ঢাকা: প্রায় ১ বছর ৩ মাস গ্যাস লাইন সংযোগ প্রদান বন্ধ থাকার পর চলতি সপ্তাহে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৪২ টি শিল্প কারখানায়। গৃহস্থালীর বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
২ হতে ৩ বছর পুর্বে গ্যাস সংযোগ নেওয়ার জন্য তিতাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড’এ ডিমান্ড নোট প্রদান, পাইপ লাইন ও আর.এম.এস রুম স্থাপনসহ সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার ২ বছর পার হলেও গ্যাস সংযোগ পাচ্ছে না ১৫২ টি শিল্প প্রতিষ্ঠান।
গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে না পারলেও ব্যাংক সুদ গুণতে হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানকে। একই সাথে আমদানি করা ভারি মেশিনগুলোর ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে গ্যাস সংযোগ পেলে মেশিন চালু না হলেও তাদের করার কিছুই থাকবে না বলে শিল্প মালিকরা জানিয়েছেন।
গাজীপুর এলাকায় পিলোসিট টেক্সটইল্ মিল্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ‘ব্যাংক থেকে ১৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ইন্ডাষ্ট্রি স্থাপন করেছি। কিন্তু ২ বছর ধরে সংযোগ না পাওয়ায় আমাকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যাংক সুদ গুনতে হয়েছে। ’
তিনি গ্যাস সংযোগ পাওয়ার জন্য ৪৪ লক্ষ টাকা জামানত দিয়েছেন বলে দাবি করে বলেন, ‘আমার টাকা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে তিতাস মুনাফা করছে আর আমরা ব্যাংকের কাছে দেউলিয়া হচ্ছি। ’
অনেক শিল্প মালিকের স্থাপনা নিলামে উঠার পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে তিনি দাবি করেন।
এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘পাট এবং বস্ত্রশিল্প সম্ভাবনা প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এফবিসিসিআই সভাপতি এ.কে আজাদ বাণিজ্য মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘গ্যাস সংযোগ না পাওয়া ১৫২ টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ব্যাংকের দেনার দায়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
‘ব্যাংক তাদের সুদ ঠিকই আদায় করছে। অন্যদিকে উৎপাদন করতে না পারায় পুরো বিনিয়োগ আজ হুমকির মুখে পড়েছে। ’
তিনি শিগগিরই সকল প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
অনেক শিল্প মালিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে, বাংলানিউজকে জানান, ‘আমাদের টাকা দিয়ে তিতাস ব্যবসা করছে অথচ আমরা ব্যাংকের সুদের কারণে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছি। কী চমৎকার আমাদের দেশের নিয়ম নীতি। ’
‘১৫২ টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে না পারলেও ব্যাংক সুদ দিতে হচ্ছে। এতে করে অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ’
তারা জানান,‘অনেক প্রতিষ্ঠানের মেশিন আমদানি করা ২ বছর পার হয়ে গেছে। উচ্চ মূল্যের এ সব মেশিন চালু না হলে তার দায় কে বহন করবে?’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাজীপুর এলাকার এক শিল্প মালিক বাংলানিউজকে বলেছেন, ‘আমরা সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি প্রায় ২ বছর পুর্বে। অথচ সরকার স¤পূর্ণ অবিবেচকের মতো ২৫ মার্চ ২০১০ তারিখে হঠাৎ করে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে। ’
‘আমাদেরকে যদি অনুমতি দেওয়া না হতো তাহলে আমরা তো ব্যাংক ঋণ নিতাম না। আর শিল্প স্থাপনও করতাম না। ’
তিনি বলেন, ‘সরকার এসব প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ না দিয়ে গলাটিপে হত্যা করছে সম্ভাবনাময় এসব শিল্পমালিকদের। ’
‘অথচ এ সব প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হলে একদিকে যেমন এসব শিল্পমালিকরা ঝূঁকিমুক্ত হবে একই সাথে ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। ’
তারা আরো জানান, ‘সরকার কয়েক মাস পুর্বে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য যাতে ৫৫ টি প্রতিষ্ঠানের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ’
কিন্তু সেটিও এতদিন ঝুলে আছে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টার মতবিরোধের কারণে। ’
‘‘অবস্থা এ রকম দাঁড়িয়েছে দুই হাতির যুদ্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত দুর্বাঘাসের। ’
তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আজিজ খান বাংলানিউজকে জানান, গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য ১৫২ টি প্রতিষ্ঠানের সংযোগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলে গত বছরের মার্চে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। ’
‘ওই চিঠিতে বলা হয়, দেশে গ্যাস উৎপাদন ২২ শ এমএমসিএফডি না হওয়া পর্যন্ত নতুন সংযোগ প্রদান বন্ধ থাকবে। ’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গ্যাস সংযোগ প্রদান বন্ধের নির্দেশ জারি হওয়ার পুর্বে তিতাসে জামানত জমা দেওয়া কোম্পানির সংখ্যা রয়েছে ১৫২ টি। ’
তবে তিনি ‘সিএনজি স্টেশন, গৃহস্থালির জন্য সংযোগ ফি জমা দেওয়া গ্রাহকের সংখ্যা জানাতে রাজি হননি। ’
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে বৃহস্পতিবার জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সভায় শুধুমাত্র কিছু সংখ্যাক প্রতিষ্ঠানে সংযোগ প্রদানের সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘পর্যায়ক্রমে সকল শিল্প করাখানায় সংযোগ প্রদান করা হবে (যারা তিতাসে জামানত জমা দিয়েছেন)।
বাংলাদেশ সময় : ২০৪৬ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১১