ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

গ্রাহক পর্যায়ে ২০.৩৩% বিদ্যুতের দাম বাড়ল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১১
গ্রাহক পর্যায়ে ২০.৩৩% বিদ্যুতের দাম বাড়ল

ঢাকা: দু’দফায় দেশের বিভিন্ন বিদ্যুৎ সংস্থার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম যথাক্রমে ১৩ দশমিক ২৪ ও ৭ দশমিক ০৯ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

এর ফলে মোট ২০ দশমিক ৩৩ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বেড়েছে।



বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসির কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়া হয়। বিইআরসির চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য সেলিম মাহমুদ ও ইমদাদুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রথম দফায় ১ ডিসেম্বর থেকে ডিপিডিসি ১৫ দশমিক ০২ শতাংশ, পিডিবি ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ, ওজোপাডিকো ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ, ডেসকো ১৪ দশমিক ১৬, আরইবি ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়াবে।

দ্বিতীয় দফায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লি. (ওজোপাডিকো) ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লি. (ডেসকো)৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। যা কার্যকর হবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে।

তবে বর্দ্ধিত গড় মূল্য বিদ্যুত বিতরণ সংস্থা এবং গ্রাহক ভেদে ভিন্ন করা হয়েছে।

আরইবি’র বিদ্যুতের ব্যবহার ভেদে ৪ ধাপে আবাসিক, ৩ ধাপে বাণিজ্যিক, ৩ ধাপে সাধারণ শিল্প, ৩ ধাপে বৃহৎ শিল্প, উচ্চ চাপ সাধারণ ব্যবহারের (৩৩ কেভ) জন্য পৃথক রেট করা হয়েছে।

ডেসকো ও ওজোপাডিকো এর ৮, এবং ডিপিডিসি ও পিডিবির গ্রাহকদের ৯ শ্রেণীতে বিভক্ত করে ভিন্ন দর নির্ধারণ করা হয়েছে।

দাম সবচেয়ে কম বাড়ানো হয়েছে, কৃষিসেচ, দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও পল্লী বিদ্যুতের স্বল্প ব্যবহারকারী গ্রাহকের ক্ষেত্রে (০ থেকে ১০০ ইউনিট)।

এ তিন ক্ষেত্রে দু’দফায় ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। এসব গ্রাহকের সার্ভিস চার্জ ৬ থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা, ডিমান্ড চার্জ ১২ টাকা থেকে ১৫ টাকা করা হয়েছে।

বর্দ্ধিত দাম কার্যকর হলেও তিন গ্রাহকের ক্ষেত্রে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে বলে দাবি করেছে কমিশন।

দাম বাড়ানোর পরেও আরইবি ২৫৯ কোটি টাকা, পিডিবি ৪৫০ কোটি, ওজোপাডিকো’র ২৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা রাজস্ব ঘাটতি থাকবে বলে দাবি করেছে বিইআরসি চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন।

এছাড়া ডিপিডিসির ৮ কোটি টাকা ক্ষতি হবে আর ডেসকো মুনাফা করতে সক্ষম হবে বলেও জানান তিনি।

তবে ডিপিডিসি সিসটেম লস যদি একটু কমাতে পারে তাহলে তারাও মুনাফায় যেতে পারবে।

প্রথম দফায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম ৪ টাকা ১৬ পয়সা ৫৫ পয়সা বাড়িয়ে ৪ টাকা ৭১ পয়সা এবং দ্বিতীয় দফায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৭১ পয়সা থেকে ৩১ পয়সা বাড়িয়ে ৫ টাকা ২ পয়সা করা হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাইকারি দাম বাড়ানোর সময়ে অন্তবর্তীকালীন গ্রাহক পর্যায়ে অন্তবর্তী সময়ের জন্য ৫ শতাংশ বাড়িয়েছিলো বিইআরসি।

বিইআরসিতে জমা দেওয়া প্রস্তাবে পিডিবি গড় ২১ শতাংশ, আরইবি ১২ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ডেসকো ২১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ডিপিডিসি ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং ওজোপাডিকো ১৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়।

আরইবির ১০০ ইউনিট পর্যন্ত আবাসিক গ্রাহকদের ডিসেম্বর থেকে ২ টাকা ৭৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩ টাকা ১৮ পয়সা, ১০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৭৩ পয়সা, ৩০১ থেকে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত ৫ টাকা ২১ পয়সা থেকে ৫ টাকা ৫৪ পয়সা এবং ৫০০ ইউনিটের অধিক হলে ইউনিট প্রতি ৬ টাকা ৮৭ পয়সা থেকে ৮ টাকা ১৮ পয়সা দিতে হবে।

ফেব্র“য়ারি থেকে যথাক্রমে ২ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৩৪ পয়সা, ৩ টাকা ৪৫ থেকে ৩ টাকা ৯৫ পয়সা, ৫ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে ৫ টাকা ৯৮ পয়সা এবং ৭ টাকা ৪২ পয়সা থেকে ৮ দশমিক ৮৩ পয়সা ইউনিট প্রতি খরচ হবে।

বাণিজ্যিক শ্রেণীর গ্রাহকরা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে ৬ টাকা ৮০ পয়সা, অফপিকে ৫ টাকা ২৩ পয়সা, পিক সময়ে ৯ টাকা ৩১ পয়সা ইউনিট প্রতি বিল দিতে হবে।

ফেব্র“য়ারি থেকে যথাক্রমে ৭ টাকা ৩৩ পয়সা, ৫ টাকা ৮৮ পয়সা ও ৯ টাকা ৬৬ পয়সা গ্রাহকদের বিল দিতে হবে।

এই শ্রেণীর গ্রাহকদের মাসিক সার্ভিস চার্জ ১০ টাকা এবং ডিমান্ড চার্জ মাসিক ২৫ টাকা করে বিল গুনতে হবে।

দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এক ডিসেম্বর থেকে ৩ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৫২ পয়সা এবং এক ফেব্র“য়ারি থেকে ৩ টাকা ৬২ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৩৬ পয়সা ইউনিট প্রতি বিল দিতে হবে।

সেচে প্রথম পর্যায়ে ইউনিট প্রতি ২ টাকা ৭৩ পয়সা থেকে ৩ টাকা ২০ পয়সা এবং ২য় পর্যায়ে ২ টাকা ৮৭ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৩৬ পয়সা পরিশোধ করতে হবে।

তবে সেচে কোনও ডিমান্ড চার্জ না থাকলেও সার্ভিস চার্জ হিসেবে মাসে ৩০ টাকা দিতে হবে গ্রাহককে।

সাধারণ শিল্প শ্রেণীর গ্রাহকদের মধ্যে ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে এক ডিসেম্বর থেকে ইউনিট প্রতি ৫ টাকা ২৭ পয়সা, অফপিকে ৪ টাকা ৪১ পয়সা এবং পিক সময়ে ৬ টাকা ৭৫ পয়সা এবং ২য় পর্যায়ে যথাক্রমে ৫ টাকা ৬৭ পয়সা, ৪ টাকা ৮৬ পয়সা এবং ৬ টাকা ৯০ পয়সা করে ইউনিট প্রতি পরিশোধ করতে হবে গ্রাহকদের।

এই শ্রেণীর গ্রাহকদের সার্ভিস চার্জ হিসেবে মাসে ৭০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

আরইবির বৃহৎ শিল্পের গ্রাহকদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ৫ টাকা ১৪ পয়সা, অফপিকে ৪ টাকা ৪০ পয়সা ও পিক সময়ে ৭ টাকা ৫৫ পয়সা এবং এক ফেব্র“য়ারি থেকে ফ্ল্যাটে ৫ টাকা ৫৫ পয়সা, অফপিকে ৪ টাকা ৮৬ পয়সা এবং পিক সময়ে ৭ টাকা ৬০ পয়সা ইউনিট প্রতি ব্যয় হবে।

 এই শ্রেণীর গ্রাহকদের সার্ভিস চার্জ হিসেবে মাসে ৪শ’ টাকা দিতে হবে।

বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টি অনেকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা করেন। এ কারণে অনেক সময়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।

চলতি বছরে বিদ্যুতে সরকার ৫ হাজার কোটি টাকা ভতুর্কি দিচ্ছে। এ ভতুর্কি সরকার এবং জনগণের উপর একটা বোঝা। এ কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। তাই বিদ্যুতের মূল্য বাড়াতে হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

দেশের অর্থনীতি চাপে রয়েছে, মূল্যস্ফীতি ডবল ডিজিটে (দুই সংখ্যা) ব্যাংক ঋণ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের ভর্তুকি দেওয়ার ক্ষমতা সীমিত হয়ে আসছে। সে কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

এ দাম বাড়ানোর পরেও সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে করে ভর্তুকির সীমা কিছুটা কমে আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।