ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

যে কারণে অজানা বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৪
যে কারণে অজানা বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ! ফাইল ফটো

ঢাকা: অটোমেটিক ডাটা রেকর্ডার নেই অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্রেই। সময় রেকর্ড করা হয় ম্যানুয়ালি, এ কারণে ঠিক কোথায় থেকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সূত্রপাত হয়েছে তা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।



মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে বাংলানিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন।

তিনি জানান, তদন্ত রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়েছে। বুধবার (২৬ নভেম্বর) যেকোন সময় প্রতিমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট হস্তান্তর করা হবে। এতে একক কারণ চিহ্নিত করা না হলেও, সম্ভাব্য অনেকগুলো কারণ চিহ্নিত করে ২০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, লো-ভোল্টের কারণে ব্ল্যাক আউট হয়েছে। কিন্তু লো-ভোল্ট ঠেকানোর জন্য অনেকগুলো গেটওয়ে ছিলো, তবে সেগুলো কাজ করেনি।

তদন্তে দেখা গেছে ১ নভেম্বর সকাল ১১টা ২৭ মিনিট ২৭ সেকেন্ডে লো-ভোল্টেজ শুরু হয়। এরপর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়। কিন্তু ঠিক কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রথম বসে গেছে তা চিহ্নিত করা যায়নি। কারণ সবগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র একই সময়ে চলেনি। একেকটি একেক টাইমিংয়ে চলেছে। কোনোটি আবার ম্যানুয়ালি রেকর্ড করা হয়। এখন সবাই বলছে তাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরে বন্ধ হয়েছে।

মোহাম্মদ হোসাইন আরও বলেন, ২০০৭ সালে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর জিপিএস চালুর সুপারিশ করা হয়েছিলো। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। ওই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে আজকে ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু চিহ্নিত করা সম্ভব হতো।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে ২৯ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশে রয়েছে, সবগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র টাইম সিকুয়েন্স করে জিপিএস টাইমিং করা, রেকর্ডার ও ডিএফডিআর স্থাপন। এছাড়াও বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে গেলে দ্রুত বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করার জন্য ব্ল্যাক স্ট্যাটার জেনারেটর সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ থাকছে।

দেশের মোট চাহিদার শতকরা ১০ শতাংশের নীচে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা। যাতে ভারতের বিদ্যুৎ ট্রিপ করলেও গ্রিডে কোনো সমস্যা না হয়। এতদিন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ভারত থেকে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ নেওয়া হয়েছে অনেক সময়। সাশ্রয় নিশ্চিত করতেই এতদিন এমনটি করা হয়েছে বলেও জানান মোহাম্মদ হোসাইন।

স্ক্যাডা বৃদ্ধি, ১৩২ কেভি লাইনের আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সি রিলে বাড়ানো, উৎপাদন ও ফিডারের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি, ন্যাশনাল লোড ডেসপার্স সেন্টারকে (এনএলডিসি) আরও শক্তিশালী করা, এনএলডিসিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও এনএলডিসির সফটওয়ার ও হার্ডওয়ার প্রতি ৫ বছর পরপর আপডেট করার সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

গত ১ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। ওই দিন বিকেল নাগাদ সামান্য সরবরাহ শুরু হলেও আবার হাইভোল্টের কারণে উৎপাদন প্রায় শূন্যে নেমে আসে। রাত ৯টা নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে। মধ্যরাতে গিয়ে পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে চলে আসে।

সেদিনই উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রথমে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ে ব্যর্থ হয়ে পঞ্চম কার্যদিবসে প্রাথমিক রিপোর্ট দেয় কমিটি।

প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছিলো অভ্যন্তরীণ কারণেই বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়। নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করা যায়নি। যে কারণে আরও ১০ কার্যদিবস সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই নির্ধারিত সময়ও শেষ হয়েছে রোববার (২৩ নভেম্বর), সেদিনও রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি।

 বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।