ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

যমুনার চরাঞ্চলে সৌরবিদ্যুতের আলোর ঝিলিক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৮
যমুনার চরাঞ্চলে সৌরবিদ্যুতের আলোর ঝিলিক সৌরবিদ্যুৎ

সিরাজগঞ্জ থেকে ফিরে: সৌরবিদ্যুৎ-মিনিগ্রিড স্থাপনের মাধ্যমে আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ যমুনা নদীর চরাঞ্চল রূপসা গ্রাম। 

সৌরবিদ্যুৎ পেয়ে ওই গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে এখন আনন্দ। তাদের প্রত্যেকের ঘরেই রয়েছে টেলিভিশন, ফ্রিজ ও অন্যান্য ইলেক্টনিক্স সামগ্রী।

এ গ্রামের মানুষ এক বছর আগেও বিদ্যুতের অভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারতো না। আর এখন প্রত্যেকের হাতে হাতে মোবাইল ফোন।

বছরের পর বছর ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এ গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল জেনারেটর। এই জেনারেটর দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে প্রতিদিন যে ডিজেল ফুরাতো তাতে সবমিলিয়ে ব্যবসায় লাভের অংকটা খুব সামান্যই থাকতো। কিন্তু রূপসা গ্রামের মানুষ এখন জেনারেটরের পরিবর্তে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে ব্যবসায় অনেক লাভবান হচ্ছেন।  

বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হলেও রয়েছে স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। রয়েছে পাকা রাস্তাও। তবে সে রাস্তায় ছিল না কোনো বাহন। পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করতে হতো। কিন্তু সৌরবিদ্যুতের সংযোগ পাওয়ার পর সেই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে শুরু করেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকারের মালিকানাধীন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) পাঁচ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সৌরবিদ্যুৎ-মিনিগ্রিড চালু করে। প্রতিদিন এ প্রকল্প থেকে ১৩০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। আর এই বিদ্যুতেই আলোয় আলোকিত হয়েছে চরের মানুষ। সোলারগাঁও লিমিটেড নামক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এক একর জায়গার উপর স্থাপন করেছে সোলার মিনিগ্রিড (বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র)। এখান থেকে নয় কিলোমিটার সংযোগ লাইনও বসানো হয়েছে। এ লাইন থেকেই এক বছরে ৪৭৪ জন গ্রাহক বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ৩১০ জন আবাসিক এবং ১৬৪ জন বাণিজ্যিক গ্রাহক রয়েছে।  

রূপসা গ্রামের গৃহবধূ সোনিয়া আক্তার বাংলানিউজকে জানান, আগে সন্ধ্যার পরই চরের মানুষ ঘুমিয়ে পড়তো। এখন তারা বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে সব কাজকর্ম শেষ করে টেলিভিশন দেখে সময় কাটিয়ে যখন ইচ্ছে তখন ঘুমাচ্ছেন। ছেলে-মেয়েরাও বিদ্যুতের আলোতে লেখাপড়া করতে পারছে।  

বিদ্যুতের কারণে পাল্টে গেছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের রূপসা বাজারটিও। মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যবসায়ী জানান, আগে জেনারেটরে কাজ করতে অনেক ঝামেলা হতো। এখন বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে ঝামেলা ছাড়াই দিন রাত কাজ করছেন তিনি। আগের তুলনায় প্রতিমাসে খরচও কম হচ্ছে।
 
সোলারগাঁও লিমিটেডের প্ল্যান্ট প্রকৌশলী সোহেল রানা বাংলানিউজকে জানান, প্রতি গ্রাহককে সংযোগ নিতে আড়াই হাজার টাকা করে জমা দিতে হয়। লাইন থেকে ৬৫ ফুট পর্যন্ত সংযোগ তার বিনামূল্যে দেওয়া হয়। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২০ টাকা। তবে এটি ১০ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হবে।

তিনি আরো জানান, সোলার মিনিগ্রিড প্রকল্পে ৫০ ভাগ ভর্তুকি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)। ১০ বছর মেয়াদী ছয় পার্সেন্ট সুদে ৩০ ভাগ ঋণ দিয়েছে তারা (ইডকল)। বাকি ২০ ভাগ বিনিয়োগ করেছে সোলারগাঁও।

মেসরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ গত এক বছর আগেও বিচ্ছিন্ন এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন বিদ্যুৎ আসায় এ এলাকার মানুষের অনেক উপকার হয়েছে।  

ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ মালিক বাংলানিউজকে জানান, তারা দেশের এরকম ২৭টি প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে সোলার মিনিগ্রিড প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। যার মধ্যে ১৭টি চালু হয়েছে। বাকিগুলো নির্মাণাধীন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।