ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

ভোলায় ৯ মাস ধরে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট বিকল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৪
ভোলায় ৯ মাস ধরে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট বিকল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভোলা: ভোলার গ্যাস ভিত্তিক ৩৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্টটি গত ৯ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ইতোপূর্বে কয়েকবার প্লান্টটি চালুর কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত চালু করা সম্ভব হয়নি।



ফলে চরম বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন জেলার ১০ লাখ মানুষ।
 
ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ছোট বড় কারখানার উৎপাদন স্থবির হয়ে পড়েছে। জন-জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও গ্রাহকদের থেকে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১২ জুলাই ভোলার গ্যাস ভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্টটি বাণিজ্যিকভাবে শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। কিন্তু পুরোনো জেনারেটর স্থাপনের কারণে প্লান্টটি শুরু থেকেই বার বার বিকল হয়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে গ্রাহকদের।

গত ৪৫ মাসের মধ্যে ২০ মাসই এ বিদ্যুৎ প্লান্টটি বিকল ছিলো। সর্বশেষ গত বছরের ১০ আগস্ট প্লান্টটি বিকল হওয়ার নয় মাস পরও জেনারেটরটি সচল করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, প্লান্টটি বন্ধ থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় জাতীয় গ্রিডের বরিশাল ও পটুয়াখালী থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ভোলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা ভোলার মানুষ। ফলে বিদ্যুতের লো-ভোলটেজ আর লোডশেডিং এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

কলেজ ছাত্রী মৌরী বলেন, দিন-রাত মিলিয়ে চার ঘন্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। এক রকম অন্ধকারেই কাটাতে হচ্ছে আমাদের।

স্কুল শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে আবার লোডশেডিং। গত ৯ মাস ধরে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন এই এলাকার মানুষ।

ডায়াগনস্টিক ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, এখানকার সব মেশিনই বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে জেনারেটর দিয়ে সাময়িক সমস্যা সমাধান করা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই রোগীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

সংবাদকর্মী মনিরুজ্জামান মহিন বলেন, গ্যাস ভিত্তিক প্লান্ট মেশিন চালু হওয়ায় ভোলাবাসী মনে করেছিলেন ভোলার বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়েছে। কিন্তু ঘটছে তার ব্যতিক্রম। পাওয়ার প্লান্ট মেশিন স্থাপন করা হলেও আজও বিদ্যুৎ সুবিধার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদার মাত্র চার ভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। তা দিয়ে জেলা শহরে নাম মাত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হলেও গ্রাম-গঞ্জ এমনকি উপজেলা শহরগুলোতে দিনের অধিকাংশ সময়ই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে।

এ কারণে ওই সব এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধের পাশাপাশি বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল সব কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে।
 
এ ব্যাপারে ভোলার পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির ব্যবস্থাপক সোহরাব আলী বিশ্বাস বলেন, ভোলা জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ৩৪/৩৫ মেগাওয়াট। কিন্তু জাতীয় গ্রিডের বরিশাল এবং পটুয়াখালী থেকে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১২/১৩ মেগাওয়ার্ট। যা দিয়ে সমগ্র জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে। তাই উপজেলাগুলোতে লোডশেডিং হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলী বলেন, গ্যাস ভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট মেশিনটি বিকল থাকায় ভোলায় এখন বিদ্যুৎ সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেটি চালু থাকলে জেলায় বিদ্যুৎ সমস্যা থাকতো না।

এ ব্যাপারে গ্যাস ভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি ভেনচার এনার্জি রিসোর্সেস লিমিটেডের পরিচালক (কারিগরী) এটিএম নাদিরুজ্জামান বলেন, এ মাসের মধ্যেই মেশিনটি চালু হবে।
 
কর্মকর্তাদের এসব কথা শুধু আশার বাণিই থেকে যাবে নাকি বাস্তবে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে এমন প্রশ্নই এখন ভোলাবাসীর।


বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।