ঢাকা: শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের কোম্পানির শেয়ারের বেহাল দশা কাটছে না। এক সময় মোট লেনদেনের ৩৫ শতাংশের উপরে অবদান থাকা এই খাতটির বর্তমান অবস্থান মাত্র ৫শতাংশ।
অথচ এক সময় শেয়ারবাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করা হতো ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারের দাম। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট লেনদেনে ২০১১ সালের আগ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের উপরে ছিলো এ খাতের দখলে। ২০১২ সালে ফেব্রুয়ারিতেও ব্যাংকের অবদান ২৮ শতাংশের উপরে ছিলো।
তবে এরপর থেকেই কমতে থাকে ব্যাংকের অবদান। ২০১২ সাল শেষে ব্যাংক লেনদেনের শীর্ষে থাকলেও মোট লেনদেনে অবদান অর্ধেকে নেমে ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশে দাঁড়ায়। ধারাবাহিকভাবে কমার কারণে ২০১৪ সালে শেষে তা দাঁড়ায় মাত্র ৯ শতাংশে। আর চলতি বছরের এপ্রিল মাস শেষে ব্যাংকের অবদান দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। যা এক মাস আগেও ছিলো ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
এদিকে ব্যাংক খাতের দুরবস্থায় ২০১৩ সালের শুরু থেকেই লেনদেনে প্রাধান্য বিস্তার করতে শুরু করে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। চলতি বছরেও জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের এ আধিপত্য অব্যাহত রয়েছে। এপ্রিল শেষে মোট লেনদেনের ২৬ দশমিক ৪৮ শতাংশই রয়েছে এ খাতের দখলে। যা মার্চ শেষে ছিলো ১৫ দশমিক ৫১ শতাংশ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের(সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংক কোম্পানিগুলোর হাতে যে শেয়ার আছে তা ওই ধরনের রিটার্ন দিতে পারছে না। তাছাড়া সুদের হার কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংকের মুনাফাও কমেছে। যে কারণে হয়তো শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের শেয়ারের প্রতি মানুষের এক ধরনের আগ্রহ রয়েছে। চাহিদা বাড়ার কারণে লেনদেন ক্ষেত্রেও খাতটির আধিপত্য রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমায় এর একটা ইতিবাচক প্রভাব আছে। সরকার এ খাত থেকে ভর্তুকি উঠিয়ে নিলেও দীর্ঘ মেয়াদে জ্বালানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত বাদ দিয়ে এপ্রিল শেষে মোট লেনদেনে ১০ শতাংশের উপরে অবদান আছে মাত্র ৩টি খাতের। এরমধ্যে ওষুধ খাতের ১৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, প্রকৌশল খাতের ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং টেক্সটাইল খাতের অবদান ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ।
আর ৩ শতাংশের উপরে অবদান আছে মাত্র ৩টি খাতের। এরমধ্যে সেবা খাতের অবদান ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ, টেলিযোগাযোগ খাতের ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং খাদ্য খাতের ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ।
অন্য খাতগুলোর মধ্যে এপ্রিল শেষে সিমেন্ট খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর্থিক খাতের অবদান ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ, আইটির ২দশমিক ২৮ শতাংশ, ভ্রমণ ২ দশমিক ৩০ শতাংশ ও বিবিধ খাতের অবদান ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
বাকি খাতগুলোর অবদান এক শতাংশ বা তার নিচে। এরমধ্যে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দশমিক ৫৩ শতাংশ, পাটের দশমিক ২৩ শতাংশ, কাগজ ও মুদ্রণ দশমিক ২৭ শতাংশ, চামড়া ৫৯ শতাংশ, সিরামিক দশমিক ৭০ শতাংশ, বিমা ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও বন্ড দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের(বিএসইসি)সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংক ঋণের চাহিদা কমেছে। তাছাড়া গত কয়েক মাস ব্যাংক ভালো কোম্পানি যাচাই করে ঋণ দিতে না পারায় ঋণ আদায়ে সমস্যায় পড়েছে। ফলে ব্যাংকের মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বিএসইস’র সাবেক এই চেয়ারম্যান আরও বলেন, মুনাফা, লভ্যাংশ, শেয়ার প্রতি আয়(ইপিএস) কমলেও বর্তমানে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের শেয়ারের যে দাম দাঁড়িয়েছে তা বিস্ময়কর। ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারের দাম এতো কমার কোনো যৌক্তিক কারণ দেখছি না।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৬ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৫
এএসএস/এনএস