ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

জামিন পেতে ব্যর্থ খালেদা: হট্টগোলে আইনজীবীরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯
জামিন পেতে ব্যর্থ খালেদা: হট্টগোলে আইনজীবীরা খালেদা জিয়া।

ঢাকা: দুর্নীতির দুটি মামলায় ১০ ও সাত বছর করে মোট ‘১৭ বছর’ এর দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাবন্দি বিএনপি প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় চলতি বছরে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে আবেদনের পর জামিন পেতে ব্যর্থ হয়েছেন খালেদা জিয়া।

প্রথমে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের দণ্ড নিয়ে কারাবন্দি হন তিনি।

হাইকোর্টে আপিল শুনানির পর এটি বেড়ে হয় ১০ বছর। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতে সাত বছরের দণ্ড হয় খালেদার। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে করা আপিল বিচারাধীন।

চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্ট বিভাগে জামিন আবেদন খারিজের পর আপিল করে জামিন চেয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সে আবেদনও ১২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ খারিজ করে দেন। তবে তিনি যদি রাজি হন তাহলে মেডিক্যাল বোর্ড তার অ্যাডভান্স চিকিৎসায় পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

আপিল বিভাগে জামিন শুনানির সময় ব্যাপক হইচই করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এমনকি আপিল বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রমও ব্যাহত হয়।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। এ ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুদক।

তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।

তবে শুনানি চলাকালে একাধিকবার আদালতে হাজির হতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া।

এরপর গত বছরের ২৯ অক্টোবর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

একইসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।

গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল এ মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত এবং সম্পত্তি জব্দের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন।

এরপর ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। নথি আসার পর জামিন আবেদন উপস্থাপন করেন খালেদার আইনজীবীরা। এরপর শুনানি শেষে ওই আবেদন ৩১ জুলাই খারিজ হয়ে যায়।
এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে খালেদা জিয়া। এই আবেদনের শুনানি নিয়ে খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চ ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতভাবে এই আদেশ দেন।

আদালত খালেদা জিয়ার সম্মতি নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এই জামিন আবেদনের শুনানিতে গত ২৮ নভেম্বর আপিল বিভাগ বিএসএমএমইউ হাসপাতালের প্রিজনস সেলে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে জানাতে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে বোর্ডের মেডিক্যাল রিপোর্ট ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। সেদিন (৫ ডিসেম্বর) মেডিক্যাল প্রতিবেদন জমা না পড়ায় শুনানি পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর  তারিখ ধার্য করেন আদালত। এ নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নজিরবিহীন হট্টগোল হয়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আপিল বেঞ্চে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।  

অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা
গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান মামলাটিতে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।

একইসঙ্গে খালেদার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। সেই থেকে কারাবন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া।

পরে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া আপিল করেন।

২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ এবং অর্থদণ্ড স্থগিত করে নথি তলব করেন আদালত। এরপর ৭ মার্চ অপর আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।
পরে ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছিলেন আদালত।

ওই আপিল শুনানি শেষে খালেদাসহ আসামিদের আপিল, দুদকের আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ৩০ অক্টোবর রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদার সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।

এছাড়া ৫ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়া এবং ১০ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে কাজী কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের আপিল খারিজ করেছেন আদালত।

এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে চলতি বছরের ১৪ মার্চ আবেদন করেন। যেটি শুনানির জন্য এখনো উপস্থাপন করেননি খালেদার আইনজীবীরা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯
ইএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।