ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিস্ফোরণে ৪ জন নিহত হলেও থামেনি অবৈধ গ্যাস সংযোগ

এ কে এম রিপন আনসারী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১৩
বিস্ফোরণে ৪ জন নিহত হলেও থামেনি অবৈধ গ্যাস সংযোগ

গাজীপুর: তিতাস গ্যাসের অবৈধভাবে দেওয়া অপরিকল্পিত সংযোগ থেকে সৃষ্ট বিস্ফোরণে একই পরিবারের চারজন নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় বাবা-মা সাথে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে মৃত্যুবরণ করার ঘটনায় শূন্য হয়ে গেছে একটি পরিবার।

কিন্তু থেমে নেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানের তৎপরতা।

একই পরিবারের ৪টি লাশ থামাতে পারছে না সংঘবদ্ধ ওই চোরাই চক্রকে। এ অবস্থায় দ্রুত গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য রাজপথে মিছিল হয়েছে।  

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার বেলা ১১টার দিকে গাজীপুর তিতাস গ্যাস অফিসের সামনে বিআইডিসি রোডে দ্রুত গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য মিছিল করেছে তিতাস গ্যাসের ঠিকাদাররা। অবৈধ সংযোগ থেকে সৃষ্ট বিস্ফোরণে একই পরিবারের চারজন নিহত হওয়ার পর তিতাস কর্তৃপক্ষ গ্যাস সংযোগ প্রদানে কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিতাস গ্যাসের ঠিকাদাররা মিছিল করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৩০ সেপ্টেম্বর, সোমবার রাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর এলাকায় জনৈক আবুল হোসেনের বাসার ভাড়াটিয়া সুভাষ চন্দ্রের রান্না ঘরে কাজ শেষেও গ্যাসের চুলা খোলা রেখেই তারা ঘুমিয়ে পড়েন। এতে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ থাকায় বাসার সবগুলি রুমে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে।

রাত ৩টার দিকে সুভাষ চন্দ্র ঘুম থেকে উঠে ম্যাচ দিয়ে সিগারেট জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো ঘরে আগুন ধরে যায়। এ সময় আগুনে সুভাষ পাল (৫৫), তার স্ত্রী রীনা চন্দ্র পাল (৪৫), মেয়ে রুমকি চন্দ্র পাল (১৫) ও ছেলে রিন্টু চন্দ্র পাল (২৮) এবং সুমন পাল (১৭) অগ্নিদ্বগ্ধ হন।

পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন। শনিবার পর্যন্ত সুমন পাল ব্যাতীত ওই পরিবারের বাকি চারজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে মারা যান। আহত ও একমাত্র জীবিত ওই পরিবারের আরেক সদস্য সুমন পাল (১৭) এখনো মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছেন।  
 

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ৮ হাজার আবেদনকারীর বিপরীতে ৫৪ হাজার আব‍াসিক গ্যাসের চুলার জন্য আবেদন করা হয়েছে। সম্প্রতি গাজীপুর জেলায় হাজার হাজার তিতাস গ্যাসের চুলা অবৈধভাবে বসানো হয়েছে। প্রতিটি চুলার বিপরীতে নূন্যতম ৩০ হাজার টাকা উৎকোচ নেওয়া হয়েছে। একটি ডবল চুলার জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় বলে জানায় সূত্র।

সূত্র মতে, একটি বহুতল বাসায় অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ লেনদেন হয়েছে নূন্যতম ২ লাখ টাকা। দিনে-রাতে এই ধরনের অবৈধ গ্যাস সংযোগের উৎসব চলছে গাজীপুরে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র তিতাস গ্যাসের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গাজীপুর মহানগরের প্রায় সকল জায়গায়, টঙ্গী, কালিয়াকৈর, শ্রীপুরসহ সারা জেলায় এখন অবৈধ তিতাস গ্যাস সংযোগের ব্যবসা চলছে। অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা কেটে খানা-খন্দের সৃষ্টি করে অবকাঠামোর ক্ষতি করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। একটু বৃষ্টি হলেই স্বাভাবিক খানা-খন্দের সঙ্গে অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে সৃষ্ট গর্তগুলোও পানিতে একাকার হয়ে যায়। ফলে সৃষ্টি হয় কৃত্তিম জলাবদ্দতা।

গোপন সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ গ্যাস সংযোগের ব্যবসা করে তিতাস গ্যাসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে লাভবান হচ্ছে অবৈধ সংযোগ দেওয়া চক্র। আর এ অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানের যেন উৎসব চলছে।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অবৈধ সংযোগ অপরিকল্পিতভাবে স্থাপন করায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে যেকোন সময় বড় ধরনের বিস্ফোরণের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

তিতাস গ্যাসের জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. ওয়াহেদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি তিনি। তার দায়িত্বে থাকা জেলাগুলোতে কতগুলো সংযোগ আছে কাগজ না দেখে জানাতে পারবেন না বলে ফোন সংযোগ কেটে দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৩
আরএ/এজেএফ/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।