ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

এবার সেচ মৌসুমে লোডশেডিং ১২০০ মেগাওয়াট

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১২
এবার সেচ মৌসুমে লোডশেডিং ১২০০ মেগাওয়াট

ঢাকা: আগামী সেচ মৌসুমেও লোডশেডিংয়ের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছেন না বোরো চাষীরা। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে বোরো মৌসুমে পিক আওয়ারে লোডশেডিং থাকবে প্রায় ১ হাজার ২১৭ মেগাওয়াট।



তবে পিডিবির লোডশেডিং সংক্রান্ত হিসাবের সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুব কম সময়েই লক্ষ্য করা যায় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

আগামী সেচ মৌসুমে (জানুয়ারি-এপ্রিল) দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১৫২ মেগাওয়াট। যার বিপরীতে ওই সময়ে উৎপাদন হবে ৫ হাজার ৯৪৫ মেগাওয়াট। উৎপাদনের বিষয়টি অনেকগুলো ‘যদি’র ওপর নির্ভর করছে।

আর তা হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন যদি ৯২০ থেকে ৯৯০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যায়। গত মৌসুমে সর্বোচ্চ সরবরাহ ছিল ৭৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট। এছাড়া কর্ণফুলি নদীর পানির উচ্চতা যদি ৭৯ থেকে ৯৬ ফুট পর্যন্ত থাকে।

বিদ্যুৎ বিভাগ যখন বাড়তি গ্যাস দাবি করছে, সে সময়ে প্রেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বর্তমানে তারা দৈনিক কমবেশি ২০ হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করছেন। প্রতিদিন তাদের ঘাটতি থাকছে প্রায় সাড়ে ৪ শ’ মিলিয়ন ঘনফুট। খুব বেশি হলে তারা আরও ১৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে পারবেন।

এ অবস্থায় পিডিবির চাহিদা মোতাবেক বর্তমান গ্যাস সরবরাহ ৭১৫ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ মিলিয়ন ঘনফুট করা সম্ভব হবে কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরে হোসেন মনসুর বলেন, ‘সরকার রাষ্ট্রের মালিক, সরকার চাইলে অন্যখাতে গ্যাস কম দিয়ে বিদ্যু‍ৎ উৎপাদনে দিতে পারে। ’

লোডশেডিংকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগ আবর্তন (রোটেশন) পদ্ধতি, অফ-পিক আওয়ার (রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা) পর্যন্ত মোটর চালু রাখা এবং প্রয়োজন হলে এলাকাভিত্তিক দুই শিফটে সেচযন্ত্র চালু রাখার সুপারিশ দিয়েছে।

সেই সঙ্গে সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কমাতে এর আগের নির্দেশনা সন্ধ্যা ৭টার পর শপিংমল ও বিপনীবিতান বন্ধ করা, যা পরবর্তী সময়ে শিথিল করে রাত ৮টা করা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে মার্কেট বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন মৌসুমে সারা দেশে ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩১টি সেচ পাম্প চালু থাকবে বলে ধারণা করা হয়েছে। এটা বিগত সেচ মৌসুমের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ( আরইবি) আওতায় সর্বোচ্চ ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৯টি, পিডিবির ৩৭ হাজার ৩৭০টি, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ( ওজোপাডিকো) ৪ হাজার ৯৯ টি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) ৪৯টি এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) আওতায় ২৪টি সেচ পাম্প চালু থাকবে।

উল্লেখিত পরিমাণ লোডশেডিং ধরে সেচ মৌসুম সুষ্ঠুভাবে পার করার জন্য সারাদেশকে ৯টি জোনে ভাগ কর‍া হয়েছে। প্রতিটি জোনে একটি করে আঞ্চলিক কমিটি ছাড়াও ৪টি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আঞ্চলিক ও উচ্চ পর্যারের কমিটিগুলোর নাম ‘সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ’ বলা হলেও মূলত তাদের কাজ হবে লোডশেডিং ব্যবস্থাপনায় তদারকি করা বলে স‍ূত্র দাবি করেছে।

এ ছাড়া আঞ্চলিক কমিটি লোডশেডিংয়ের তথ্য প্রচার, অফ-পিক সময়ে সেচ পাম্প চালু রাখা, এলাকাভিত্তিক রোটেশন পদ্ধতি বাস্তবায়ন জরুরি প্রয়োজনে শহরাঞ্চলে লোডশেডিং করে সেচের বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করাসহ ১১টি বিষয়ে তদারকি করবে।

আরইবি এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, পিডিবির লোডশেডিংয়ের তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল অনেক ক্ষেত্রেই পাওয়া যায় না। বেশির ক্ষেত্রেই প্রকৃত চাহিদা আড়াল করা হয়।

পিডিবির চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবীর বাংলানিউজকে জানান, গত মৌসুমের চেয়ে আসছে সেচ মৌসুমে লোডশেডিং হবে অনেকটা সহনীয়।

সর্বোচ্চ পিক মৌসুম ধরা হয়েছে মার্চ ও এপ্রিল মাস। এ সময়ে গ্রাহকরা যদি একটু সাশ্রয়ী এবং সেচ পাম্প চালানোর নির্ধারিত সময় মেনে চলে, তাহলে কোনো সমস্যা হবে না।

সেচ মৌসুমে লোডশেডিং সাধারণত ৮০০ মেগাওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে এক সঙ্গে সেচ মৌসুম শুরু হয় না। জানুয়ারির ১৫ তারিখের দিক থেকে রাজশাহী বিভাগসহ পশ্চিমাঞ্চলে এর প্রায় ২ সপ্তাহ পরে ঢাকা, এরও পরে খুলনা ও বরিশাল বিভাগে সেচ মৌসুম শুরু হয়। ’

সে কারণে শেষের দিকে লোডশেডিং একটু বাড়লেও প্রথম দিকে তেমন সমস্যা থাকবে না বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।