ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

শীতেও লোডশেডিং ঠেকাতে পারছে না পিডিবি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১১
শীতেও লোডশেডিং ঠেকাতে পারছে না পিডিবি

ঢাকা: শীতের আগমনী বার্তায় বিদ্যুতের চাহিদা কমে গেলেও লোডশেডিং ঠেকাতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। জ্বালানি সংকটের দোহাই দিয়ে গা বাঁচানো হলেও সমস্য অনেক জটিল বলে  খোদ পিডিবি সূত্রই জানিয়েছে।



বৃহস্পতিবার পিক আওয়ার (সন্ধ্যা ৭টায়) ৫ হাজার ১০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৭ শ’ ৭৭ মেগাওয়াট।

পিডিবি’র হিসেব মতে, বৃহস্পতিবার দেশে ৫ শতাংশ লোডশেডিং ছিলো। যদিও তাদের এ হিসেবের সঙ্গে একমত নন গ্রাহক এবং বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো।

পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ  কেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৮ হাজার ২০৩  মেগাওয়াট। আর প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে ৭ হাজার ৬২৩ মেগাওয়াট।

‘কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার ২ শ’ মেগাওয়াটে আটকে আছে। ’

বিভিন্ন ত্রুটির কারণে প্রতিদিন দুই হাজার ৭শ’  মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোনও না  কোনও কারণে উৎপাদন করতে পারছে না।

পিডিবি বরাবরই জ্বালানি সংকটের কথা বললেও কার্যত মাত্র ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জ্বালানি সংকটের কারণে কম উৎপাদন হচেছ। আর বাকি বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে।

পিডিবি’র জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, বৃহস্পতিবার গ্যাসের চাপ কম থাকায় ১ হাজার ২ শ’ ২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হয়েছে।

‘সে হিসেবে হিসেব করলেও যান্ত্রিক সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হয়েছে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট। ’

ক্যাব’র জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘নানা সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বিদ্যুৎ খাত। আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো রহস্যজনক কারণে অবহেলার শিকার। ’

‘সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ না করে  বেসরকারি কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এক শ্রেণীর লোক এ গুলোকে বিকল রাখতেই আগ্রহী বেশি’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি দাবি করেছেন, সরকার বেসরকারিকরণের চেয়ে সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর দিকে মনযোগী হলে সমস্যা এতো প্রকট হতো না।

জ্বালানী সংকটের পাশাপাশি যান্ত্রিক ত্রুটি, জ্বালানি তেল সরবরাহ পাইপ লাইনে লিকেজ, জেনারেটর’র ত্রুটিসহ নানা সমস্যা রয়েছে। ’

পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রর পাশাপাশি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও দীর্ঘদিন ধরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কম উৎপাদন করছে। তারা চুক্তি অনুযায়ী পিডিবিকে পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় বিদ্যুৎ দিতে পারছে না।

পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, সারা দেশে এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ৭০টি। এর মধ্যে ঘোড়াশাল (ইউনিট ৬) ও আশুগঞ্জ (ইউনিট ১) ২০১০ সালের যথাক্রমে ১৮ জুলাই ও ৯ নভেম্বর থেকে বন্ধ ও বিকল পড়ে আছে।

রাউজান (ইউনিট ২) চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে, ভোলা আরপিপি ১৮ জুলাই থেকে, সিদ্ধিরগঞ্জ এসটি ১ আগস্ট থেকে, শিকলবাহা ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে, শাহাবাজপুর (ইউনিট ৫ ও ৬) ২১ জুলাই থেকে ও ১০ সেপ্টেম্বর থেকে খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।

পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, উল্লেখিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ২৬টি  কেন্দ্র যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কম উৎপাদন করছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কেন্দ্রে নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

সূত্রটি আরো জানিয়েছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে মোট ৪৭টি চুক্তি করছে।

এ পর্যন্ত ৪৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ চলছে । যার মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে মোট ২৬টি, যার ১৩টিতেই সমস্যা রয়েছে।

এর মধ্যে আটটিতেই রয়েছে ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’। ২টিতে ট্রান্সফরমারের সমস্যা। ১টিতে জেনারেটরের সমস্যা, অন্য দুটি দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে আছে।
 
পিডিবি’র এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সরকারকে বললেও অনেক ক্ষেত্রে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না। ’

‘চলতে থাকা অবস্থায় সামান্য ক্রটি দেখা দিলে সারানো হলে বড় সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না। যে কারণে জোড়াতালি থেরাপি বড় ধরণের সমস্যা ডেকে আনছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় ১ মাসের মধ্যে পিডিবিকে পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যাসহ  প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরকার ক্ষমতায় এসে দ্রুত বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় ভাড়া ভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে তিন থেকে পাঁচ বছর  মেয়াদের জন্য চুক্তি করে।

পরিকল্পনা ছিলো, বড় বড় প্রকল্প উৎপাদনে এলে এসব কেন্দ্রের প্রয়োজন পড়বে না।

কিন্তু সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো  উৎপাদনে না আসায় জোড়াতালি থেরাপি থেকে সহসাই মুক্তি পাচ্ছে না জনগণ।

পিডিবি চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির ক্ষমতানুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, পুরোনো অনেক কেন্দ্র রয়েছে, যেগুলো মেরামত করা অনেক জরুরি।

বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে একে একে পুরোনো কেন্দ্রগুলো সংস্কার করা হবে বলেও তিনি জানান।

এক সঙ্গে পুরোনো কেন্দ্র সার্ভিসিংয়ে গেলে লোডশেডিং অসহনীয় হতে পারে, এ কারণে এক এক করে সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।