ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিপিসি বনাম কু্ইক রেন্টাল সিন্ডিকেট

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০১ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৪
বিপিসি বনাম কু্ইক রেন্টাল সিন্ডিকেট

ঢাকা: বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন অধ্যাদেশ ১৯৭৬ অনুযায়ী বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের জ্বালানি তেল আমদানির সুযোগ নেই। ওই অধ্যাদেশে জ্বালানি তেল আমদানি-রপ্তানি, বিপণন ও বিতরণের দায়িত্ব বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন(বিপিসি) উপর ন্যস্ত করা হয়েছে।


 
কিন্তু রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকদের জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষমতা দিতে তৎপর বিদ্যুৎ বিভাগ। ২০১২ সালের অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির একটি সিদ্ধান্তকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও এখন ২০১২ সালের সেই প্রেক্ষাপট আর নেই বলে দাবি করেছে বিপিসি।

অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত ছিলো বিপিসি যদি অপারগ হয়। তাহলে তাদের অনাপত্তি নিয়ে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল মালিকরা বিদেশ থেকে তেল আমদানি করতে পারবে। বিপিসি চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন তারা তেল সরবরাহে সক্ষম।

বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, এখন জোর করেই বিপিসির কাছে অনাপত্তিপত্র আদায় করা হচ্ছে। কুইক রেন্টাল সিন্ডিকেট নতুন করে দাবি তুলেছে বিপিসির অনাপত্তি নেওয়ার বিধানও তুলে দিতে হবে।

বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, ২০১২ সালে তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেড়ে গেলে বিপিসিকে হিমশিম খেতে হয়েছে। তখন বিপিসির তেলের মজুদ ক্ষমতা কম ছিলো। তখন বলা হয়েছিলো বেসরকারি খাতে ৫০ শতাংশ তেল আমদানির সুবিধা দেওয়ার জন্য। বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে তাদের চাহিদার ৫০শতাংশ জ্বালানি তেল আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়।

কিন্তু এখন বিপিসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে, বেড়েছে ধারণ ক্ষমতাও। আর বেসরকারি মালিকদের তেল আমদানির অনুমতি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু কর্মকর্তা উঠে পড়ে লেগেছে।

এতে একদিকে যেমন বিপিসি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারকে বাড়তি অর্থ গুণতে হচ্ছে। স্বয়ং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলামের আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমুহ পরিচালনার জন্য তেল আমদানি সংক্রান্ত সভায়। চাহিদার শতভাগ তেল বেসরকারি খাতে আমদানি করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।

কুইক রেন্টাল সিন্ডিকেটের হাতে ক্ষমতা দিতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। এতে বলা হচ্ছে বেসরকারি কোম্পানির হাতে তেল আমদানির সুযোগ দিলে বিপিসির চেয়ে কম দামে পাওয়া যাবে। এতে লাভবান হবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।

বিপিডিবি’র দাবি, বিদ্যুৎ উপাদনকারী কোম্পানিগুলো ফার্নেস অয়েল আমদানি করলে তাদের প্রতি লিটার মূল্য পড়ছে ৫৪.৭৮ টাকা। আর বিপিসিকে দিতে হচ্ছে ৬০.৯৫ টাকা।

বিপিসি দাবি করেছে, আপাতদৃষ্টিতে দাম বেশি দেখা গেলেও বিপিসির মাধ্যমে তেল আমদানিতে সরকার লাভবান হচ্ছে। কারণ বিপিসি প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের জন্য ৭ টাকা ডিউটি/ভ্যাট পাচ্ছে রাজস্ব বোর্ড। কিন্তু বেসরকারি কোম্পানিকে ডিউটি দিতে হচ্ছে না।

অন্যদিকে বেসরকারি কোম্পানি তেল আমদানি করলে ৯ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিপিসিকে কোন রকম সার্ভিস চার্জ দেওয়া হয় না। ৫৫ টাকার ৯শতাংশ সার্ভিস চার্জ প্রায় ৫টাকা ও ভ্যাট ৭ টাকা যোগ হলে দাম পড়বে প্রায় সাড়ে ৬৭ টাকা।

যেখানে বিপিসি ৬১.৯৫ টাকা দরে দিচ্ছে। এখানে ‍প্রধান বিষয় হচ্ছে রাজস্ব। যা সরকারের ঘরেই যাচ্ছে। তাহলে বিপিডিবি বা বিদ্যুৎ বিভাগের আপত্তি কেন। এর কোন যুক্তি খুজে পাচ্ছে না বিপিসি।

বিপিসির চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বিপিসি প্রতি লিটার তেল বাবদ ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছে ৭টাকার মতো। কিন্তু বেসরকারি মালিকদের ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হচ্ছে না। সরকার যদি বিপিসিকেও অনুরূপ সুবিধা দেয় তাহলে তারাও প্রতি লিটারে কমপক্ষে ৭ টাকা কমে দিতে পারবে।
ভ্যাট ফ্রি করে দেওয়া হলে বিপিসির ফার্নেস অয়েলের দাম পড়বে ৫৪ টাকার মতো।

একপ্রশ্নের জবাবে বিপিসির চেয়ারম্যান বাংলানিউজকে জানান, বিপিসি এখন ফার্নেস অয়েল সরবরাহে সক্ষম। যা তিনি আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় জানিয়েছেন।
বিপিসির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফার্নেস অয়েলে কিছুটা মুনাফা করছে বিপিসি। এতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি মুনাফার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ শুধু একদিকে দেখছে। সবদিক হিসেব করছে না। এতে রাষ্ট্রই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
 
বিপিসি সূত্র মতে, কুইক রেন্টাল মালিকরা তেল আমদানির নামে বিদেশে টাকা পাচার করেন, তাহলে সরকারের কিছুই করার থাকবে না। এমনকি তেলের দাম বেশি দেখিয়েও টাকা পাচার করার শঙ্কা রয়েছে।

বিপিসির প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও এর আগে ৬টি কোম্পানিকে তেল আমদানির অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সামিট গ্রুপের মদনগঞ্জ ১০২ মেগাওয়াটের জন্য ৯০ হাজার মেট্রিক টন, খুলনা ১১০ মেগাওয়াটের জন্য ৩ লাখ ৬০হাজার মেট্রিক টন ও খুলনা ১১৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৮৫ হাজার মেট্রিক টন।

সামিটের বাইরে বারাকা পতেঙ্গা ৫০ মেগাওয়াটের জন্য ৫ হাজার ১২০ মেট্রিক টন, জুলদা ১০০ মেগাওয়াটের জন্য ৬০ হাজার মেট্রিক টন, নোয়াপাড়া ৪০ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ২৮ হাজার মেট্রিক টন তেল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়।
 
নতুন করে আরও ৬টি কোম্পানি সাড়ে ৮ লাখ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল আমদানির আবেদন করেছে। সিদ্ধিরগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, গগণনগর ১০২ মেগাওয়াট, পটিয়া ১০৮ মেগাওয়াট, বারাকা পতেঙ্গা ৫০ মেগাওয়াট ও জুলদা ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।