সিরাজগঞ্জ: বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ২০২০ সালটি ছিল হারানোর বছর। সে বছর সারাদেশের মতো সিরাজগঞ্জও হারিয়েছে অনেক কৃতি মানুষকে।
২০২১ সালে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন: আওয়ামী লীগের অন্যতম নীতি নির্ধারক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাবেক সংসদ সদস্য ও ভাষা সৈনিক অ্যাডভোকেট গোলাম হাসনায়েন নান্নু, সাবেক উপমন্ত্রী হাসিবুর রহমান স্বপন, সাবেক সংসদ সদস্য মণ্ডল গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মণ্ডল, সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন, বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউসুফ জি খান এবং এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. আব্দুল হাই সরকার।
এইচটি ইমাম
এ বছর ৩ মার্চ রাতে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা
অবস্থায় মারা যান এইচটি ইমাম। উল্লাপাড়া উপজেলার সোনতলা গ্রামের সন্তান এইচটি ইমাম ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পরেও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালে থেকে তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো- চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকারে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদায় জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। তিনি ২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন। এছাড়া এইচটি ইমাম আমৃত্যু আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এইচটি ইমামের একমাত্র ছেলে তানভীর ইমাম সিরাজগঞ্জ-৪ আসন থেকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তার তিন মেয়ের দুইজন আমেরিকা প্রবাসী অপরজন ঢাকাতেই থাকেন।
গোলাম হাসনায়েন নান্নু
৪ ডিসেম্বর ভোরে পাবনার নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন একুশে পদকে ভূষিত ভাষাসৈনিক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট গোলাম হাসনায়েন নান্নু (৮৫)।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর গোলাম হাসনায়েন বৃহত্তর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জেলা বারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি আইনজীবী হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি সিরাজগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং পরবর্তীকালে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে উল্লাপাড়া আসন থেকে সদস্য (এমসিএ) নির্বাচিত হন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পরে ১৯৭২ সালে দেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ২০২১ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
হাসিবুর রহমান স্বপন
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১ সেপ্টেম্বর রাতে তুরস্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক উপ-মন্ত্রী সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের এমপি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসিবুর রহমান স্বপন (৬৬)।
হাসিবুর রহমান স্বপন আশির দশকে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন সিরাজগঞ্জ-৭ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। পরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঐকমত্যের সরকারে যোগ দিয়ে শিল্প উপ-মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। সে সময় বিএনপি তাকে বহিষ্কার করলে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সিরাজগঞ্জ-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ম ম আমজাদ হোসেন মিলন
শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৮ এপ্রিল এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক সংসদ সদস্য ও তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন (৭৬)।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন মিলন ছাত্রাবস্থা থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমৃত্যু তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বেসরকারি সাব সেক্টর কমান্ড ‘পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের’ সহকারী সর্বাধিনায়ক হিসেবে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন।
যুদ্ধ পরবর্তীকালে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়ন পরিষদের দুইবার চেয়ারম্যান, তাড়াশ উপজেলা পরিষদের দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়াও তাড়াশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একাধিকবার কমান্ডের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আমজাদ হোসেন মিলন বিভিন্ন সময়ে তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে উপ-নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ, তাড়াশ ও সলঙ্গা) আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য সদস্য নির্বাচিত হন।
আব্দুল মজিদ মণ্ডল
২১ জানুয়ারি রাতে ঢাকার নিজ বাসভবনে মারা যান সাবেক সংসদ সদস্য ও মণ্ডল গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি আব্দুল মজিদ মণ্ডল (৭২)। আব্দুল মজিদ মণ্ডল দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের রোগে ভুগছিলেন। তিনি কৃত্রিম অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে ছিলেন।
শিল্প প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মণ্ডল সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০১৩ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অসুস্থ থাকায় তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিজে অংশ নিতে না পারায় তার ছেলে আব্দুল মমিন মণ্ডল সেখান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
ইউসুফ জি খান
১০ জুন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ এ কে এম ইউসুফ জি খান (৭০)। ইউসুফ জি খান আজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ডা. আব্দুল হাই সরকার
নির্বাচিত হওয়ার মাত্র ১২ দিন পর ৭ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. আবদুল হাই সরকার (৮৩)।
প্রবীণ রাজনৈতিক ডা. আবদুল হাই সরকার সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের দুই বারের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও এনায়েতপুর থানা কেমিস্ট্রি অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২২
আরএ