ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন 

বগুড়া-১ আসনে আলোচনায় আছেন যারা

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:১৯, জুলাই ৭, ২০২৫
বগুড়া-১ আসনে আলোচনায় আছেন যারা বাঁ থেকে কাজী রফিকুল ইসলাম, একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির, অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, ডাঃ শাহ মো. শাজাহান আলী, মহিদুল ইসলাম রিপন, শাহাজাদী আলম লিপি, মোশারফ হোসেন চৌধুরী ও তৌহিদুল ইসলাম টিপু

বগুড়া: বগুড়া বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এ জেলার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা নিয়ে বগুড়া-১ নির্বাচনী আসন।

এর মধ্যে এ আসনে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

নির্বাচনী এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় নবীনদের সংখ্যা বেশি। সেই সঙ্গে নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় ইসলামি জলসা, ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হারানো ঘাঁটি পুনরুদ্ধারে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নিজ জেলা বগুড়ায় আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিএনপি।  

অন্যদিকে বসে নেই নির্বাচনী জোটে এক সময়ের শরিক দল জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির দুর্গে ভাগ বসাতে মরিয়া তারা। এরই মধ্যে সংসদীয় সাত আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত।  

নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের তৎপরতা ও সরব উপস্থিতি চোখে পড়লেও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি।

বগুড়া-১ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় ভোটারদের মুখে মুখে যাদের নিয়ে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও দৈনিক সাতমাথা পত্রিকার সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, বগুড়া জেলা ড্যাবের সাবেক সভাপতি প্রফেসর ডা. শাহ মো.শাজাহান আলী, মনি পঞ্চায়েত কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম রিপন, কর্নেল জগলুল আহসান, জিয়া শিশু-কিশোর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন চৌধুরী, বগুড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সহিদ উন নবী সালাম, সারিয়াকান্দি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান হিরু মণ্ডল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম টিটু, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শাহাজাদী আলম লিপি ও ইয়াছিন রহমতুল্লা ইন্তাজ।

জানা গেছে, বগুড়া-১ আসনে অন্তর্ভুক্ত সোনাতলা উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬১ হাজার ১৬১ জন। অন্যদিকে সারিয়াকান্দি উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ২ লাখ।

গত ১৩ জুন লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ বৈঠকের পর আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনা মাথায় রেখে বগুড়া-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নড়েচড়ে বসেছেন। প্রতিনিয়ত গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, সভা সমাবেশ করছেন তারা। তারা দোয়া চাওয়ার পাশাপাশি ভোটও চাচ্ছেন, এমনকি দান অনুদান দিচ্ছেন। হাট-বাজার, রেল স্টেশন, চায়ের দোকানগুলোতে এখন মানুষ নির্বাচনী আড্ডায় মেতে উঠেছেন।

কাজী রফিকুল ইসলাম ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা) আসন থেকে বিএনপির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।  

তিনি বলেন, তিনি মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। দল মনোনয়ন দিলে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় রয়েছেন। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে এবং নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবেন।

বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে আছেন গত উপ-নির্বাচনের প্রার্থী একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির। তিনি বলেন, ছাত্রদল থেকে রাজনীতি শুরু করে ৪৪ বছর সুখে-দুঃখে বিএনপির সঙ্গে আছি। দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে কাজ করছি। ভোটারদের কাছে ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি। দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী ও আমৃত্যু সোনাতলা-সারিয়াকান্দিবাসীর খাদেম হিসেবে কাজ করব।

জামায়াতের একমাত্র প্রার্থী জেলা শাখার সাবেক আমির অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন দলের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর প্রচারণা শুরু করেছেন।  

তিনি বলেন, সুযোগ পেলে যমুনা ও বাঙালি নদীর ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেব। চর সংরক্ষণ করে শিল্প কারখানা স্থাপন করে বেকার সমস্যা দূর করব। কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও বিপণনে ব্যবস্থা নেব।

বগুড়া জেলা ড্যাবের সাবেক সভাপতি প্রফেসর ডা. শাহ মো. শাজাহান আলী বলেন, সোনাতলা-সারিয়াকান্দীবাসীর মৌলিক চাহিদা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করব। পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করব।

মহিদুল ইসলাম রিপন বলেন, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলার চরাঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র ও নৌ বন্দর স্থাপন করে বেকারত্ব দূর করব।

গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন মেধা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহজাদী আলম লিপি। তিনি নৌকার প্রার্থী সাহাদারা মান্নানের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। আগামী নির্বাচনে লিপি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান।  

তিনি বলেন, নদীভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেব। বেকার সমস্যা দূর করতে শিল্প কলকারখানা স্থাপন করব।

জিয়া শিশু-কিশোর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন চৌধুরী বলেন, তরুণ ভোটারদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাব।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম টিটু বলেন, সোনাতলা-সারিয়াকান্দিবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারব। ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত সমাজ উপহার দেব। এলাকায় শিল্প কারখানা স্থাপন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানান, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ এ এলাকার নদী ভাঙনরোধসহ অন্যান্য উন্নয়নে কাজ করেনি, শুধু নিজেদের উন্নয়ন করেছে তারা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুযোগ দিলে এবং বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে তারা বগুড়াকে এগিয়ে নেবেন। যমুনা ও বাঙালি নদীর ভাঙনকবলিত সারিয়াকান্দি-সোনাতলা উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে কাজ করবেন তারা।

নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, ১৯৭৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশে ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বগুড়া-১ আসনের সংসদ-সদস্যের মৃত্যুর কারণে এখানে একবার উপ-নির্বাচন হয়। সব মিলিয়ে ১৩ বার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছয়বার, বিএনপি পাঁচবার এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুইবার নির্বাচিত হন।

তবে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের অনুরোধ উপেক্ষা করে ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজলকে সারিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করেন। এনিয়ে দলে কিছুটা অসন্তোষ ছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সাবেক সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বাদে বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র থেকে অনেকে প্রার্থী হবেন। তবে স্থানীয়রা মনে করছেন, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর মধ্যে।

কেইউএ/এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।