ঢাকা: দুই শতাংশের কম শেয়ার নিয়ে বিমা কোম্পানির পরিচালক হওয়া যাবে না। যারা দুই শতাংশের কম শেয়ার ধারণ করে বিমা কোম্পানির পরিচালক রয়েছেন তাদের পদ ছেড়ে দিতে শিগগির নির্দেশনা জারি করবে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডআরএ)।
আইডআরএ সূত্রে জানা গেছে, এ নির্দেশনা জারির জন্য বিমা কোম্পানিগুলোর কাছে পরিচালকদের শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হবে। চলতি সপ্তাহেই কোম্পানিগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হতে পারে।
এরপর যেসব পরিচালকদের দুই শতাংশের কম শেয়ার রয়েছে তাদের পদ ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
সূত্রটি জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী একটি বিমা কোম্পানির পরিচালক সংখ্যা ২০ জনের বেশি হতে পারবে না। এক্ষেত্রে (পরিচালক ২০ জন হলে) উদ্যোক্তা পরিচালক থাকবে ১২ জন, জনগণের অংশের শেয়ারগ্রহীতা পরিচালক থাকবে ৬ জন এবং নিরপেক্ষ পরিচালক থাকবে ২ জন।
পরিচালকদের শেয়ার ধারণের বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে, দুই শতাংশের কম শেয়ার ধারণ করলে তিনি পরিচারক হওয়ার অযোগ্য হবেন। অর্থাৎ এককভাবে পরিচালক হতে কমপক্ষে দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে।
একদিকে একই পরিবারের শেয়ার ধারণের বিষয়ে বলা হয়েছে, বিমা কোম্পানিতে একটি পরিবার থেকে দুই জনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবে না। আর একটি পরিবার থেকে দুই জন পরিচালক থাকলে তাদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি হতে হবে। তাবে ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।
আইনে এমন বাধ্যবাধকতা থাকলেও কয়েকটি বিমা কোম্পানিতে একই পরিবার থেকে দুই জনের বেশি পরিচালক আছেন এবং তাদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ ১০ শতাংশের বেশি। আবার এমন বেশকিছু পরিচালক আছেন যারা এককভাবে দুই শতাংশের কম শেয়ার ধারণ করছেন।
আইডআরএ সূত্রটি জানিয়েছে, ২০১২ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিমা কোম্পানিতে দুই শতাংশের কম শেয়ার ধারণ করে ১৫০ জনের ওপরে পরিচালক পদে আছেন।
জানতে চাইলে আইডআরএ’র সদস্য মো. কুদ্দুস খান বাংলানউজকে বলেন, আইনেই আছে দুই শতাংশের কম শেয়ার ধারণ করে পরিচালক থাকা যাবে না। তবে বিমা কোম্পানিতে দুই শতাংশের কম শেয়ার ধারণ করে কতজন পরিচালক আছেন তা বলা যাবে না। এ বিষয়ে তথ্য পেলেই বিষয়টি জানা যাবে।
এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বিষয়ে ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর ২সিসি ক্ষমতা বলে একটি আদেশ জারি করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
ওই আদেশে বলা হয়, পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ এবং প্রত্যেক পরিচালকের ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে।
আদেশ জারির ছয় মাসের মধ্যে এ শর্ত পূরণ করতে বলা হয়, যা শেষ হয় ২০১২ সালের ২১ মে। বিএসইসির জারি করা ওই নির্দেশনার ফলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রায় ৩৫৬ জন পরিচালকের পদ হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়।
এ পরিস্থিতিতে বিএসইসির নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল এনসিসি ব্যাংকের পরিচালক হতে ইচ্ছুক শেখ আবদুল মোমিন রিট করলে বিএসইসির প্রজ্ঞাপনটি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট চার সপ্তাহের রুল জারি করেন।
পরে ৭ মে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক আবুল বাশার এবং ৮ মে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১১ জন ও ফিনিক্স ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের দু’জন পরিচালক আরও তিনটি রিট করেন।
সব রিটে আদালত একই রুল জারি করেন এবং একসঙ্গে শুনানির দিন ধার্য করেন। অবশ্য পরবর্তীতে ফিনিক্স ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের পরিচালকরা তাদের আবেদন প্রত্যাহার করে নেন।
এসব রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ২১মে হাইকোর্টের বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদ ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের সমন্বয়ে গঠিত নিয়মিত বেঞ্চ তিনটি রিট শুনানি শেষে খারিজ করে দেন। পাশাপাশি তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত বিএসইসির জারি করা প্রজ্ঞাপন বৈধ বলে রায় দেন।
এরপর একই বছরের ২২মে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ২সিসি ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে এনসিসি, মার্কেন্টাইল, সাউথইস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও প্রাইম ফিন্যান্সের ২৪ জন পরিচালক পৃথক পাঁচটি রিট করেন।
এরই প্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ৪ জুন ২সিসি ধারাকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। আর ২১ জুন শুনানি শেষে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চ রুল খারিজের পাশাপাশি এসব রিট মামলা খারিজের আদেশ দেন।
পরবর্তীতে দুই শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এরপর ২০১৪ সালের ২৪ মে চূড়ান্ত শুনানি শেষে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের জন্য ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে বিএসইসির জারি করা নির্দেশনা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টে। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও এবিএম আলতাফ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৫
বিএস