ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্র: পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই ঘোষণা...

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১১
সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্র: পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই ঘোষণা...

ঢাকা: দীর্ঘদিন পর জ্বালানি খাতের জন্য একটি ভালো সংবাদ: সুন্দলপুরে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার।

তবে সংবাদটি ভালো হলেই ভালো।

কিন্তু শ্রীকাইলের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরই ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল বলে দাবি করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

অন্তত কি পরিমাণ মজুদ আছে সে কথা যখন কেউ বলতে পারছে না সে অবস্থায় তো নয় বটেই।

দীর্ঘ ১৫ বছর পরে দেশে নতুন একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লি (বাপেক্স)। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের এই সময়ে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘটনাকে জাতির জন্য পরম সুখের খবর বলেই মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা এ জন্য বাপেক্স, সর্বোপরি বর্তমান সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন, তড়িৎ পদক্ষেপ নিয়ে আবিষ্কার করা নি:সন্দেহে সাধুবাদ পাওয়ার দাবি রাখে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার সাবেক এক চেয়ারম্যান বাংলানিউজকে বলেন, কী পরিমাণ গ্যাসের রির্জাভ রয়েছে তা পরীক্ষা করে এবং এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদন করে বাণিজিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে কিনা তা পরীক্ষা নিরীক্ষ্ াকরে ঘোষণা দিলেই ভালো হতো।

তাতে অন্তত ব্যুমেরাং হওয়ার আশংকা কমে যেত বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ২০০৪ সালে পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই শ্রীকাইলে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা নিরীক্ষা (দ্বিমাত্রিক) করে দেখা গেছে শ্রীকাইলে যে পরিমাণ গ্যাস রয়েছে তা উত্তোলন করে বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়া সম্ভব নয়। সে কারণেই পরে শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ’

তিনি আরো বলেন, ‘সে সময়ে বাপেক্সের ওই সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিশেষ বোনাস প্রদান করা হয়। দু:খজনক হলেও সত্য পরে সেই বোনাস ফেরত নেওয়া হয় সবার কাছ থেকে। ’

পেট্রোবাংলার সাবেক ওই চেয়ারম্যান আরো বলেন, মাটির নীচে কোটি কোটি বছর ধরে চাপা পড়ে থাকা উদ্ভিদ থেকে কয়লা এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে গ্যাসের উৎপত্তি হয়ে থাকে। সে কারণে অনেক স্থানে গ্যাসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পকেট থাকতে পারে। সে সব পকেট থেকে গ্যাস তুলে বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়া সম্ভব নয়। ’

তার মতে ১৭ আগস্ট সকালে কুপ থেকে গ্যাস আসা শুরু হতেই বিকেলে তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন করা সঠিক চিন্তার কাজ হয়নি। এতে আশাহত হওয়ার আশংকা থেকেই যায়।

তিনি বলেন, অন্তুত ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে চাপ পরীক্ষা করে এটি করলে কিছুটা হলেও যুক্তি সংগত কাজ হতো।

এদিকে বাপেক্স এর একটি সূত্র জানিয়েছে, একটি গ্যাসক্ষেত্রের কূপ খনন করতে ৭০ থেকে ১০০ কোটি টাকা, গ্যাস প্রসেস করতে প্রায় ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা, এবং পাইপ লাইন স্থাপনের ব্যয় (প্রতি কিলোমিটার প্রায় ২ কোটি টাকা) এবং অপরেটিং খরচ মিটিয়ে যদি বাড়তি গ্যাস পাওয়া যায় তবেই তাকে বাণ্যিজিক ভাবে সফল গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

সে হিসেবে সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করতে হলে কূপ খনন ১ শ কোটি, গ্যাস প্রসেস করতে ১০ কোটি মিলে প্রায় ১ শ ১০ কোটি টাকা খরচ হবে (পাইপ লাইন স্থাপন এবং অপারেটিং ব্যয় ছাড়া)।

‘যদি মাইজদী পাইপ লাইনে নেওয়া হয় তাহলে প্রায় ৮ কিলোমিটার অর্থাৎ আরো ১৬ কোটি টাকা এবং বাখরাবাদ-চট্টগ্রাম পাইপ লাইনে সংযোগ দেওয়া হলে প্রায় ২০ কিলোমিটার অর্থাৎ ৪০ কোটি টাকা প্রয়োজন পড়বে। ’

সে হিসেবে প্রায় ১৩০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে এই গ্যাসক্ষেত্রে।

বাপেক্স সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল, সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন ১০ হতে ১২ এমএমএসসিএফডি ( মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক ফিট/ডে) উৎপাদন করা হবে। বাপেক্স এর বরাত দিয়ে কয়েকটি দৈনিকে উল্লেখ করা হয়েছে সুন্দলপুরে ৫ থেকে ৭ শ এমএমসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে। সে হিসেব যদি সঠিক হয় তাহলে সর্বোচ্চ ২ মাসে শেষ হয়ে যাবে সুন্দলপুরের গ্যাস।

আর তাহলে সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রকে বাণিজ্যিক ভাবে গ্যাসক্ষেত্র বলা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।

‘যদি ৫০০ এমএমএসসিএফ গ্যাস মজুদ থেকে থাকে তাহলে এই ক্ষেত্রের উত্তোলিত প্রতি ঘনফুট গ্যাসের মুল্য দাঁড়াবে প্রায় ২দশমিক ৬০ টাকা থেকে ৩ টাকার মত। যা দেশে চলমান (কয়েক ধাপ) মুল্যের মধ্যে সর্বোচ্চ ধাপের চেয়েও অনেক বেশি।

পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মকবুল- ই-ইলাহী চৌধুরী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, লাভজনক ভাবে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মজুদ থাকলেই কেবল বাণিজ্যিকভাবে গ্যাসক্ষেত্র বলা হয়।

তিনি আরো বলেন, সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার জাতির জন্য শুভ সংবাদ। দীর্ঘদিন গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছিল অন্তত সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে সাফল্য ব্যর্থতা দুটাই হতে পারে। তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।


পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, যে জোনে গ্যাস পাওয়া গেছে এই জোনটি একটি সম্ভবনাময় জোন। যে কারণে আমরা বেশি আশাবাদী।

কি পরিমাণ গ্যাস মজুদ রয়েছে সে প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, এখনই সে উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। আরো পরীক্ষা করে এ বিষয়ে বলা সম্ভব হবে।

অন্যান্য ক্ষেত্রে কয়েকদিন চাপ পরীক্ষা করে ঘোষণা দেওয়া হয় এ ক্ষেত্রে কেন তা করা হয়নি এ কারণে শ্রীকাইলের মতো ঘটনা ঘটার আশংকাকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘এখানে আমরা সফল হবই ইন্সা আল্লাহ। ’

বাংলাদেশ সময় : ১৩১৫ ঘন্টা, আগস্ট ২১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।