ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সাতক্ষীরায় ৮৬ ভাগ মানুষ বিদ্যুতায়নের আওতায় 

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৮
সাতক্ষীরায় ৮৬ ভাগ মানুষ বিদ্যুতায়নের আওতায়  সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি

সাতক্ষীরা: বর্তমান সরকারের সাড়ে চার বছরে সাতক্ষীরায় বিদ্যুৎখাতে বিপ্লব ঘটেছে। এ সময়ে জেলায় নতুন ২ লাখ ১৩ হাজার ১৮৭টি পরিবার/শিল্প প্রতিষ্ঠান/সেচ/অন্যান্য গ্রাহককে বিদ্যুতায়নের আওতায় এনেছে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। 

একইসঙ্গে সিস্টেম লস কমিয়ে ১১ দশমিক ৩৬ ভাগে নিয়ে এসেছে সংস্থাটি। বিদ্যুৎ বিল আদায়ের হার উন্নীত হয়েছে ৯৯ ভাগে।

সব মিলিয়ে জেলার ৮৬ ভাগ মানুষ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে। যা ২০১৯ সালের মধ্যে ১০০ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।  

সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানায়, সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১৯৮২ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৩১ বছরে জেলার ১ লাখ ২৬ হাজার ৯০৭টি পরিবার/শিল্প প্রতিষ্ঠান/সেচ/অন্যান্য গ্রাহককে বিদ্যুতায়নের আওতায় নিয়ে এসেছে। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত মাত্র সাড়ে চার বছরে নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ১৮৭টি পরিবার/শিল্প প্রতিষ্ঠান/সেচ/অন্যান্য গ্রাহককে।  

১৯৮২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের গড় চাহিদা ছিলো ১৫ মেগাওয়াট। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ মেগাওয়াটে।  

১৯৮২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩১ বছরে ৩৩ কেভির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ৯৫ কিলোমিটার এলাকা বিদ্যুতায়নের আওতায় আসে। যা ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে বেড়ে ১৬৫ কিলোমিটারে উন্নীত হয়। অর্থাৎ গ্রাহক পর্যায়ে সংযোগ ও বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণে গত সাড়ে চার বছরের (২০১৪ থেকে ২০১৮) অর্জন বিগত ৩১ বছরের (১৯৮২ থেকে ২০১৪) চেয়ে বেশি।  

সূত্র আরও জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ৩১ বছরে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আবাসিক পর্যায়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৯ পরিবারকে বিদ্যুৎতায়নের আওতায় নিয়ে আসে। যেখানে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল- ৪ বছরে সংস্থাটি আবাসিক পর্যায়ে নতুন ১ লাখ ৬২ হাজার ৯৯৪ পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে।

১৯৮২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলায় পল্লী বিদ্যুতের উপকেন্দ্র ছিলো ছয়টি। পরের সাড়ে চার বছরে নতুন তিনটি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর ৩১ বছরে সংস্থাটি ৩ হাজার ৫০টি সেচ সংযোগ দিলেও ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে সাড়ে চার বছরে নতুন ১ হাজার ১৩৬টি সেচ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।   

সবমিলিয়ে বর্তমানে জেলায় ৩ লাখ ৪০ হাজার ৯৪টি পরিবার/শিল্প প্রতিষ্ঠান/সেচ/অন্যান্য গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে।  

এদিকে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় সিস্টেম লস হতো ১৫ দশমিক ৬১ ভাগ। যা ২০১৩ সালে নেমে আসে ১৪ দশমিক ৮১ ভাগে। এ হার কমে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে।  

বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রমানুষের মধ্যে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখার প্রবণতাও কমেছে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় ৯২ ভাগ বিদ্যুৎ বিল আদায় হতো। ২০১৩ সালে এই হার বেড়ে ৯৫ ভাগে উন্নীত হয়। আর বর্তমানে বিদ্যুৎ বিল আদায় হচ্ছে শতকরা ৯৯ ভাগ।  

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের নতুন গ্রাহক মো. রবিউল ইসলাম গাজী বাংলানিউজকে বলেন, আমি ও আমার পরিবার নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। বিগত বছরে গরমের সময় অত্যন্ত কষ্ট করেছি। কিন্তু বর্তমানে সেই কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হয়েছে। এখন ফ্যান, লাইটসহ অন্য সব জিনিস ব্যবহার করতে পারছি। শুধু আমি নয় আলোকিত হয়েছে গোটা গ্রাম।  

একই গ্রামের ডা. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আগে মোবাইল চার্জ দিতে বাজারে যেতে হতো। কিন্তু এখন বাড়িতে চার্জ দেওয়া যায়। তিন মাসে আমাদের গ্রামের ১২টি পরিবার এবং এক বছরে ২৫টি পরিবার বিদ্যুতের আওতায় এসেছে।  

এছাড়াও পার্শ্ববর্তী গ্রাম আমতলার কয়েকটি পরিবারে বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা খুশি। সরকারে এই অগ্রযাত্রাকে সাধুবাদ জানাই।  

আশাশুনির বলাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক বিনয় মণ্ডল বলেন, দেশ স্বাধীনের ৪৬ বছর পরে শেখ হাসিনার সরকার আমাদের গ্রামসহ হাঁসখালি, গাইয়াখালি, ঠাকুরাবাদ গ্রামে বিদ্যুৎ দিয়েছে। এতো বছর পরেও যে আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছি- এতেই আমরা খুশি। এখন আর আমাদের ভ্যান চার্জ দিতে অন্য গ্রামে যেতে হয় না। রাতে আর ঘরবাড়ি অন্ধকার থাকে না। ছেলে-মেয়েরা বিদ্যুতের আলোয় লেখাপড়া করছে।

সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার রবীন্দ্রনাথ দাস বাংলানিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তত্ত্বাবধানে ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০৭ কিলোমিটার এলাকায় লাইন সম্প্রসারণ করে ৩২ হাজার ৬৮০টি সংযোগ দিয়ে দেবহাটা উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে। তালা ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনার কাজ চলমান। কলারোয়া ও  কালিগঞ্জ উপজেলার শেষ হবে ডিসেম্বর নাগাদ। শ্যামনগর ও আশাশুনিতে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার এলাকায় লাইন সম্প্রসারণের কাজ করা হবে। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি ২০১৯ সালের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনতে পারবো।  

তিনি আরও বলেন, ১৯৮২ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৩১ বছরে যে কাজ হয়নি, বর্তমান সরকার গত সাড়ে চার বছরে তার থেকে বেশি কাজ করেছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।