ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

আদিতমারীর সেই ৪৩ পরিবার পেল বিদ্যুতের নতুন সংযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
আদিতমারীর সেই ৪৩ পরিবার পেল বিদ্যুতের নতুন সংযোগ বিলের কাগজ হাতে ভুক্তভোগীরা। ছবি: বাংলানিউজ (ফাইল ফটো)

লালমনিরহাট: বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও ২ লাখ টাকা বিলের ঘটনায় ভুক্তভোগী সেই পরিবারগুলোকে নতুন সংযোগ দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) বিকেলে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বহর গ্রামের সেই ৪৩ পরিবারকে নতুন সংযোগ দেওয়া হয়।

লালমনিরহাট কুড়িগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি'র আদিতমারী উপজেলা সাব-স্টেশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জুলাই দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজে " বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও ২ লাখ টাকা বিল" শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করতে ইউএনওকে নির্দেশনা দেন।

সেই তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী রোববার (১৫ জুলাই) জেলা সম্বন্বয় কমিটির সভায় জোরালো আলোচনা ওঠে। জনগণের ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে জেলা সম্বন্বয় কমিটি। যার প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো রাজশাহী অঞ্চলিক কার্যালয় প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানুর আলমসহ তিনজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন। একই সঙ্গে ভুয়া বিল মওকুফ করে।

জেলা সম্বন্বয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ওই ৪৩ পরিবারকে পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে এসব গ্রাহককে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো'য় আবেদন করা ফরমের তথ্যানুযায়ী মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) বিকেলে নতুন সংযোগ দেয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।  

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- পল্লী বিদ্যুতের লালমনিরহাট অঞ্চলের ডেপুটি ম্যানেজার জাকির হোসেন, সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) ফারুক ইকবাল, সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (মেম্বর সার্ভিস) মনিরুজ্জামান মনির ও আদিতমারী সাব-স্টেশনের জুনিয়ার প্রকৌশলী গাউসুল আজম প্রমুখ।  

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানান, মহিষাশ্বহর গ্রামের বিদ্যুতহীন ৩৩ পরিবার বিদ্যুতের সংযোগের জন্য গত তিন বছর আগে আবেদন করেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কালীগঞ্জ শাখায়। আবেদনের পর স্থানীয় বিদ্যুতের দালাল সাইফুল ইসলাম প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার প্রতি ১২/১৫ হাজার টাকা বুঝে নেন এবং তিন মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তিন বছর তিন মাস অতিবাহিত হলেও খুঁটি, লাইন বা মিটার কোনটাই পায়নি তারা।  

এরই মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বেসরকারি খাতে চলে যায় এবং বিধি মতে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় তাদের নতুন সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতেই বিপাকে পড়েন বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা ও দালাল চক্রটি।

এদিকে গ্রাহকদের চাপের মুখে গত বছর ওই গ্রামের ৩৩টি পরিবারের জন্য ৩৩টি মিটার পাঠান দালাল সাইফুল ইসলাম। খুঁটি বা লাইন না পেয়ে গ্রাহকরা মিটারগুলো বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর পর গত জুন মাসে ওই গ্রামের ৪৩টি পরিবারের নামে জনপ্রতি ৫ হাজার ৯৩ টাকা হারে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৯ টাকার বিদ্যুৎ বিল পাঠায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো।  

বিদ্যুৎ বিল দেখে হতভম্ভ পরিবারগুলো বিলের কাগজপত্র নিয়ে কালীগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিস গিয়ে এর সমাধান দাবি করলেও কোন কাজ হয়নি। তাই এসব ভুয়া বিল বাতিল করে দ্রুত লাইন সংযোগ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে গত ১০ জুলাই বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। ওই দিনই বাংলানিউজ একটি সংবাদ প্রকাশ করলে ভুক্তভোগীদের দাবি বাস্তবায়নে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

ভুক্তভোগী লুৎফর রহমান ও জসিম মিয়া বাংলানিউজের কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বাংলানিউজের মাধ্যমে আমাদের দাবি সরকারের কানে পৌঁছে যাওয়ায় আমরা আজ বিদ্যুৎ সংযোগ পেলাম। গ্রাম আলোকিত হয়েছে, ছেলে মেয়েরা বিদ্যুতের আলোয় পড়াশুনার সুযোগ পেয়েছে। তবে নেসকোর দালালদের হাতিয়ে নেয়া টাকা উদ্ধার করে দিতে সরকারের উচ্চ মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।

পল্লী বিদ্যুতের আদিতমারী সাব স্টেশনের জুনিয়ার প্রকৌশলী গাউসুল আজম বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকোর কাছে করা গ্রাহকদের আবেদনগুলো পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ে ওই পরিবারগুলোকে নতুন সংযোগ দেয়। ওই গ্রামে আরো ৬০ পরিবারকে নতুন সংযোগ দেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।