ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আইনি গণশুনানি!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১২ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৪
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আইনি গণশুনানি!

ঢাকা: মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আইনি প্রক্রিয়ার গণশুনানি। সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ২৩.৫০ শতাংশ।



আর সবচেয়ে কম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ৮.৫৯ শতাংশ।
 
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কমিশনের সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
 
মঙ্গলবার প্রথমদিনে সকাল ১০টায় প্রথম শুনানি গ্রহণ করা হবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) প্রস্তাবের ওপর। বিপিডিবি গ্রাহক পর্যায়ে ১৫.৫০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে।
 
বিপিডিবির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে ১১.৯৫ শতাংশ সিস্টেম লসসহ তাদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য দাঁড়াচ্ছে ৬.৯৩ টাকা। আর বিক্রয় করছে ৬ টাকা দরে। দাম বাড়ানো না হলে চলতি অর্থবছরে বিপিডিবির প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।
 
এদিন বেলা আড়াইটায় ওজোপাডিকোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি গ্রহণ করা হবে। ২১ জেলার ২০ উপজেলা নিয়ে নবগঠিত বিতরণ কোম্পানিটি সবচেয়ে কম গড়ে ৮.৫৯ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তারা দাবি করেছে, সরকারের কাছে থেকে ৪.৬৫ টাকা দরে বিদ্যুৎ কিনছে।
 
এরপর পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ’র (পিজিসিবি) হুইলিং চার্জ যোগ করলে দাঁড়াচ্ছে ৫.২৩ টাকা। এর সঙ্গে বিতরণ ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে প্রতি ইউনিটের মূল্য দাঁড়াচ্ছে ৬.৪৪ টাকা।
 
এতে করে তাদের চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ৩৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। দাম বাড়ানো না হলে চলতি অর্থবছরে ৯১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা লোকসান দিতে হবে।
 
দ্বিতীয় দিন ৫ মার্চ ডিপিডিসি’র প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি গ্রহণ করবে বিইআরসি। ডিপিডিসি সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ সাড়ে ২৩ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। ডিপিডিসি’র প্রস্তাবে বলা হয়েছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৫.৩২ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে।
 
ক্রয় মূল্যের সঙ্গে পিজিসিবি’র হুইলিং চার্জ ২২ পয়সা, ৯.৫৫ শতাংশ সিস্টেম লস, আয়কর ও পরিচালন ব্যয় ১.৫৫ টাকা যোগ করলে খরচ দাঁড়ায় ৭.৯৩ টাকা। কিন্তু প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করা হচ্ছে, ৬.৬৬ টাকা দরে। এতে করে প্রতি ইউনিটে লোকসান দিতে হচ্ছে ১.২৭ টাকা।
 
কোম্পানিটি ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২০৮ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। দাম বাড়ানো না হলে ৮৭৬ কোটি টাকা লোকসান হতে পারে।
 
বুধবার বিকেলে ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকোর) প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি গ্রহণ করা হবে। কোম্পানি ১৫.৯০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে।

ডেসকো তার প্রস্তাবে বলেছে, ক্রয়মূল্য ও অন্যান্য খরচসহ প্রতি ইউনিটের মূল্য পড়ছে ৭.১৪ টাকা। আর বিক্রি করা হচ্ছে, গড়ে ৬.৫৮ টাকা দরে।
 
দাম বাড়ানো না হলে চলতি অর্থবছরে ১৪৯ কোটি টাকা লোকসান দিতে হবে। দাম বাড়ানো না গেলে ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ডেসকো গড়ে ১৫.৯০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের ব্যবহৃত বিদ্যুতের ওপর ৩১.৭৭ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে।
 
প্রস্তাবে দেখা গেছে, ৩০১ ইউনিট থেকে ৪০০ ইউনিট ব্যবহারকারীর জন্য ৩১.৭৭ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আর ৪০০ ইউনিটের ওপরে মাত্র ৬.৫২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। একে একেবারেই ‘অস্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
শেষ দিন ৬ মার্চ গ্রহণ করা হবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে। আরইবি প্রস্তাব ১২.৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম দরে বিদ্যুৎ বিক্রির কারণে আরইবি এ পর্যন্ত ২ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।
 
আরইবির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তাদের একটি বড় অংশই হচ্ছে আবাসিক গ্রাহক, যা মোট গ্রাহকের ৮৬ শতাংশ। যাদের কাছ থেকে গড়ে ৩.৭৩ টাকা দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু এই শ্রেণীর গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দিতে গড়ে ব্যয় হচ্ছে ৪.২৬ টাকা। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো না হলে চলতি অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬৬২ কোটি টাকা।
 
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, প্রস্তাব দিলেই হবে না। বিইআরসির টেকনিক্যাল কমিটি মূল্যায়ন করে দেখবে তাদের প্রস্তাবের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু।
 
এছাড়া গণশুনানিতে কোম্পানির প্রতিনিধি ও গ্রাহকদের মুখোমুখি করা হবে। তারা তাদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরবেন। যুক্তি ও টেকনিক্যাল বিষয় পর্যালোচনা করেই আদেশ দেবে বিইআরসি।
 
৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি সংসদেও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পক্ষে সাফাই গেয়েছেন তিনি। দাম বাড়ছে কী বাড়ছে না, সরাসরি কোনোটা না বললেও প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দাম বাড়লে জনগণের খুব বেশি সমস্যা হবে না।
 
সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নকারী স্বতন্ত্র সংসদকে অন্য দেশে কী দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হচ্ছে, সে দিকে তাকানোর জন্য উপদেশ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ তো দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৪০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।