ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্যান উৎপাদন করবে সরকার

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্যান উৎপাদন করবে সরকার ফ্যান

ঢাকা: প্রায় ২০ বছর আগে নানা কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সরকারি জনপ্রিয় ফ্যানের ব্র্যান্ড ‘মিল্লাত’। এবার এই ফ্যানের অনুরূপ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্যান উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতালসহ সাধারণ মানুষের জন্য এই ফ্যান উৎপাদন করা হবে।

এ জন্য উন্নতমানের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী টেকসই সিলিং ফ্যান প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। গাজীপুরের টঙ্গীতে নতুন একটি প্ল্যান্ট করে, সেটার মাধ্যমে বছরে নূন্যতম দুই লাখ পিস মানসম্মত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সিলিং ফ্যান উৎপাদন ও বিক্রি করা হবে।

একইসঙ্গে পর্যায়ক্রমে এখানের উৎপাদন পাঁচ লাখ পিসে উন্নীত করা হবে।

‘বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী টেকসই সিলিং ফ্যান উৎপাদন’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। প্রকল্পটি চলতি সময় থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড (এবিএল)। প্রকল্পে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে একটা ফ্যানও সরকারি উদ্যোগে উৎপাদন হয় না। বেসরকারি উদ্যোগে উৎপাদনের পাশাপাশি বিদেশ থেকে ফ্যান আমদানি করা হয়। এসব পণ্যের মানও খুব ভালো বলা যাবে না। আমরা সরকারিভাবে ফ্যান উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছি। দেশের মানুষকে কম দামে মানসম্মত ফ্যান দিতে চাই। দেশের অর্থ বাইরে যেতে দেবো না। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারলে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে। আমরা মিল্লাত ফ্যানের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই।

এটলাস সূত্র জানায়, বছরে ফ্যানের চাহিদা ৪০ থেকে ৪২ লাখ। মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ভারতসহ কয়েকটি দেশ থেকে বছরে সাত লাখ ফ্যান আমদানি করা হয়। মিল্লাত নামে সরকারি ফ্যান উৎপাদন হয়ে আসছিল। যা ২০ বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়। ৩০ থেকে ৩৫টি দেশীয় কোম্পানি ফ্যান তৈরি করছে। এসব ফ্যান সাধারণ ১০০ ওয়াটের। ফলে বেশি হারে বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। তাই সরকার প্রকল্পটির আওতায় ৭০ ওয়াটের ফ্যান উৎপাদন করবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জনসাধারণের কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে। জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ফ্যান সরবরাহ নিশ্চিত করা ও বাজারে ফ্যানের মূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে। এবিএল’র উৎপাদিত দুই লাখ ফ্যানের মাধ্যমে বছরে ১২ কোটি ২৮ লাখ টাকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।

এবিএল সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে তাদের উৎপাদিত মোটরসাইকেল দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করা হচ্ছে। টঙ্গীর ১১ একর জমিতে গড়ে ওঠা মোটরসাইকেল কারখানার পাশাপাশি ফ্যান উৎপান করা হবে। যাতে করে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে ফ্যান।

এবিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আ ন ম কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণ ফ্যান ১০০ ওয়াটের। আমরা ৭০ ওয়াটের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্যান উৎপাদন করবো। সাধারণ মানুষ যাতে কম দামে সাশ্রয়ী ফ্যান পেতে পারে, সে কথা চিন্তা করেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তান, ভারত ও মালয়েশিয়া থেকে বছরে সাত লাখ ফ্যান আমদানি করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের টাকা দেশেই থাকবে। বছরে সরকারেরও চাহিদা দুই থেকে তিন লাখ ফ্যানের। আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে সাধারণ মানুষের হাতে সস্তায় ফ্যান তুলে দিতে পারবো।

এটলাস বা এবিএল ১৯৬৬ সালে হোন্ডা মোটর কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ব্যক্তিগত মালিকানা নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এবিএল জাতীয়করণ এবং বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (বিএসইসি), শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন হয়। এবিএল ১৯৯৩ সাল থেকে হিরো হোন্ডা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে। ২০১১ সালে হোন্ডা, জাপান এবং হিরো হোন্ডা তাদের পার্টনারশিপ বিচ্ছিন্ন করে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এমআইএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।