ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

হঠাৎ চাঙা পুঁজিবাজার: নেপথ্যে ৫ কারণ

শেখ নাসির হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৪
হঠাৎ চাঙা পুঁজিবাজার: নেপথ্যে ৫ কারণ

ঢাকা: দীর্ঘ পতনের পর হঠাৎ চাঙা হয়ে উঠেছে দেশের প্রধান দুই শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। হঠাৎ সূচক বাড়ার পাশাপাশি দৈনিক লেনদেনও বাড়ছে দ্রুত।


 
তবে পুঁজিবাজারের হঠাৎ এ উত্থানকে সরলভাবে নিতে পারছেন না দক্ষ বিনিয়োগকারীরা। তাদের দাবি, পুঁজিবাজারের এ উত্থানের পেছনে আবারও কোনো কারসাজি চক্র সক্রিয়, না কি দীর্ঘদিন পর এটা বাজারের স্বাভাবিক আচরণ তা দুই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে পরিষ্কার করতে হবে। তা না হলে বিনিয়োগকারীরা আবারও বড় লোকসানের মুখে পড়বেন।
 
পুঁজিবাজার হঠাৎ চাঙা হওয়ার পেছনে প্রধানত পাঁচ কারণ বিদ্যমান বলে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ, দুই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ এবং বড় ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কথায় এ পাঁচটি কারণ উঠে এসেছে।
 
কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুম, সরকারের ইতিবাচক মনোভাব, ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বড় বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা।
 
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
মূলত দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করায় বাজারে সূচক ও লেনদেন বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, এ মুহূর্তে দেশে কোনো হরতাল বা অবরোধ না থাকায় বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ায় বাজারে নতুন নতুন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করছে। ফলে বাজারে চাঙাভাব লক্ষ্য করা গেছে।
 
লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুম
জানুয়ারি থেকে জুন মাস লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুম হিসেবে পরিচিত। গত ডিসেম্বর মাসে যেসব কোম্পানির অর্থবছর সমাপ্ত হয়েছে তার কয়েকটি ভালো লভ্যাংশ দিবে এমন গুজবকে কাজে লাগাতে চান একশ্রেণীর বিনিয়োগকারী। তারা এসব কোম্পানির শেয়ার কম দামে ক্রয় করে রেখেছেন। এখন অধিকাংশ দিন এসব কোম্পানির শেয়ারে সেল অর্ডার কম থাকে বা থাকেই না। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ায় বাজার চাঙা হয়ে উঠেছে।
 
সরকারের ইতিবাচক মনোভাব
‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে শেয়ারবাজারে ধস নামে, লুটপাট হয়’ বিনিয়োগকারীদের এমন ধারণা বদলাতেই টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে মনোযোগী সরকার। বিনিয়োগকারীদের সমর্থন আদায়ের জন্য ইতোমধ্যে বাজার স্থিতিশীল করতে সংশ্লিষ্টদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এমন গুজবও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আছে। ফলে গত কয়েক সপ্তাহে হঠাৎ চাঙা হয়ে উঠেছে শেয়ারবাজার।
 
ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বৃদ্ধি
মুদ্রানীতিতে ব্যাংকের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর ফলে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বাড়াতে পারবে। ফলে ব্যাংকগুলো অলস টাকার একটি অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে চায়। কারণ, বিনিয়োগ করতে না পারলেও ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের নিয়মিত সুদ দিচ্ছে। ফলে তাদের আয়ের চেয়ে চূড়ান্ত ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই মুনাফার আশায় অলস টাকার একটি অংশ বিনিয়োগ সম্ভাবনা বাড়ায় বাজার হঠাৎ চাঙা হয়ে উঠেছে।
 
বড় বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা
দীর্ঘদিন পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল থাকায় বাজারে নিষ্ক্রিয় ছিলেন ব্যক্তি শ্রেণির বড় বিনিয়োগকারী বা গেমলাররা। লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুম, বাজার স্থিতিশীল করতে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব এবং বাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়ায় আবারও সক্রিয় হয়েছেন তারা। তাদের সক্রিয়তায় আবারও চাঙা হয়ে উঠেছে পুঁজিবাজার।    
 
ডিএসই’র প্রেসিডেন্ট আহসানুল ইসলাম টিটু বাংলানিউজকে বলেন, মূলত স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারদের আস্থা ফিরেছে। এছাড়া লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুম হওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বেড়েছে ব্যাংকের বিনিয়োগও। যার ইতিবাচক প্রভাবে বাজার ঊর্ধ্বমুখী।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে বিনিয়োগকারীদের এক্সপেক্টটেশন বেড়েছে। ফলে তারা বাজারে লেনদেন করায় বাজার ইতিবাচক।
 
তবে বাজারে বড় বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা ও ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়ায় বাজার চাঙা হচ্ছে। যদি রাজনীতি আবার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে, তবে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসযোগ্যতায় আবারও ঘাটতি দেখা দেবে এবং বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে জানান এ অর্থনীতিবিদ।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৩১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।