রাঙামাটি: পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রাচীন ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো জুম চাষ। আধুনিক সময়ে তারা নানা পেশায় যুক্ত হলেও এখনো জুম ফসল তাদের আস্থার প্রতীক।
জুম ফসলের সমারোহে পাহাড় যেন সাজে নতুন রূপে। একদিকে পাকা সোনালি ধানের মৌ মৌ সুবাস, অন্যদিকে সাথী ফসলের রঙিন সমাহার—সব মিলিয়ে পাহাড় পায় ভিন্ন সৌন্দর্য। এই ফসল ঘিরে পাহাড়ি পরিবারগুলোর চোখে মুখে ফুটে ওঠে হাসির ঝিলিক, ঘরে ঘরে বইতে থাকে উৎসবের আমেজ।
পাহাড়ে কিছু কিছু জায়গায় পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে। গোলায় পাকা ধান তোলার জন্য জুমিয়ারা ব্যস্ত সময় পার করছে। আর যাদের ধান এখনো পাকেনি তারাও ধান গোলায় তোলার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় জুমের ভালো ফলন হয়েছে।
জুমিয়ারা ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পাহাড় পরিছন্ন করে জুম ফসল চাষের উপযোগী করে তোলে। এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে গর্ত করে ধান, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তুলা, তিল, শিম, আদা, ভুট্টাসহ নানা ফসল রোপণ করে।
রোপনের তিনমাস পর তথা ভাদ্র মাস হতে এসব ফসল ঘরে তোলার ধুম শুরু হয়। অগ্রহায়ন মাস পর্যন্ত এসব ফসল পর্যায়ক্রমে ঘরে তোলে জুমিয়ারা।
জেলা সদরের কাপ্তাই-রাঙামাটি বিকল্প সড়কের মগবান ইউনিয়নের মোরঘোনা এলাকার বাসিন্দা জুম চাষি বিপুল চাকমা বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় থাকায় ভালো ফলনের আশা করছি।
তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উন্নত জাতের ধান, ফসলের বীজ যদি পাওয়া যেতো তাহলে ফলন আরও দুই-তিন গুণ বাড়তো।
বড়গাঙ এলাকার জুম চাষি মঙ্গল চাকমা বলেন, গত বছর জুমে ২০ কেজি ধান রোপণ করে ৪-৫ বস্তা ধান পেয়েছিলাম। এ বছর উৎপাদন বাড়তে পারে। গত বছরের তুলনায় এবারে জুমে ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান এ জুমিয়া।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, এ মৌসুমে রাঙামাটিতে জুম ধানের আবাদ হয়েছে সাত হাজার ৬৪৮ হেক্টর জমিতে। পাঁচ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমি থেকে ফসল কাটা হয়েছে। অর্থাৎ ৭০ শতাংশ ফসল কাটা হয়ে গেছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ মানুষ জুম নির্ভর। জুমের ফলন ভালো হলে পাহাড়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা যায় না। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যদি জুম চাষ করা যায় তাহলে অধিক ফলন উৎপাদানের ফলে জুমিয়ারা যেমন লাভবান হবে ঠিক অন্যদিকে অধিক ফলন উৎপাদানের ফলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এসব ফসল বিক্রি করা যাবে। এ ছাড়া একই জমিতে সারা বছর চাষাবাদ করতে পারলে জুমিয়াদের আত্মসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় জুমের ফসল ভাল হয়েছে। এ বছর ধানের পাশাপাশি অন্যান্য সাথী ফসলের উৎপাদন সন্তোষজনক বলে জানান তিনি।
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, জুমিয়াদের যদি আমরা উচ্চ ফলনশীল ধানের সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে পারি তাহলে তারা আরও ভাল ফলন ঘরে তুলতে পারবে তারা। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগ জুমিয়াদের নিয়ে কাজ করছে বলে যোগ করেন তিনি।
আরএইচ