ লাইন গ্যাস ব্যবহারকারীকে মাসে দিতে হয় মাত্র ৪৫০ টাকা। অন্যদিকে গ্রামে প্রাকৃতিক জ্বালানি সংগ্রহ ও ক্রয় করতে গ্রামের লোককে খরচ করতে হচ্ছে ৫৫০ টাকা।
তিনি বলেন, “দেশের অল্প কিছু শহরের মানুষ পাইপ লাইনের গ্যাস ব্যবহার করেন। কিন্তু দেশের ৯৪ শতাংশ মানুষ পাইপ লাইনের গ্যাস ব্যবহার করে না। দেশের বেশিরভাগ মানুষ অনেক বেশি টাকা ব্যয় করছে জ্বালানির জন্য। অথচ শহরের মানুষ একদম প্রায় বিনামূল্যে পাইপ লাইনের গ্যাস থেকে জ্বালানি চাহিদা মেটাচ্ছেন। এ ব্যবধান কমিয়ে আনতে এলপিজি গ্যাসের ব্যাবহার বৃদ্ধি করতে হবে। ”
রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের কাউন্সিল হল মিলনায়তনে ‘এলপিজি : বাংলাদেশের বিকল্প জ্বালানি’ শীর্ষক এক সেমিনারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ম. তামিম এ কথা বলেন।
ড. ম. তামিম বলেন, “শহরের গ্যাস ব্যাবহারকারীদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত। মধ্যবিত্তের কণ্ঠস্বরে জোর থাকায় কমদামে তাদের গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। ”
তিনি বলেন, “কোনোভাবেই আবাসিক গ্রাহক সংযোগ বাড়ানো উচিত না। এর বিপরীতে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্মত এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সরকারকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। ”
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ড. ম. তামিম বলেন, “ঢাকা শহরের মধ্যবিত্তরা বাড়িতে মাত্র ৪৫০ টাকায় পাইপ লাইনের গ্যাস ব্যবহার করছেন। অথচ প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর দেশের সব মানুষের সমান অধিকার রয়েছে। শুধুমাত্র একটি শ্রেণীর এ গ্যাসের ব্যাবহার অপরাধ।
তিনি বলেন, “গ্রাহকের জন্যে আবাসিক পাইপ লাইনের গ্যাসের দাম কমপক্ষে এক হাজার টাকা করা উচিত। এ অর্থ থেকে এলপিজির জন্য ভর্তুকি দেওয়া উচিত। নতুন করে আর কোনো পাইপ লাইনে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য গ্যাস দেওয়া একদমই উচিত না। ”
ড. তামিম আরও বলেন, “মধ্যবিত্তের আর্থিক সক্ষমতা ছাড়া এলপিজি বাজার বৃদ্ধি হবে না। বর্তমানে দেশে এক লাখ টন এলপিজি গ্যাস বছরে গ্রাহকেরা ব্যবহার করেন। মধ্যবিত্তের আর্থিক ক্ষমতা বাড়লে এ পরিমাণ বেড়ে বছরে ৫ লাখ মেট্রিক টন হতে পারে। ”
তিনি বলেন, “দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস অফুরন্ত নয়। আবাসিক গ্রাহকরা রান্নার জন্য পাইপ লাইনে যে গ্যাস ব্যবহার করছেন জাতীয় অর্থনীতিতে তার আর্থিক মূল্য নেই। দেশে রান্নার কাজে ৩২ মিলিয়ন গ্রাহকের মধ্যে মাত্র ২ মিলিয়ন মানুষ এলপিজি ব্যবহার করেন। যদি পাইপ লাইনের বদলে এলপিজি ব্যবহার করা যায় তাহলে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। ”
সেমিনারে প্রধান অতিথীর বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, “বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। এ জন্য মানুষের মধ্যে এলপিজির ব্যাপারে প্রচার করতে হবে। কারণ আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস অফুরন্ত নয়। আমাদের বিকল্প জ্বালানির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। ”
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পেট্টোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বলেন, “কোনো দেশ শুধুমাত্র প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভর করতে পারে না। গ্যাসের ব্যবহার ধীরে ধীরে সলিড ও লিকুয়েড ফুয়েলের দিকে যেতে হবে। এসব কিছু নির্ভর করে সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর। ”
তিনি বলেন, “এলপি গ্যাস আমরা পেট্টোবাংলা উৎপাদন করি। সাড়ে বারো কেজি বোতলের মূল্য ৭শ টাকা। কিন্তু এটা বাজারে বিক্রি হয় ১৫’শ টাকা। মাত্র সামান্য সংখ্যক মানুষ পাইপ লাইন গ্যাসের সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ তা পারে না। অথচ প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর সবার মালিকানা রয়েছে। কিন্তু শহরের অল্প কিছু মানুষ খুবই কমদামে পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহার করছেন তা গ্রহণযোগ্য না। ”
ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং, বাংলাদেশ (আইইবি) এর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী অধ্যাপক আব্দুর রশীদ সরকারের সভাপতিত্বে সেমিনারের বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন আইইবির প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী অধ্যাপক ম. শামীম জেড বুসনিয়া। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন আইইবির সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ কাইয়ুম।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৩
এমএন/সম্পাদনা: প্রভাষ চৌধুরী, নিউজরুম এডিটর