ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

একাত্তর

বধ্যভূমির উপর দাঁড়িয়ে ইসলামী ব্যাংক!

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
 বধ্যভূমির উপর দাঁড়িয়ে ইসলামী ব্যাংক! ছবি-অনিক খান/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ নগরীর ছোট বাজার এলাকা। ওই এলাকায় থাকতেন নজর নামে এক বিহারি রাজাকার। সেখানে তার ঘরের পেছনেই ছিলো একটি গভীর কুয়া।

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ নগরীর ছোট বাজার এলাকা। ওই এলাকায় থাকতেন নজর নামে এক বিহারি রাজাকার।

সেখানে তার ঘরের পেছনেই ছিলো একটি গভীর কুয়া। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদাররা হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর, এই রাজাকারের সহায়তায় সেই কুয়ায় ফেলে রাখতো মুক্তিকামী অসংখ্য বাঙালির মরদেহ।

একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর ছোট বাজার এলাকার সেই কুয়াতে ৩শ থেকে ৪শ মানুষের কঙ্কাল দেখতে পেয়েছিলেন ময়মনসিংহের মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর লাশভর্তি সেই কুয়ার উপরই গড়ে তোলা হয় ইসলামী ব্যাংক।

এ ব্যাংকের নিচে চাপা দিয়ে মুছে ফেলা হয় দেশের জন্য আত্মত্যাগের নিদর্শন। এটা মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনার উপর রাজাকারদের আঘাত বলে অভিযোগ করেন ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার আনোয়ার হোসেন।

গত ২৯ নভেম্বর রাতে নগরীর ঈষাণ চক্রবর্তী রোডের কার্যালয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ অভিযোগ করেন।

ওই বিহারির সহায়তায় গুলি ও জবাই করে হত্যার পর ওই কুয়ার মধ্যে লাশ ফেলতো পাকিরা। ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মুক্ত দিবসে আমরা এসে দেখি, সেখানে ৩শ থেকে ৪শ মানুষের কঙ্কাল, বলছিলেন ডেপুটি কমান্ডার হারুন আল রশিদ।  

সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা তুলে ধরে বলেন, ওইদিনের আগের রাতেই ওই বিহারি নিজের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর আবার ওই বিহারি স্বশরীরে ময়মনসিংহে আসেন। ইসলামী ব্যাংকের কাছে জায়গা বিক্রি করেন।
‘আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে ‘মুক্তিযোদ্ধা বধ্যভূমি’ নামে একটি সাইনবোর্ড গেড়েছিলাম। ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রাতের অন্ধকারে সেই সাইনবোর্ডটি তুলে ফেলে। ’

এ ঘটনার প্রতিবাদে ওই সময় আমরা মিছিল, সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছিলাম। কিন্তু টাকা-পয়সার জোরে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের মাথা কিনে নিয়েছিল ব্যাংক। এ কারণে তাদের মুখ বন্ধ থাকায় কোনো কাজ হয়নি, ক্ষোভ নিয়ে বলেন রণাঙ্গনের এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।

তার ভাষ্যে, মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের দাবি, লাশভর্তি সেই কুয়াতে একটি বধ্যভূমি হোক। সেখান থেকে অপসারণ করা হোক ইসলামী ব্যাংক।

হানাদার বাহিনীর বর্বরতার ইতিহাসের সাক্ষী এ কুয়া থেকে নিজ হাতে ১০টি মাথা, তিনটি নারীর লাশ উঠিয়েছিলেন বলে একবার বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সীধাম সরকার (৫৫)।

কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সৃষ্ট এ বধ্যভূমিতে ইসলামী ব্যাংক গড়ে ওঠায় ক্ষোভের অন্ত নেই তার মধ্যেও।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, গত ৩০ বছর ধরে প্যাঁচাল পাইরা আসতাছি। কোন কাম তো হইলো না। রাজনৈতিক দলের নেতারা ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা খায়। তাই অ্যাকশন হয় না।

বার বার বধ্যভূমি থেকে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ব্যাংক সরিয়ে এখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করতে বলা হয়েছে, এমনটি জানিয়ে ইউনিট কমান্ডার আনোয়ার হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসনকেও ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে।

‘প্রতি বছর ময়মনসিংহ মুক্ত মঞ্চ থেকে দাবি জানানো হলেও কেউ কর্ণপাত করেনি। বিজয়ের মাসেই এ বধ্যভূমিটি চিহ্নিত করে সংরক্ষণের জোর দাবি জানাচ্ছি। ’

জানতে চাইলে ময়মনসিংহ'র নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়টি সম্পর্কে আমাকে কেউ জানায়নি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
এমএএএম/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।