ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

কৃষ্ণর সফরেও বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি স্বাক্ষর অনিশ্চিত

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১১
কৃষ্ণর সফরেও বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি স্বাক্ষর অনিশ্চিত

ঢাকা: মার্চের মধ্যে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে ঘোষণা দেওয়ার পর ৩মাস পেরিয়ে প্রস্তাবিত চুক্তি স্বাক্ষরে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। এমন কী ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণর সফরকালেও চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবে কীনা তা অনিশ্চিত।

এবারও যদি অনুমোদন না পায় তাহলে আবারও পিছিয়ে যাবে চুক্তি স্বাক্ষরের দিনক্ষন।

বিপিডিপির প্রধান প্রকৌশলী অবশ্য জানিয়েছেন, আজ অথবা কাল সকালে একনেক তোলা হবে বিষয়টি। একনেক অনুমোদন দিলে চুক্তিটি স্বাক্ষর হতে পারে।

বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ এবং চুক্তি পরবর্তী কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কোন দেশের আইনে তা সমাধা করা হবে এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে দ্বিমত রয়েই গেছে। এ কারণে ঝুলে আছে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি সংক্রান্ত প্রস্তাবিত চুক্তির স্বাক্ষর প্রক্রিয়া।

কয়েক দফা সময় পেছানো পর গত ৭মার্চ বৈঠক শেষে দুই দেশের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ‘চলতি মাসের (মাচের্র) মধ্যে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হবে’ বলে ঘোষণা করা হয়

‘কিন্তু এর পরে আরও ৩মাস পার হতে চললেও এখন পর্যন্ত চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি। ’

বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেছেন, ‘মূল সমস্যা ছিল চুক্তি-পরবর্তী আইনি জটিলতা নিরসনে। ভারত দাবি করেছিল সে দেশের আদালতে বিচার করতে আর বাংলাদেশ প্রস্তাব ছিল আন্তর্জাতিক আদালতের বিষয়ে।

সর্বশেষ আর্ন্তজাতিক আদালত হিসেবে সিঙ্গাপুরের বিষয়ে মধ্যস্থতা হয়েছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে,‘ কোন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে সে বিষয়েও জটিলতা নিরসন এখনওহয়নি। এর সাথে জড়িত রয়েছে দামের বিষয়টি। কারণ ভারতের একেকটি কেন্দ্রে বিদ্যুতের দাম একেক রকম। ’

তিনি আরো বলেন, ‘চুক্তি স্বাক্ষরের ২ বছর পর বাংলাদেশ ২৫০ মে. ওআট বিদ্যুৎ পাবে। মধ্যবর্তী ২ বছর সময় ব্যয় হবে লাইন স্থাপনে। ’
 
গত মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির (জেএসসি) বৈঠকের পর উভয় শিগগিরই চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

‘ যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আশার বাণী শোনালেও ভারতের বিদ্যুৎ সচিব পি উমা শংকর দেশে গিয়ে আগ্রহ কম দেখাচেছন’ সূত্রটি দাবি করেছেন। ’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাংলানিউজকে বলেন, যে চুক্তি হতে যাচ্ছে তাতে বর্তমানে শুধু আমদানি হলেও এই লাইন দিয়ে পরে  বিদ্যুৎ রফতানি করা হবে।

খুলনায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মে. ওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেখান থেকে ভারত বিদ্যুৎ আমদানি করবে।

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের এ ধরনের চুক্তির পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, তাই এখানে ঝুঁকির পরিমাণ কিছুটা বেশি। তাই চুক্তি করার আগে আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জেনে নেয়া উচিত। ’

৭ মার্চে অনুষ্ঠিত জেএসসি’র ওই বৈঠকে ভারতের সরবরাহ করা বিদ্যুতের দামের ওপর একটি ধারণা দেয়া হলেও তাতে সন্তুষ্ট না বাংলাদেশ।

‘বাংলাদেশ সরকারকে আশ্বস্ত করা হয়েছিলো, ভারতের অন্যান্য রাজ্যে যে দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় একই দরে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। তবে ঠিক কোন প্ল্যান্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে, সে বিষয়ে বাংলাদেশকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, গত বছর প্রথম যখন এ নিয়ে আলোচনা হয় তখন জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা ছিলো ভারতের। তবে সমঝোতা স্মারকের আগেই সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলে ভারতের জাতীয় বিদ্যুৎ সংস্থা ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি)।

এরপরে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের ভেড়ামারা পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়।

ধারণা করা হয়েছিলো, বহরমপুরের কাছাকাছি কোন্ও প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে এনটিপিসি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কারণে এ নিয়ে অনিশ্চয়তার তৈরি হয়েছে।

দেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ভারত তার অন্যান্য রাজ্য সরকারের দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও পরিবহন ব্যয়ের বিষয়টি চিন্তা করতে হবে। যত দূরের কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে, পরিবহন ব্যয়ও ততই বাড়বে।

‘আবার প্ল্যান্টের জ্বালানি যদি ‘তেল’ হয় সেক্ষেত্রে দাম বাংলাদেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের চেয়ে অনেক বেশি পড়বে। যার চড়া মাশুল গুনতে হবে বাংলাদেশের গ্রাহকদের। ’

বাংলাদেশের পক্ষে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) ও ভারতের পক্ষে ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি) নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে।

বিপিডিবি’র নিবার্হী প্রকৌশলী আবুল কাশেম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, চুক্তির ক্ষেত্রে আর কোন জটিলতা নেই। ভারতের পররাষ্ট্রমমন্ত্রী সফরকালে এ চুক্তি সম্পাদন করার বিষয়ে জোর চেষ্টা চলছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ভারতের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা আসছেন বলে আমাদের নিশ্চিত করেছেন।

‘ জটিলতা রয়েছে আমাদের অভ্যন্তরীণ। সে কারণে চুক্তি স্বাক্ষর বিলম্বিত হতে পারে।

তিনি বলেন ‘এখন পর্যন্ত একনেকে অনুমোদন দেয়নি এই চুক্তির বিষয়টি। আজ বুধবার অথবা কাল সকালে একনেকে ওঠানোর জন্য কাজ করা হচ্ছে। যদি একনেক অনুমোদন দেয় তাহলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরেই চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে। ’

কোন্্ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এটি এখনও চুড়ান্ত হয়নি। ’

‘রাজ্য সরকারকে যে দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় একই দামে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার বিষয়ে ভারত সম্মত হয়েছে’ বলে তিনি জানিয়েছেন। ’

তিনি আরো জানান, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘন্টা, জুলাই ০৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।