ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

‘সরি, চা খাওয়াতে পারব না!’

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৪
‘সরি, চা খাওয়াতে পারব না!’

ঢাকা: প্রায় দিনই না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে মেয়েটি। খাবার দিতে না পেরে অনেক দিন বসে বসে কেঁদেছি।

প্রায় দিনই দুপুরের খাবার খেতে হচ্ছে সন্ধ্যার পর।  
 
গ্যাস নিয়ে কথা উঠতেই এমন দুর্ভোগের কথা জানান রাজধানীর মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেড’র ৮ নম্বরের (১৩০/৩০) বাসিন্দা শাহনাজ হক।
 
তিনি বলেন, ‘এই সংকট চলছে ৩ মাস ধরে। শুনেছিলাম শীত কমে গেলে নাকি গ্যাস সংকট কেটে যাবে। শীত তো চলে গেছে কবেই, ফ্যান ছাড়া ঘুমানো যায় না। কিন্তু গ্যাস সংকট তো আর দূর হচ্ছে না। ’
 
শাহনাজ হক বাংলানিউজকে জানান, সকাল ৭টায় চলে যায় গ্যাস। কোনো কোনো দিন আরও আগে। বিকেল ৪টার দিকে কিছু সময়ের জন্য গ্যাসের দেখা মেলে। কিন্তু চাপ থাকে একেবারেই কম। যা দিয়ে রান্না করা যায় না বলা চলে।
 
সত্যি বলতে কি গ্যাস পাওয়া যায় রাত ১১ টার পর। কোনো কোনো দিন ১২টার পর পুরোমাত্র্রায় পাওয়া যায়। বলতে বলতে হঠাৎই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সরকার বড় বড় কথা বলে। এই করেছে সেই করেছে। এটাই কি তার নমুনা।
 
‘গ্যাস সংকট জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে’ মন্তব্য করে শাহনাজ বলেন, ‘খাবার রান্নার জন্য মধ্যরাত পর‌্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। সবকিছু তৈরি করে গ্যাসের জন্য বসে থাকতে হয়। কখন আসবে তারপর রান্না হবে। ’
 
রান্না শেষ করতে করতে কখনো কখনো রাত ২ টা পার হয়ে যায়। বড়রা না হয় এক রকমটা মেনে নিয়েছে। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটিকে(রুকাইয়া জামান, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী)নিয়ে হয়েছে বিপদে।
 
প্রায় দিনই না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে সে। মধ্যরাতে খাবার তৈরি করার পর ডেকেও আর তাকে তোলা যায় না। আর যদি ওঠেও ঠিকমত খায় না। আবার সকাল ৭টায় স্কুল-সময়ে ঘুম থেকে উঠতে পারে না।
 
ছোট্ট মেয়েটির এহেন ভোগান্তির জন্য অনেকদিন বসে বসে কেঁদেছেন বলেও জানালেন শাহনাজ হক।
 
তিনি বলেন, একদিন এক আত্মীয় বেড়াতে এসেছিলেন বাসায়। গ্যাস এলেই রান্না করে খাওয়াবেন—এ আশায় বসে ছিলেন। কিন্তু বিধি বাম, রাত ১২টা পার হয়ে যায় গ্যাস আর আসে না। ততক্ষনে খাবার হোটেলও বন্ধ হয়ে গেছে।
 
শেষ পর‌্যন্ত ফুটপাতের দোকান থেকে রুটি ও কলা আনিয়ে অতিথিকে খাইয়ে ঘুমাতে যান তারা। সে দিনের সেই লজ্জার কথা মনে হলে এখনও খুব খারাপ লাগে তার।
 
তিনি বলেন, মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেড’র পুরো এলাকায় চলছে এই অসহনীয় অবস্থা। কোনো বাড়িতেই একবারের বেশি রান্না হয় না। রাতে খাবার তৈরি হয়। সেই খাবার রেখে দেন ফ্রিজে। তা দিয়েই চালাতে হয় সারাদিন।
 
শনিবার দুপুর ৩টার দিকে কথা হয় এই গৃহবধূর সঙ্গে। এসময় সঙ্গে ছিলেন তার স্বামী ব্যবসায়ী শাহীন মিয়াও। কথা শেষ হতেই বলে ওঠেন: ‘ভাই, কষ্ট করে এতদূর পর‌্যন্ত খোঁজ নিতে এসেছেন। ভেতরে বসেন অন্তত এক কাপ চা খেয়ে যান। ’
 
ড্রয়িং রুমে বসতে দিয়ে ভেতরে চলে যান শাহনাজ হক। কয়েক মিনিট পরেই পিরিচে করে বিস্কিট নিয়ে প্রবেশ করেই বলে ওঠেন, ‘সরি ভাই, চা খাওয়াতে পারছি না। গ্যাস নেই। ’
 
এরপর ৮ নম্বর রোডের বাসিন্দা (বাসা ১০৬) রাজিব মিয়াও গ্যাসের চরম সংকটের কথা জানান। তিনি বলেন, অনেকেই এখনও সিলিন্ডার রেখেছে বাসায়। বলতে গেলে সিলিন্ডার দিয়েই চলছে রান্নার কাজ। কিন্তু তিতাস গ্যাসকে ঠিকই বিল দিতে হচ্ছে।
 
এভাবে তিতাসের সব চুরি ঢেকে যায়। প্রায় ১৭ লাখ আবাসিক গ্রাহককে  গ্যাস না দিয়ে ঠিকই বিল নিচ্ছে তিতাস। তাদের বার্ষিক রিপোর্ট দেখলেও বিষয়টি বুঝতে পারবেন। তারা যে পরিমাণ গ্যাস কিনছে তার চেয়ে বিক্রি করছে অনেক বেশি-- মন্তব্য করেন এই ভুক্তভোগি।
 
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাজাহান মিয়া বাংলানিউজকে জানান, ‘মূলত চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক ১ হাজার ৫‘শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। আর চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৯‘শ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো।
 
তিনি বলেন, বিগত সময়ে কখনই একসঙ্গে সার ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস দেওয়া হয় নি। রেশনিং করে দেওয়া হতো। এবার একসঙ্গে দেওয়ায় সংকট বেড়েছে।
 
‘কবে নাগাদ সংকট দূর হবে?’-- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বলা কঠিন। আশুগঞ্জ ও এলেঙ্গায় কম্প্রেসার স্থাপন করা হচ্ছে, চলতি মাসেই একটির উদ্বোধন হবে। কম্প্রেসার স্থাপন হলে সংকট কিছুটা দূর হবে।

অনেকবার কল দিলেও তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদ ইসলাম ফোনকল রিসিভ করেন নি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।