ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুৎ সরবরাহ উন্নতি

উত্তরাঞ্চলে বোরোর বাম্পার ফলনের আশা

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৪
উত্তরাঞ্চলে বোরোর বাম্পার ফলনের আশা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম / ফাইল ফটো

উত্তরাঞ্চল থেকে: অতীতের যেকোনো বছরের তুলনায় এবার উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো দেখা গেছে। তবে সরকার যেভাবে বলছে ততটা ভালো নয়।

লোডশেডিং রয়েছে সহনীয় মাত্রায়, এতে কৃষকদের জোরালো আপত্তি নেই।
 
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সংসদে দাঁড়িয়ে একাধিক দিন বলেছেন দেশে কোনো লোডশেডিং নেই। তবে উত্তরাঞ্চল ঘুরে প্রতিমন্ত্রীর কথার সঙ্গে সামান্য অমিল পাওয়া গেছে। দিনে রাতে দু’ থেকে চার বার পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।
 
তবে রাত ১১টার পর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছেন বোরো চাষীরা। এতেই তারা সন্তুষ্ট। যে কারণে বোরোর বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।
 
অন্যান্য বছরে এ সময় দিনে রাতে ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের শিকার হতেন বোরো চাষীরা। এ বছর সেই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়ায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
 
দিনাজপুর সদর ‍উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বোরো চাষী পরেশ চন্দ্র বাংলানিউজকে জানান, লোডশেডিং নেই, একথা পুরোপুরি সঠিক নয়। লোডশেডিং রয়েছে। তবে তা আমরা মেনে নিয়েছি। এতে বোরো সেচে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
 
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ভেণ্ডাবাড়ি গ্রামের বোরো চাষী বাবলু মিয়া বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, কোনো কোনো দিন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। আমরা মেনে নিয়েছি। এতে বোরো সেচে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
 
জাফরপাড়া গ্রামের বোরো চাষী আলহাজ্ব শাহানুর ইসলাম লেলিন বাংলানিউজকে জানান, অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ভালো। লোডশেডিং কমে যাওয়ার পাশাপাশি ভোল্টেজ পরিস্থিতিও উন্নত হয়েছে।
 
আগের মৌসুমগুলোতে লো-ভোল্টেজের কারণে সেচের মটর চালানো যেতো না। যখন তখন মটর জ্বলে যেতো, এবার সেই সংকট নেই। বিদ্যুৎ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে কোনো ক্ষোভ নেই বলে দাবি করেন শাহানুর ইসলাম লেলিন।

রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার দেওয়ান মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে ডে পিকে সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে সাড়ে ৩টায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ২৮ মেগাওয়াট। ওই সময়ে সরবরাহ পাওয়া গেছে ২৫ মেগাওয়াট।
 
আর সান্ধ্যকালীন পিক আওয়ার (রাত সাড়ে ৮টায়) বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৩১ মেগাওয়াট। ওই সময়ে কোনো লোডশেডিং ছিল না। সেচ মৌসুমের শুরু থেকেই রাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও জানান দেওয়ান মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন।

বিগত বছরগুলোতে সেচে সংকটের কারণে অতীতে বোরোর ফলন ব্যহত হতো। এবার সেই সংকট না থাকায় বোরোর বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও।

উত্তরাঞ্চলের মাঠে মাঠে এখন সবুজের সমারোহ। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। কিছু কিছু জমিতেই ধানের গাছ থেকে শীষ উঁকি দিতে শুরু করেছে, আবার কিছু জমিতে ধানের শীষে হলদে আভা চলে এসেছে। চাষীরা ধান কাটার মহা উৎসবে মেতে উঠতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক (হেডকোয়ার্টার) আলী আজম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে উত্তরের ৮ জেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ লাখ ৭০ হাজার ২ হেক্টর। আর অর্জিত হয়েছে ৭ লাখ ৭১ হাজার ৪৬১ হেক্টর।
 
এ অঞ্চলের জমির উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে হেক্টর প্রতি প্রায় ৪ মেট্রিক টন চাল। চলতি মৌসুমে ৩১ লাখ ১১ হাজার ১২৪ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানান আলী আজম।

তিনি জানান, অন্যান্য যেকোনো বছরের তুলনায় এ বছর বিদ্যুৎ সরবরাহ ভালো। আর সার কীটনাশক সরবরাহ পরিস্থিতিও স্বাভাবিক ছিল। যে কারণে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা করা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুহু রুহুল্লাহ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন জনিত কারণে দেশে কোথাও কোনো লোডশেডিং নেই। কোথাও কোনো লোডশেডিং হয়ে থাকলে তা স্থানীয়ভাবে বিতরণ সংকটের কারণে হয়ে থাকতে পারে।
 
তিনি জানান, সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৫ হাজার ৫২৬ মেগাওয়াট। আর রাত ৯টায় সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৬ হাজার ৭৩৫ মেগাওয়াট। চাহিদার সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। চাহিদা আরও বাড়লে উৎপাদন বাড়িয়ে দেওয়া হবে। সে সক্ষমতা সরকারের রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।