ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও বিল, প্রকৌশলীসহ বরখাস্ত ৩

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৮
বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও বিল, প্রকৌশলীসহ বরখাস্ত ৩

লালমনিরহাট: বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও ২ লাখ টাকা বিলের ঘটনায় নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৩ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সোমবার (১৬ জুলাই) বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো রাজশাহী অাঞ্চলিক অফিসের এক আদেশে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

বরখাস্তের আদেশপ্রাপ্তরা হলেন-বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো এর লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও মিটার রিডার ( মাস্টাররোল) স্থানীয় দালাল সাইফুল ইসলাম।

 

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো রংপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জুলাই দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজে “বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও ২ লাখ টাকা বিল" শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করতে ইউএনওকে নির্দেশনা দেন। সেই তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী রোববার (১৫ জুলাই) জেলা সম্বন্বয় কমিটির সভায় জোরালো আলোচনা ওঠে। জনগণের ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে জেলা সমন্বয় কমিটি।

যার প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো রাজশাহী অঞ্চলিক কার্যালয় প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত তিনজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। একইসঙ্গে ভুয়া এসব বিল মওকুফ করতে নির্দেশ দেয়া হয়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো রংপুর বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গোলাম মর্তুজা বাংলানিউজকে জানান, লালমনিরহাট জেলা সমন্বয় কমিটির সুপারিশক্রমে রাজশাহী অাঞ্চলিক কার্যালয় নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানুরসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে। ভুক্তভোগী ৪৩ কৃষক পরিবারের এসব ভুয়া বিল মওকুফ করা হয়েছে। তাদের এসব বিল আর দিতে হবে না।

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানান, মহিষাশ্বহর গ্রামের বিদ্যুতহীন ৩৩ পরিবার বিদ্যুতের সংযোগের জন্য গত তিন বছর আগে আবেদন করেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কালীগঞ্জ শাখায়। আবেদনের পর স্থানীয় বিদ্যুতের দালাল সাইফুল ইসলাম প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার প্রতি ১২/১৫ হাজার টাকা বুঝে নেন এবং তিন মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তিন বছর তিন মাস পার হলেও খুঁটি, লাইন বা মিটার কোনোটাই মেলেনি।

এরই মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বেসরকারি খাতে চলে যায় এবং বিধিমতে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় তাদের নতুন সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতেই বিপাকে পড়েন বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা ও দালাল চক্রটি।

এদিকে গ্রাহকদের চাপের মুখে গত বছর ওই গ্রামের ৩৩টি পরিবারের জন্য ৩৩টি মিটার পাঠান দালাল সাইফুল ইসলাম। খুঁটি বা লাইন না পেয়ে গ্রাহকরা মিটারগুলো বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরই মধ্যে গত জুন মাসে ওই গ্রামের ৪৩টি পরিবারের নামে জনপ্রতি ৫ হাজার ৯৩ টাকা হারে দুই লাখ ১৮ হাজার ৯৯৯ টাকার বিদ্যুৎ বিল পাঠায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো।

বিদ্যুৎ বিল দেখে হতভম্ভ পরিবারগুলো বিলের কাগজপত্র নিয়ে কালীগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিস গিয়ে এর সমাধান দাবি করলেও কোনো কাজ হয়নি। তাই এসব ভুয়া বিল বাতিল করে দ্রুত লাইন সংযোগ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে গত ১০ জুলাই বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।

জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, তদন্ত শেষে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় জেলা সম্বন্বয় কমিটির সভায় সকল সদস্যরা কৃষকদের অহেতুক এ বিল মওকুফ করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেন। যার প্রেক্ষিতে কৃষকদের ভুয়া এসব বিল মওকুফ করতে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।