ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

ব্যয় ১৪৬০ কোটি টাকা

ফেনীতে সৌর ও বায়ুশক্তিতে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
ফেনীতে সৌর ও বায়ুশক্তিতে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফাইল ফটো)

ঢাকা: কার্বন নির্গমণ হ্রাসকরণ ও বিদ্যুতের বিকল্প উৎসের ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ফেনীর সোনাগাজীতে ১০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতেই এ মহা উদ্যোগ।



সৌর ও বায়ুশক্তি ব্যবহার করে এ ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

‘১০০ মেগাওয়াট পিক সোলার ফটোভোল্টেইক গ্রিড সংযুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৬০ কোটি ২৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা।

মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৮২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড(বিউবো)৫৮ কোটি ১২ লাখ টাকার সংস্থান করবে। প্রকল্প সাহায্য হিসেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড ১ হাজার ২০ কোটি টাকা ঋণ দেবে।

নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি মেগাওয়াটে সাড়ে তিন একর জমি দরকার হয়। সে হিসেবে প্রায় ৩৫০ একর জমিতে গড়ে উঠবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব (নবায়নযোগ্য জ্বালানি) মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফেনীতে ১০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এখানে আমরা মূলত বায়ু ও সৌরশক্তিকে কাজে লাগাবো। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যয়ের অন্যতম মহাপরিকল্পনা এটি।

২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিউবো। প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সামর্থ্যের স্বল্পতা হ্রাসকরণ, ছোট গ্রিড সংযুক্ত সোলার পিভি সিস্টেম নির্মাণের পূর্ণ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হবে। এর পাশাপাশি প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে মানবসম্পদ এবং অন্যান্য স্থানীয় প্রযুক্তির উন্নয়ন করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।
 
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার মাত্র ২ শতাংশ। সরকার ২০২০ সালের মধ্যে সারাদেশে বিদ্যুতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৫ থেকে ১০ শতাংশ। সে লক্ষ্যে ব্যপক পরিসরে বায়ু সম্পদকে কাজে লাগানো হবে। সরকার ২০১৭ সাল নাগাদ ১৯ হাজার ৭০১ মেগাওয়াট এবং ২০২১ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে সরকার।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, নবায়নযোগ্য শক্তির সকল উৎসের মধ্যে সৌরশক্তি বাংলাদেশের সেরা কাযর্ক্রম। গ্রিড সংযুক্ত সৌর ফটোভোলটেইক বিদ্যুৎকেন্দ্র সারা দেশে নিরাপদ নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী একটি মাধ্যম।

প্রকল্পের আওতায় নানা যন্ত্রপাতি কেনা হবে। যেমন- সোলার পিভি মডিউলস, এসি ইনভারটাস, মাউন্টিং স্ট্র্যাকচার, স্ক্যাডা সিস্টেম, ক্যাবলিং ইত্যাদি। এছাড়া সাব স্টেশন, ১০ কিলোমিটার ১৩২ কেভি ইভাক্যুয়েশন লাইন, আবশ্যিক খুচরা যন্ত্রপাতি কেনা হবে। এর পাশাপাশি, পর্তুগিজসহ দেশি-বিদেশি পরামর্শকও নিয়োগ দেওয়া হবে।

প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, জ্বালানি হিসেবে বিশ্বব্যাপী তেল, গ্যাস ও কয়লার প্রাপ্যতা কমে যাচ্ছে। যে কারণে বিকল্প হিসেবে সৌরশক্তি, বায়ু ও সমুদ্রের স্রোত ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সারা বিশ্ব কাজ করছে। সৌরশক্তিকে ব্যাপকভাবে বিদ্যুত উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তি দিন দিন উন্নতিও করছে। মনো ক্রিস্টালাইন, পলি ক্রিস্টালাইন, অ্যামরফোয়ায়াস সিস্টেমের ওপর সৌর বিকিরণ আপতিত হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। এ প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় চার লাখ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সৌরশক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত হচ্ছে। যেটা আমাদের দেশে অনুসরণ করা সম্ভব।

প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানি তেল, গ্যাস, কয়লা, ডিজেল ইত্যাদি ক্ষয়িষ্ণু, যেগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে। অন্যদিকে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তির ব্যবহার পরিবেশের ওপর কোনো বিরুপ প্রভাব ফেলে না।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।