ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১০ জুলাই ২০২৫, ১৪ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

‘মানব পাচার প্রতিরোধে সামাজিক নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলতে হবে’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:২৪, জুলাই ৯, ২০২৫
‘মানব পাচার প্রতিরোধে সামাজিক নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলতে হবে’ মানব পাচার প্রতিরোধে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণে অতিথিদের সাথে অংশ গ্রহণকারীরা

যশোর: ‘মানব পাচার, অনিরাপদ অভিবাসন এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে হলে সরকারের একার ওপর তাকিয়ে থাকলে হবে না। সচেতনতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সামাজিক নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলতে হবে।

 

এই কাজে অগ্রসৈনিক হিসেবে যুবারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। বিশেষ করে নারী ও শিশুদেরকে সচেতন করতে নারীরাই পালন করতে পারেন অগ্রণী ভূমিকা’।  

যশোরের সীমান্তবর্তী বেনাপোলে মানব পাচার বিরোধী সামাজিক আন্দোলনের যোদ্ধা হিসেবে বিভিন্ন ইউনিয়নের ‘কাউন্টার ট্রাফিকিং উইমেন ফোরাম (সিটিডাব্লিউএফ)’ সদস্যদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা এসব কথা বলেন।

মানবাধিকার সংস্থা রাইটস যশোর এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। সংস্থাটি যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানব পাচার, উদ্ধার, প্রত্যাবসন ও পুনর্বাসনে দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে।

সংস্থা পরিচালিত বেনাপোলের হাফওয়ে হোমে ৭ ও ৮ জুলাই দুইদিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণটি অনুষ্ঠিত হয়। এটি আয়োজন করা হয় জার্মানভিত্তিক সংস্থা বোনো (BONO) ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা চান্স সুইজ (chance swiss) এর সহযোগিতায় পরিচালিত এমপাওয়ারিং উইমেন অ্যান্ড কমব্যাটিং হিউম্যান ট্রাফিকিং ইন সাউথইস্ট রিজিওন ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায়।

প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, যশোরের শার্শা উপজেলার একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত। আগে এসব সীমান্তের অবৈধ পথ দিয়ে ভালো চাকরি বা উন্নত জীবনের প্রত্যাশা দেখিয়ে প্রচুর নারী ও শিশুকে ভারতে পাচার করা হতো। পরবর্তীতে ভিসা-পাসপোর্ট করে পাচারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

অংশ গ্রহণকারীরা বলেন, বর্তমানে লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রাষ্ট্র, ইটালি এবং অন্যান্য উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে শার্শার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে পাচার করা হচ্ছে। অসংখ্য পরিবার রয়েছে যাদের স্বজন দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে যেয়ে আর ফিরে আসেনি। তাদের কোনো খোঁজও পাওয়া যায়নি।  

যারা সরকারি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এবং যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে বিদেশে গেছেন তাদের অধিকাংশের জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা।

এর পাশাপাশি বাল্যবিবাহ এই জনপদে একটা সামাজিক ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন বিদ্যালয়গুলোতে খোঁজ নিলে জানা যাবে অষ্টম শ্রেণির পর থেকেই অসংখ্য ছাত্রীর শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটেছে। এরা সবাই বাল্যবিবাহের শিকার।

এর ওপর ভিত্তি করে অতিথিরা বলেন, সরকার এসব নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। কিন্তু, সরকারের একার পক্ষে পাচার, অনিরাপদ অভিবাসন ও বাল্যবিবাহের মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। যা সিটিডাব্লিউএফ সদস্যরা শুরু করেছেন। তবে, সচেতনতা সৃষ্টি করতে হলে প্রথমে নিজেকে তথ্যসমৃদ্ধ হতে হবে, দক্ষ হতে হবে। প্রশিক্ষণই সেই দক্ষতা বৃদ্ধি করবে বলে অতিথিরা আশা প্রকাশ করেন।

প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শওকত মেহেদী সেতু, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম, বেনাপোল ইমিগ্রেশনের সেকেন্ড অফিসার জাকির হোসেন, পোর্ট থানার এসআই সুজন শেখ, বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক নাজমুল হাসান, ডিহি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু এবং বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যাস সাকির উদ্দিন।

প্রশিক্ষণটি পরিচালনা করেন রাইটস যশোরের ডেপুটি ডাইরেক্টর এসএম আজহারুল ইসলাম, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সরোয়ার হোসেন এবং রাইটস যশোরের তথ্যানুসন্ধান কর্মকর্তা তৌফিকুজ্জামান।

এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।