ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

নেসকোর প্রিপেইড মিটার: সময় শেষ হলেও প্রকল্পের অগ্রগতি নেই

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২০
নেসকোর প্রিপেইড মিটার: সময় শেষ হলেও প্রকল্পের অগ্রগতি নেই প্রিপেইড মিটার

ঢাকা: ৫ লাখ অনলাইন প্রিপেইড মিটার সংযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)। ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও এক শতাংশ কাজও হয়নি।

প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ০ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এ পর্যন্ত কোনো ভৌত অগ্রগতি না হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ২ বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে নেসকো। প্রকল্পের কাজের জন্য অধিকাংশ সরঞ্জাম ও মালামাল চীন থেকে আমদানি হওয়ার কথা। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে প্রকল্পের বলার মতো অগ্রগতি নেই বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

নেসকো সচিব সৈয়দ আবু তাহের বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের অধিকাংশ সরঞ্জাম চীন থেকে আমদানি হবে। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি হয়নি। আরও নানা ধরনের প্রতিকূল অবস্থা ছিল। আমরা প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৪৭ হাজার অনলাইন প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য চুক্তি সই করেছি। আশা করি মাস খানেকের মধ্যে অগ্রগতি দেখতে পাবো। প্রকল্পের জন্য ২ বছর সময় চেয়েছি। আশা করি এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন করতে পারবো।

নেসকো সূত্র জানায়, নানা কারণে প্রকল্পের সংশোধন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কম্পোনেন্টের আওতায় কতিপয় যন্ত্রপাতির সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে। যেমন সেন্ট্রাল ডাটা সেন্টারের পরিবর্তে মিটার ডাটা ম্যানেজমেন্ট স্থাপন করা হচ্ছে। হেড ইঞ্জিনিয়ারিং সিস্টেম এবং ইউটিলিটি ভেন্ডিং স্টেশন পরিবর্তন করে সেন্ট্রাল বিলিং সফটওয়্যার ওরাকেল লেন্স দেওয়া হবে। স্থানীয় প্রশিক্ষণ কমিয়ে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাড়ানোসহ পরামর্শক সেবার ব্যয় বাদ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পে ব্যয় ছিল  ৪১৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এখন আরো ৫ কোটি টাকা বাড়তি চাওয়া হয়েছে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলার ৩৯টি উপজেলায় নেসকো বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এলাকা এর বাইরে রয়েছে। ৬টি পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল এবং ৪৯টি বিতরণ ইউনিট দিয়ে সংস্থাটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বর্তমানে নেসকো এলাকায় সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ৭৬৪ মেগাওয়াট। গ্রাহক সংখ্যা ১৩ লাখ ২০ হাজারের কিছু বেশি। নেসকোর নন-টেকনিক্যাল সিস্টেম লস তুলনামূলক বেশি। অনলাইন প্রিপেইড মিটার স্থাপনের মাধ্যমে সংস্থাটি তা কমিয়ে আনার কথা চিন্তা করছে। এজন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়।

এর আগে নেসকো এলাকায় ১ লাখ অনলাইন প্রিপেইড মিটার বসানো হয়েছে।

বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমানো ও অধিক লোড নিয়ন্ত্রণে গ্রাহক পর্যায়ের বিদ্যমান এনালগ মিটার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে প্রিপেইড মিটারেরর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এতে একদিকে বিদ্যুতের অপচয় কমবে, অপরদিকে বকেয়া বিলের ঝামেলায় না গিয়ে শতভাগ রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, প্রচলিত পোস্টপেইড মিটার সিস্টেমে বিলকৃত টাকা সংগ্রহ করতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে। এতে সরকারি-আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছে অনেক বিল বকেয়া থাকে। এসব বিল আদায় করা বেশ কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আবার বিল বকেয়ার কারণে প্রতি বছর গ্রাহক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে নির্ধারিত জরিমানা পরিশোধের মাধ্যমে আবার সংযোগ প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে মিটার রিডিংয়ের কাজেও বাড়তি সময় ও লোক নিয়োজিত করতে হয়। এ কাজে প্রচুর জনবল নিয়োগসহ সময়ক্ষেপণ করতে হয়। আবার পোস্টপেইড ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ চুরির সুযোগ থাকে। কিন্তু প্রিপেইড মিটারের মাধ্যমে বিল বকেয়া হওয়া ও বা চুরির সুযোগ নেই। কেননা, গ্রাহক টাকা রিচার্জ করলেই বিদ্যুৎ সংযোগ সচল থাকবে, টাকা ফুরিয়ে গেলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। তাছাড়া গ্রাহকের অনুকূলে বরাদ্দকৃত লোড নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ট্রান্সফরমারের ওভারলোড কমিয়ে আনা এবং সিস্টেম লসও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কিন্তু প্রকল্পের ধীরগতির কারণে সুফল পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২০
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।