ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

গ্যাস সংকটে চুলা জ্বলে না গৃহিণীর

মোস্তফা ইমরুল কায়েস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
গ্যাস সংকটে চুলা জ্বলে না গৃহিণীর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘সকাল সাতটার মধ্যেই গ্যাস চইলা যায়। আর আহে দুপুর তিনটার পরে।

তিনদিন থাইক্যা রাইত ১১টার পর রান্না করতাছি। ‍গত রাইতে ভাত রান্না কইরবার পারলেও তরকারি পারি নাই। তয় ভোর ৪টায় জাইগ্যা ডিম ভাজি কইরা ভাত খাইছি। ’
 
গ্যাস সংকট নিয়ে এভাবেই ভোগান্তির কথা বলছিলেন রাজধানীর রামপুরার ৪৫, ওমর আলী লেনের বাসিন্দা ফরিদা পারভীন। শুধু ফরিদাই নন, তার মতো প্রায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার প্রত্যেক গৃহিণীর অবস্থা একই।

রাজধানীর রামপুরা ছাড়াও শান্তিনগর, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও তালতলা, বনশ্রী, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, মুগদা, মানিকনগরসহ আরও অনেক এলাকায় গ্যাসের জন্য হাহাকার চলছে বেশ কিছুদিন ধরে।
 
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতি শীত মৌসুমে এসব এলাকায় গ্যাস সংকটে পড়তে হয় তাদের। এবারও শীত মৌসুমে তারা সেই সংকটে পড়েছেন।

তারা বলেন, দুই মাস ধরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। সপ্তাহ দু’য়েক থেকে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

পূর্ব রামপুরা এলাকার টিভি রোডের গৃহিণী সাদিয়া আক্তার। স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তাদের সংসার।

তিনি জানালেন, তাদের সকালের নাস্তা তৈরি করতে প্রতিদিন ভোর পৌনে ৪টার দিকে উঠতে হয়। যেদিন উঠতে পারেন না, সেদিন চরম বিপাকে পড়তে হয়। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে আনতে নয়তো থাকতে হয় না খেয়ে।

সাদিয়া বলেন, সপ্তাহ দু’য়েক থেকে গ্যাসের কারণে তো মাছ মাংস খাওয়া ছেড়েই দিয়েছি। শুধু ডিম আর আলু ভর্তা দিয়ে চালাতে হচ্ছে প্রতিদিন। আর মেহমান এলে বেশ বিব্রত হতে হয়।
 
একই কথা বললেন রামপুরার মেরাদিয়া নয়াপাড়ার গৃহিণী কনক রায়।
 
তিনি জানান, গত নভেম্বর থেকে এ সমস্যা চলছে। বিষয়টি বাড়িওয়ালাকে বললে উল্টো তিনি জানিয়েছেন- এ সমস্যা সবখানে‍ই চলছে।
 
পশ্চিম রামপুরা ৩৩৪ উলন রোডের গৃহিণী পপি জামান জানান, ছাদে কিংবা বাসার নিচে লাকড়ি দিয়েও রান্না করতে হয়েছে।

একই এলাকার মিনা আক্তার জানান, সকাল ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটু একটু আসে গ্যাস। এ অবস্থা গত সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার বেশি ছিল।

‘রাতে গ্যাস থাকলেও তা পরিমাণে খ‍ুবই কম,’ যোগ করেন তিনি।
 
বিভিন্ন এলাকার লোকজন জানান, গ্যাস সংকটের কারণে প্রায় সবারই কম-বেশি বাজারের সময় সূচিতে পরিবর্তন হয়েছে। সঙ্গে বদলেছে খাবার মেনুও। কেউ বা সকালের বাজার করছেন রাতে, আবার অনেকে দুপুরে।
 
বনশ্রীর বাসিন্দা হাদিউজ্জামান বলেন, আগে সকালে বাজার করে দুপুরে টাটকা খেতাম। এখন সেটা করতে পারছি না। অনেক সময় দুপুরেও বাজার করতে পারি না।
 
সিএনজি অটোরিকশা কিংবা গ্যাসচালিত অন্যান্য যানবাহনে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান পশ্চিম হাজীপাড়ার বাসিন্দা ফাহিমা ও আশরাফ দম্পতি।
 
এদিকে, গ্যাস সংকটের কারণে অনেক ভাড়াটিয়া এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বাসা ভাড়া নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাড়িওয়ালারা।

খিলগাঁও-মুগদার বেশ কয়েকজন বাড়িওয়ালা জানান, গ্যাস সংকটের ভোগান্তির কারণে অনেক ভাড়াটিয়া বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা মেলেনি।
 
আলী আহাম্মদ নামে বনশ্রীর এক বাড়িওয়ালা বলেন, বাসায় নিয়মিত গ্যাস না থাকায় দু’জন ভাড়াটিয়া বিরক্ত হয়ে চলে গেছেন। আরও দু’জন আগামী মাসে বাসা ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিসট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নওশাদ ইসলামের মোবাইলে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
এমআইকে/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।